ঢাকা, শুক্রবার, ১২ পৌষ ১৪৩১, ২৭ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৪ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

আন্তর্জাতিক

গাজায় যুদ্ধবিরতির দাবিতে দেশে দেশে বিক্ষোভ

আন্তর্জাতিক ডেস্ক | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৮৫১ ঘণ্টা, নভেম্বর ৫, ২০২৩
গাজায় যুদ্ধবিরতির দাবিতে দেশে দেশে বিক্ষোভ ওয়াশিংটন ডিসিতে শনিবার বিক্ষোভ

গাজায় যুদ্ধবিরতির দাবিতে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে লাখো মানুষ সড়কে নেমে বিক্ষোভ প্রদর্শন করেছেন। ফিলিস্তিনের পক্ষে শনিবার ও রোববার তারা বিক্ষোভ করেন।

আল জাজিরা এই খবর জানিয়েছে।  

ওয়াশিংটন ডিসি, লন্ডন, প্যারিস, বার্লিন, মিলান ও ঢাকাসহ বিভিন্ন শহরে ফিলিস্তিনিদের সমর্থনে শনিবার বিক্ষোভ হয়েছে।

তুরস্কে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেনের আসার খবরে দেশটির দক্ষিণে ফিলিস্তিনপন্থীরা বিক্ষোভের জন্য যুক্তরাষ্ট্রের একটি সামরিক ঘাঁটি অভিমুখে যাত্রা শুরু করেন।  

শনিবার গাজার জাবালিয়া শরণার্থী শিবিরের আল-ফাখোরা স্কুলে ইসরায়েলি হামলায় অন্তত ১৫ জনের প্রাণ যায়। অবরুদ্ধ উপত্যকাটিতে ইসরায়েল বিমান হামলার পাশাপাশি স্থল হামলাও চালিয়ে যাচ্ছে।  

এই সংঘাত শুরুর পর থেকে এ পর্যন্ত ৯ হাজার ৪৮৮ ফিলিস্তিনি গাজায় নিহত হয়েছেন। বহু শিশুর প্রাণ গেছে। আর ইসরায়েলে গেল ৭ অক্টোবর হামাসের হামলায় এক হাজার চারশরও বেশি লোকের প্রাণ গেছে।   
 
যুক্তরাজ্য
ট্রাফালগার স্কয়ারে মিছিল করার আগে এবং জড়ো হওয়ার আগে অক্সফোর্ড সার্কাস এবং পিকাডিলি সার্কাস অবরুদ্ধ করে লন্ডনে বিশাল জনতা বিক্ষোভ করেছে।

বিক্ষোভকারীরা ফ্রিডম ফর প্যালেস্টাইন প্ল্যাকার্ড নিয়ে এবং এখনই যুদ্ধবিরতি, লাখে লাখে, হাজারে হাজারে আমরা সবাই ফিলিস্তিনি- স্লোগান দিচ্ছিলেন।

লন্ডন মেট্রো পুলিশের অনুমান, প্রায় ৩০ হাজার লোক র‍্যালিতে অংশ নেন। পুলিশ বলছে, ঘৃণা ছড়াতে পারে এমন একটি প্ল্যাকার্ড প্রদর্শনের জন্য একজনসহ মোট ১১ জনকে গ্রেপ্তার করেছে তারা।

ওয়াশিংটনের অবস্থানের সঙ্গে গলা মিলিয়ে ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী ঋষি সুনাকের সরকার যুদ্ধবিরতির আহ্বান জানানো থেকে বিরত রয়েছে এবং পরিবর্তে গাজায় সাহায্যের অনুমতি দেওয়ার ক্ষেত্রে মানবিক বিরতির পক্ষে কথা বলেছে।

ফ্রান্স
সহিংসতার চক্র বন্ধ কর- লেখা প্ল্যাকার্ড নিয়ে যুদ্ধবিরতির আহ্বান জানাতে মধ্য প্যারিসেও হাজার হাজার লোক মিছিল করেছেন। যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর প্যারিসে ফিলিস্তিনিদের সমর্থনে এটি প্রথম এবং বড় সমাবেশগুলোর মধ্যে একটি, যাতে ফ্রান্স সরকারের অনুমতি রয়েছে।  

বিক্ষোভে অংশ নেওয়া ৩০ বছর বয়সী বেসামরিক চাকরিজীবী অ্যান্তোইনে গুয়েরেইরো বলেন, আমরা আজ এখানে এসেছি ফিলিস্তিনি জনগণের সঙ্গে ফ্রান্সের সংহতি প্রকাশ করতে এবং শান্তির প্রতি আমাদের সমর্থন দেখাতে। আমরা এসেছি দুই রাষ্ট্র সমাধানের জন্য।  

ওয়াহিদ বারিক নামে ৬৬ বছর বয়সী এক অবসরপ্রাপ্ত চাকরিজীবী ইসরায়েলি ও ফিলিস্তিনি নাগরিকদের নিহত হওয়ার ঘটনায় শোক প্রকাশ করেন। তিনি বলেন, আমি উভয় পক্ষের বেসামরিকদের মৃত্যুর নিন্দা জানাই। এসব কর্মকাণ্ডের সঙ্গে বেসামরিকদের কোনো সম্পর্ক নেই। এটা সত্যিই লজ্জাজনক।

জার্মানি
বার্লিনে দুপুরের দিকে সাড়ে ৬ হাজার লোক বিক্ষোভের জন্য জড়ো হয়েছিল। পুলিশ বলছে, কড়া শর্তে এ বিক্ষোভ অনুষ্ঠিত হয়েছে। জার্মানি এর আগে ফিলিস্তিনি সংহতি র‍্যালি নিষিদ্ধ করেছিল।  

শহরের গুরুত্বপূর্ণ আলেকজান্দারপ্লাতজে লোকজন ফিলিস্তিনি পতাকা ও প্ল্যাকার্ড নিয়ে বিক্ষোভে অংশ নেন। প্ল্যাকার্ডে লেখা ছিল, গাজায় গণহত্যা বন্ধ কর, সাগর থেকে নদী সব স্থানে আমরা সাম্য চাই।  

এর মধ্যে এক বক্তা গাজায় বোমাবর্ষণ বন্ধের আহ্বান জানান।  

ইতালি
ইতালির মিলান শহরের সড়কে চার হাজার বিক্ষোভকারী যুদ্ধবিরতির সমর্থনে পদযাত্রা করেন বলে স্থানীয় গণমাধ্যম সূত্রে জানা গেছে। যুদ্ধ বন্ধ কর, কোনো বর্ণবাদ নয়- স্লোগানের ভিত্তিতেই বিক্ষোভটি ডাকা হয়েছিল।  

সেনেগাল
সেনেগালের রাজধানী ডাকারে লোকজন কেন্দ্রীয় মসজিদের সামনে প্ল্যাকার্ড ও ফিলিস্তিনি পতাকা হাতে জড়ো হন। ডাকার থেকে আল জাজিরার সংবাদদাতা জানান, গত সপ্তাহে এই বিক্ষোভ হওয়ার কথা ছিল, কিন্তু তা নিষিদ্ধ করা হয়।  

তিনি বলেন, সেনেগালের অনেক লোকজন বিক্ষোভে অংশ নেন। এ ছাড়া লেবানিজ সেনেগালিজ কমিউনিটির লোকেরাও ফিলিস্তিনিদের সমর্থনে সড়কে নেমে আসেন।  

তুরস্ক
গাজা ইস্যুতে আলোচনার জন্য মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেন তুরস্ক সফরের একদিন আগে ইস্তাম্বুল ও আঙ্কারায় শত শত বিক্ষোভকারী জড়ো হন।

ইস্তানবুলের সারাচানে পার্কে বিক্ষোভকারীরা ব্যানার নিয়ে উপস্থিত হন, যাতে লেখা- গণহত্যার সহযোগী ব্লিঙ্কেন তুরস্ক থেকে চলে যাও। এতে ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু ও অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেনের ছবিতে কাটা চিহ্নও এঁকে দেওয়া হয়।  

তুরস্কের রাজধানী আঙ্কারায় বিক্ষোভকারীরা মার্কিন দূতাবাসের কাছে বিক্ষোভ প্রদর্শন করেন এবং স্লোগান দেন। তাদের হাতে পোস্টারও ছিল, যাতে লেখা- ইসরায়েল হাসপাতালে বোমা মারে, বাইডেন এর জন্য অর্থ দেন।  

যুক্তরাষ্ট্র
৭ অক্টোবর ইসরায়েল-গাজা সংঘাত শুরু হওয়ার পর ওয়াশিংটন ডিসিতে সবচেয়ে বড় বিক্ষোভে হাজার হাজার লোক সড়কে নেমে বিক্ষোভ করেন।  

আল জাজিরার সংবাদদাতা হেইদি ঝু-ক্যাস্ত্রো বলেন, আমার চার পাশে সমুদ্রসম বিক্ষোভকারী। গাজা যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর থেকে যেসব বিক্ষোভ দেখেছি, সেগুলোর চেয়ে এটি বড়।  

তিনি বলেন, আয়োজকরা এটিকে অন্যতম বড় বিক্ষোভ হিসেবে আখ্যা দেন। এতে তারা ২০ হাজার থেকে এক লাখ লোকের উপস্থিতি আশা করছেন।  

গাজার জন্য মিছিলে যোগ দেওয়া এক ইহুদি আমেরিকান বিক্ষোভকারী বলেন, ইসরায়েলের সেনাবাহিনীকে প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের অর্থায়ন বন্ধ করতে হবে।  

বাংলাদেশ সময়: ১৮৪৮ ঘণ্টা, নভেম্বর ৫, ২০২৩
আরএইচ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।