ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ৮ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২, ২২ মে ২০২৫, ২৪ জিলকদ ১৪৪৬

আন্তর্জাতিক

হোয়াইট হাউসে ট্রাম্প-রামাফোসা বৈঠকে ‘শ্বেতাঙ্গ গণহত্যা’ ইস্যুতে উত্তেজনা

আন্তজার্তিক ডেস্ক | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১২:০৮, মে ২২, ২০২৫
হোয়াইট হাউসে ট্রাম্প-রামাফোসা বৈঠকে ‘শ্বেতাঙ্গ গণহত্যা’ ইস্যুতে উত্তেজনা ছবি সংগৃহীত

প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকেই যুক্তরাষ্ট্র ও আফ্রিকার গুরুত্বপূর্ণ বাণিজ্যিক মিত্র দক্ষিণ আফ্রিকার মধ্যে টানাপড়েন বাড়ছে। যুক্তরাষ্ট্র দক্ষিণ আফ্রিকায় উন্নয়ন সহায়তা বন্ধ করেছে।

এই উত্তপ্ত পরিস্থিতির মধ্যেই বুধবার হোয়াইট হাউসে ট্রাম্পের সঙ্গে বৈঠকে বসেন দক্ষিণ আফ্রিকার প্রেসিডেন্ট সিরিল রামাফোসা।  

বৈঠকের শুরুতে রামাফোসা যুক্তরাষ্ট্র-দক্ষিণ আফ্রিকার মধ্যে দীর্ঘদিনের বাণিজ্যিক সম্পর্ক ও বিনিয়োগের প্রসঙ্গ তুলে ধরেন। তিনি এ সময় একটি নতুন বাণিজ্য চুক্তির খসড়াও উপস্থাপন করার পরিকল্পনার কথা জানান।

বৈঠকে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প দক্ষিণ আফ্রিকায় শ্বেতাঙ্গ কৃষকদের ‘গণহত্যা’ হচ্ছে বলে অভিযোগ তুললে; দুদেশের সম্পর্কোন্নয়নের উদ্দেশ্যে আয়োজিত এই উচ্চপর্যায়ের বৈঠক হঠাৎই উত্তেজনায় রূপ নেয়।

বুধবার হোয়াইট হাউসে অনুষ্ঠিত এই বৈঠকের কয়েকদিন আগেই যুক্তরাষ্ট্র ৫৯ জন আফ্রিকানার (দক্ষিণ আফ্রিকার শ্বেতাঙ্গ অধিবাসী) নাগরিককে রাজনৈতিক আশ্রয় দেয়, যা দক্ষিণ আফ্রিকায় ব্যাপক সমালোচনা সৃষ্টি করে।

বৈঠকে ট্রাম্প একটি বিতর্কিত ভিডিও চালান, যেখানে দাবি করা হয়—দক্ষিণ আফ্রিকায় শ্বেতাঙ্গ কৃষকদের পরিকল্পিতভাবে হত্যা করা হচ্ছে। ট্রাম্প রামাফোসার সামনে বেশ কিছু সংবাদ প্রতিবেদনও উপস্থাপন করেন এবং দক্ষিণ আফ্রিকার বিরোধী নেতা জুলিয়াস মালেমার একটি উসকানিমূলক বক্তব্যও তুলে ধরেন।

রামাফোসা পাল্টা জবাবে বলেন, এ ধরনের বক্তব্য বা চিত্র সরকারের নীতিকে প্রতিফলিত করে না। তিনি বলেন, দক্ষিণ আফ্রিকায় আমাদের বহুদলীয় গণতন্ত্র রয়েছে, যেখানে সকলের মত প্রকাশের স্বাধীনতা আছে। তবে সরকারের নীতি এসব বক্তব্যের বিপরীত।

তিনি আরও জানান, দেশটিতে সহিংসতার শিকারদের বড় অংশই কৃষ্ণাঙ্গ নাগরিক, শুধুমাত্র শ্বেতাঙ্গ নয়। তিনি নিজের প্রতিনিধিদলে থাকা তিনজন প্রভাবশালী শ্বেতাঙ্গ নাগরিকের দিকে ইঙ্গিত করে বলেন, যদি সত্যিই গণহত্যা চলত, তাহলে তারা এখানে থাকতে পারতেন না।

বৈঠকে ট্রাম্প দক্ষিণ আফ্রিকার বিতর্কিত ভূমি অধিগ্রহণ আইন নিয়েও প্রশ্ন তোলেন, যা বেসরকারি মালিকানাধীন জমি ক্ষতিপূরণ ছাড়াই অধিগ্রহণের সুযোগ দেয়। রামাফোসা ব্যাখ্যা দেন, এখনো এই আইনের আওতায় কোনো জমি অধিগ্রহণ করা হয়নি এবং এটি শুধুই ঐতিহাসিক বৈষম্য দূর করার উদ্যোগ।

বিশ্লেষকদের মতে, এই ঘটনার মধ্য দিয়ে যুক্তরাষ্ট্র ও দক্ষিণ আফ্রিকার মধ্যকার দূরত্ব আরও বেড়েছে। এর পেছনে রয়েছে দক্ষিণ আফ্রিকার ভূমি সংস্কার নীতি, আন্তর্জাতিক আদালতে ইসরায়েলের বিরুদ্ধে তাদের অবস্থান এবং ট্রাম্প প্রশাসনের দক্ষিণ আফ্রিকার প্রতি কৌশলগত মনোভাব পরিবর্তন।

এই উত্তপ্ত বাক্য বিনিময়ের মধ্যেও প্রেসিডেন্ট রামাফোসা শান্ত ও সংযত ছিলেন। তিনি দক্ষিণ আফ্রিকাকে নেলসন ম্যান্ডেলার আদর্শে পরিচালিত একটি গণতান্ত্রিক দেশ হিসেবে তুলে ধরার চেষ্টা করেন। তবে স্পষ্টতই, বৈঠকটি উভয় দেশের কূটনৈতিক সম্পর্কে নতুন করে চ্যালেঞ্জ তৈরি করেছে।

সূত্র: বিবিসি

এমএম

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।