তিন পারমাণবিক স্থাপনায় যুক্তরাষ্ট্রের হামলার পর বসে নেই ইরান। পাল্টা প্রতিক্রিয়ায় ইসরায়েলের একাধিক স্থাপনায় ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালিয়েছে তেহরান।
টাইমস অব ইসরায়েল ও আল আরাবিয়া এ ঘটনা নিয়ে প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। তবে সেখানে বিস্তারিত কিছু উল্লেখ করা হয়নি। শুধু বলা হয়েছে, মার্কিন হামলার পরপরই ইরান ইসরায়েলে হামলা চালায়। তাদের লক্ষ্যবস্তুতে ছিল বেন গুরিয়ন বিমানবন্দর ও একটি জৈব গবেষণা কেন্দ্র।
রোববার (২২ জুন) সকালে ইরানের সশস্ত্র বাহিনী ‘অপারেশন অনেস্ট প্রমিজ ৩’ অভিযানের ২০তম ধাপ শুরু করে। বার্তা সংস্থা ফার্স জানায়, এই ধাপে ব্যবহৃত হয়েছে দূরপাল্লার তরল ও কঠিন জ্বালানিচালিত ক্ষেপণাস্ত্র, যেগুলোর ওয়ারহেড অত্যন্ত ধ্বংসাত্মক। হামলার লক্ষ্য ছিল বেন গুরিয়ন বিমানবন্দর, একটি জৈব গবেষণা কেন্দ্র, লজিস্টিকস ঘাঁটি এবং বিভিন্ন স্তরের কমান্ড ও নিয়ন্ত্রণ কেন্দ্র।
এছাড়া ক্ষেপণাস্ত্র আঘাত হানে তেল আবিব, নেস সিয়োনা ও হাইফার আবাসিক এলাকাতেও।
চীনের সংবাদ সংস্থা সিনহুয়ার খবরে বলা হয়েছে, ধারণা করা হচ্ছে, ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র নেস জিওনা শহরে অবস্থিত ইসরায়েল ইনস্টিটিউট ফর বায়োলজিক্যাল রিসার্চ (আইআইবিআর) সেন্টারে আঘাত করেছে। এটি ইসরায়েলের সামরিক ও কৌশলগত ক্ষমতার অন্যতম গোপন গবেষণা কেন্দ্র হিসেবে বিবেচিত।
ইরান-ইসরায়েল পাল্টাপাল্টি হামলার ঘটনায় আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে নানা গুরুত্বপূর্ণ প্রতিবেদন প্রকাশিত হলেও, ইসরায়েলের জৈব গবেষণা কেন্দ্রে হামলা অনেকটাই চাপা পড়ে যায়। টাইমস অব ইসরায়েল ও আল আরাবিয়ার প্রতিবেদনের পরে ইন্টারনেটে সেন্টারটি নিয়ে নানা তথ্য উঠে এসেছে।
কৌশলগত গোপনীয়তার কারণে ইসরায়েল এ বিষয়ে কোনো তথ্য দেয়নি এবং হামলার বিষয়টি আনুষ্ঠানিকভাবে স্বীকার করেনি।
তবে ইন্টারনেটে পাওয়া তথ্য অনুসারে, ইরানের হামলার অন্যতম লক্ষ্য ছিল নেস জিওনা শহরে অবস্থিত ইসরায়েল ইনস্টিটিউট ফর বায়োলজিক্যাল রিসার্চ (আইআইবিআর)। এটি একটি উচ্চ নিরাপত্তাসম্পন্ন গবেষণা কেন্দ্র, যা দীর্ঘদিন ধরে ইসরায়েলের জৈব ও রাসায়নিক অস্ত্র উন্নয়নের গোপন ঘাঁটি হিসেবে কাজ করে আসছে।
১৯৫২ সালে প্রতিষ্ঠিত এই প্রতিষ্ঠানটি ইসরায়েলের গোপন সামরিক ইউনিট হেমেদ বেইতের ছায়ায় গড়ে ওঠে। প্রতিষ্ঠার সময় থেকেই এর উদ্দেশ্য ছিল ইসরায়েলকে এমন একটি জৈব-রাসায়নিক সুরক্ষা বলয়ে আবদ্ধ করা, যা শত্রুপক্ষের আগাম ধারণার বাইরে থাকে।
বছরের পর বছর এখানে অ্যানথ্রাক্স, বটুলিনাম টক্সিন, রাইসিন এবং ভিএক্স নার্ভ গ্যাসের মতো মারাত্মক জৈব উপাদান নিয়ে গবেষণা চালানো হয়েছে। তবে এসব বিষয়ে ইসরায়েল সরকার কখনও আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি দেয়নি।
বিশ্বব্যাপী এই প্রতিষ্ঠানের কার্যক্রম আলোচনায় আসে ১৯৯২ সালে যখন এল আল বিমান দুর্ঘটনায় ‘ডিএমএমপি’ নামে একটি রাসায়নিক বহনের তথ্য ফাঁস হয়, যা সরাসরি আইআইবিআরের গবেষণার সঙ্গে সম্পর্কিত বলে সন্দেহ করা হয়।
প্রতিষ্ঠানটিতে বেশিরভাগ পিএইচডি ডিগ্রিধারী গবেষক কাজ করেন। চিকিৎসাবিজ্ঞানে তাদের অবদানও উল্লেখযোগ্য। পোলিও ভ্যাকসিন, বিস্ফোরক শনাক্তকরণ কিট, শোগ্রেনস সিনড্রোমের ওষুধ উদ্ভাবন করেছেন তারা। এমনকি কোভিড মহামারির সময় নিজস্ব ব্রাইলাইফ ভ্যাকসিন এবং মনোক্লোনাল অ্যান্টিবডি উদ্ভাবন করেছিলেন গবেষকরা।
তবে এই গবেষণাকেন্দ্রটির মূল গুরুত্ব ছিল ভবিষ্যতের যুদ্ধ নীতিতে টার্গেটেড ভাইরাল স্ট্রাইক, জৈব অস্ত্র নির্মাণ এবং রাসায়নিক প্রতিরক্ষার দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনায়। এটি ছিল ইসরায়েলের একটি ‘অদৃশ্য সুরক্ষা বলয়’।
এমজে