যুক্তরাষ্ট্রের বৈদেশিক মানবিক সহায়তা তহবিল ব্যাপকভাবে কাটছাট করার ফলে আগামী পাঁচ বছরের মধ্যে ১ কোটি ৪০ লাখ মানুষের মৃত্যু হতে পারে, যাদের মধ্যে প্রায় এক-তৃতীয়াংশই শিশু।
স্বাস্থ্যবিষয়ক আন্তর্জাতিক গবেষণা সাময়িকী দ্য লেনসেট-এ প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ট্রাম্প প্রশাসনের নেয়া এই সিদ্ধান্ত দরিদ্র দেশগুলোর জন্য একপ্রকার "বিশ্বব্যাপী মহামারির মতো ধাক্কা" হয়ে দাঁড়াতে পারে।
এই গবেষণাটি প্রকাশিত হলো এমন এক সময়ে, যখন বিশ্ব নেতারা স্পেনের সেভিয়া শহরে জাতিসংঘ-আয়োজিত এক দশকের সবচেয়ে বড় সহায়তা সম্মেলনে অংশ নিচ্ছেন।
গবেষণাটি চালিয়েছে বার্সেলোনা ইনস্টিটিউট ফর গ্লোবাল হেলথ। এর সহ-লেখক দাভিদে রাসেলা বলেন, তহবিলের এই ব্যাপক কাটছাট দুই দশকের স্বাস্থ্যখাতে অগ্রগতিকে থামিয়ে দিতে পারে, এমনকি উল্টো দিকে ফিরিয়ে নিয়ে যেতে পারে।
তাদের গবেষণায় দেখা গেছে, ২০০১ থেকে ২০২১ সালের মধ্যে ইউএসএইডের সহায়তায় ৯ কোটি ১০ লাখ মৃত্যুকে ঠেকানো সম্ভব হয়েছে। কিন্তু এখন তহবিল ৮৩% কমিয়ে দেওয়া হয়েছে যার প্রভাবে ২০৩০ সালের মধ্যে প্রতি বছর গড়ে ৭ লাখ শিশুর মৃত্যু ঘটতে পারে।
গত মাসে বিবিসির এক প্রতিবেদনে জানায়, কেনিয়ার কাকুমা শরণার্থী শিবিরে একটি শিশুকে দেখতে পাওয়া যায়, যে নড়াচড়া করতে পারছিল না। তার ত্বক ছিল কুঁচকে যাওয়া ও খোসা উঠতে থাকা যা অপুষ্টির ক্লাসিক লক্ষণ।
জাতিসংঘের কর্মকর্তারা সতর্ক করেছেন, সেখানে লাখ লাখ মানুষ ধীরে ধীরে অনাহারে মারা যাচ্ছে, কারণ খাদ্য সহায়তা রেশন ইতিহাসের সর্বনিম্ন পর্যায়ে নেমে এসেছে।
এদিকে, যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও জানিয়েছেন, ইউএসএইডের ৮০ শতাংশেরও বেশি কর্মসূচি বাতিল করা হলেও এখনো প্রায় ১,০০০ কর্মসূচি থাকবে, যা নতুনভাবে মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তর পরিচালনা করবে।
তবে সমালোচকরা বলছেন, এই পরিবর্তনের পেছনে ছিল ট্রাম্প ও ধনকুবের এলন মাস্কের খরচ কমানোর পরিকল্পনা, যেখানে ফেডারেল কর্মসংস্থান ছাঁটাই এবং উদারপন্থী প্রকল্পগুলো বাদ দেওয়ার উদ্দেশ্য স্পষ্ট ছিল।
বিশ্বের বৃহত্তম সহায়তা প্রদানকারী দেশ হিসেবে যুক্তরাষ্ট্র এতদিন ৬০টির বেশি দেশে সহায়তা প্রদান করত। কিন্তু এই নাটকীয় পরিবর্তনের ফলে এখন মাঠপর্যায়ে জীবন-মরণ সমস্যা দেখা দিচ্ছে, যেখান থেকে ঘুরে দাঁড়ানো সহজ হবে না।
সূত্র: বিবিসি
এমএম