ঢাকা, শুক্রবার, ৩ শ্রাবণ ১৪৩২, ১৮ জুলাই ২০২৫, ২২ মহররম ১৪৪৭

আন্তর্জাতিক

ইসরায়েল কেন সিরিয়ার গৃহযুদ্ধে জড়িয়ে যাচ্ছে? 

আন্তর্জাতিক ডেস্ক  | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১০:৫৬, জুলাই ১৮, ২০২৫
ইসরায়েল কেন সিরিয়ার গৃহযুদ্ধে জড়িয়ে যাচ্ছে?  দ্রুজ অধ্যুষিত মাজদাল শামস গ্রামে বাসিন্দারা দেখেছেন, ইসরায়েলি ট্যাঙ্কগুলো ইসরায়েল অধিকৃত গোলান মালভূমি থেকে সীমান্তের বেড়া পেরিয়ে সিরিয়ার নিরপেক্ষ অঞ্চলে প্রবেশ করছে। ছবি: সংগৃহীত

ইসরায়েল মধ্যপ্রাচ্যে অপ্রতিদ্বন্দ্বী সামরিক শক্তি হয়ে ওঠার পর থেকে আন্তর্জাতিক সীমানার প্রতি সামান্যই সম্মান দেখিয়েছে। এর সর্বশেষ উদাহরণ, দামেস্কে সিরিয়ার একটি সরকারি ভবনে ইসরায়েলি বিমান হামলা।

দক্ষিণ সিরিয়ার কিছু অংশে ঢুকে পড়ার পর, সিরিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ে হামলা চালিয়েছে তারা বলছে এই হামলা নতুন সরকারকে সতর্ক করতে যেন ইসরায়েলের দখল করা অংশে সিরিয়া হস্তক্ষেপ না করে।  

ইসরায়েল সিরিয়ার দক্ষিণাঞ্চলের কিছু অংশে প্রবেশ করেছে, সেখানে সামরিক ঘাঁটি তৈরি করেছে এবং একটি 'নিয়ন্ত্রণ রেখা' ঘোষণা করেছে।

সোমবার, দক্ষিণাঞ্চলে সম্প্রতি ঘটে যাওয়া সংঘাতের পর পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে সিরীয় সেনাবাহিনীর ট্যাংক এগিয়ে গেলে ইসরায়েলি যুদ্ধবিমান তাদের লক্ষ্য করে হামলা চালায়।

ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনী বলছে, দক্ষিণ সিরিয়ায় এ ধরনের যানবাহনের উপস্থিতি ইসরায়েলের জন্য হুমকি হয়ে উঠতে পারে।

তবে বাস্তবে, সিরিয়ার পুরোনো ট্যাংকগুলো আধুনিক প্রযুক্তিসম্পন্ন ইসরায়েলি বাহিনীর জন্য তেমন হুমকি নয়।

সিরীয় বাহিনী যখন দ্রুজ অধ্যুষিত এলাকা সুইদা অঞ্চলে প্রবেশ করে তখন তাদের ওপর এই হামলা চালানো হয়।

এই সংঘাতের সূচনা হয় দ্রুজ ও বেদুইন গোষ্ঠীর মধ্যে সহিংস সংঘর্ষ দিয়ে, যাতে বহু মানুষ নিহত হয়। এই উত্তেজনার পেছনের প্রেক্ষাপট জটিল।

কমপক্ষে তিনটি দ্রুজ মিলিশিয়া ভিন্ন ভিন্ন ধর্মীয় নেতার অনুসারী এবং তারা নতুন বিপ্লব-পরবর্তী সিরিয়ার সঙ্গে কীভাবে নিজেদের খাপ খাওয়াবে তা নিয়েও পরস্পরের মধ্যে দ্বিধাবিভক্ত।

ইসরায়েল ক্রমশ সিরিয়ার গৃহযুদ্ধে জড়িয়ে পড়ছে এবং জানিয়েছে, তারা "দ্রুজ জনগণকে রক্ষা ও যেকোনো হুমকি প্রতিহত করতে" অনির্দিষ্টকালের জন্য সেখানে থাকবে।

সমালোচকরা বলছেন, ইসরায়েল সিরিয়ায় বিভাজন ও নিয়ন্ত্রণের নীতি প্রয়োগ করছে। নবগঠিত সরকারকে দুর্বল করে তুলছে এবং গোলান মালভূমির সীমান্ত রক্ষায় একটি বাফার জোন তৈরি করছে, যেটি মূলত সিরিয়ার অঞ্চল, কিন্তু ইসরায়েল প্রায় অর্ধশতাব্দী ধরে দখল ও পরে সংযুক্ত করেছে।

আসাদ সরকারের পতনের পর থেকে ইসরায়েল ধারাবাহিকভাবে বিমান হামলার মাধ্যমে সিরিয়ার সামরিক শক্তিকে ধ্বংস করে দিয়েছে, যার ফলে সরকারের পক্ষে দূরবর্তী অঞ্চলে নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করা কঠিন হয়ে পড়েছে।  

অন্যদিকে, যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় শক্তিগুলো সিরিয়ার নতুন সরকারের সঙ্গে সম্পর্ক স্বাভাবিক করার পথে এগোচ্ছে এবং নিষেধাজ্ঞা তুলে নিচ্ছে।

কিন্তু ইসরায়েল এই সময়েই সিরিয়ার ভূমি দখল করছে, তার সামরিক বাহিনীকে আঘাত করছে এবং এখন রাজধানীর একটি সরকারি ভবনেও বিমান হামলা চালাচ্ছে।

হামাস, হিজবুল্লাহ ও ইরানের বিরুদ্ধে একের পর এক সামরিক অভিযানের মাধ্যমে ইসরায়েল এখন অঞ্চলের অনায়াসে সবচেয়ে ক্ষমতাবান সামরিক শক্তিতে পরিণত হয়েছে।

তবে কেবল শক্তি দিয়ে সব অর্জন করা সম্ভব নয়। দীর্ঘমেয়াদি অর্জনের জন্য কূটনীতি অপরিহার্য। কিন্তু ইসরায়েলের একাধিক প্রতিবেশীর বিরুদ্ধে ধারাবাহিক আক্রমণ এবং গাজায় তার অব্যাহত অভিযানের কারণে অঞ্চলজুড়ে তার বন্ধু কমে যাচ্ছে।

এমএম

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।