মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের আগাম ঘোষণার ধারাবাহিকতায় ভারতীয় পণ্যের ওপর ৫০ শতাংশ আমদানি শুল্ক আরোপ করেছে যুক্তরাষ্ট্র। বুধবার (২৭ আগস্ট) থেকে কার্যকর হওয়া এই সিদ্ধান্তে যুক্তরাষ্ট্রে ভারতের রপ্তানি বাণিজ্য বড় ধরনের সংকটে পড়েছে।
কার্যকর হওয়া নতুন নীতিতে ভারতের রপ্তানি পণ্যের ওপর শুল্ক বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৫০ শতাংশে। কয়েক সপ্তাহ আগেও ট্রাম্প প্রশাসন ভারতীয় পণ্যে ২৫ শতাংশ শুল্ক আরোপ করেছিল। সেটি তোয়াক্কা না করে রাশিয়ার তেল আমদানি অব্যাহত রাখে ভারত। ফলে নতুন করে ‘বন্ধু রাষ্ট্রের’ ওপর দ্বিগুণ শুল্ক চাপালেন ট্রাম্প।
নতুন শুল্ক আরোপের বিষয়ে হোয়াইট হাউসের যুক্তি, ভারত রাশিয়ার তেল কিনে পরোক্ষভাবে ইউক্রেনে যুদ্ধের খরচ জোগাচ্ছে। যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য উপদেষ্টা পিটার নাভারো সাংবাদিকদের বলেছেন, ভারত যেন নিজের ভূমিকা বুঝতে চাইছে না— ইউক্রেনের রক্তপাতের পেছনে এরও দায় রয়েছে।
আল জাজিরার প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০২৪ সালে যুক্তরাষ্ট্রে ভারতের রপ্তানি হয়েছিল ৮৭ বিলিয়ন ডলারেরও বেশি। ভারত সরকার জানিয়েছে, নতুন শুল্কনীতির কারণে এর মধ্যে প্রায় ৪৮ বিলিয়ন ডলারের রপ্তানি সরাসরি ক্ষতিগ্রস্ত হবে। নয়াদিল্লির অভিযোগ, এই পদক্ষেপ অন্যায্য, অযৌক্তিক ও একপাক্ষিক।
ভারতীয় সংবাদমাধ্যমগুলোর খবর, সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা সতর্ক করে বলেছেন এই উচ্চ শুল্কে আমেরিকার বাজারে অনেক পণ্য বাণিজ্যিকভাবে আর টিকবে না। এর ফলে রপ্তানি হ্রাস, ব্যাপক চাকরি হারানো এবং দেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি শ্লথ হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।
ভারতের রপ্তানিখাতে প্রভাব পড়ার সতর্কতা দিয়েছে গ্লোবাল ট্রেড রিসার্চ ইনিশিয়েটিভও (জিটিআরআই)। সংস্থাটি তাদের এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে, আগামী অর্থবছরে (২০২৬-২৭) দেশটির রপ্তানির মূল্য ৪৩ শতাংশ কমে ৫০ বিলিয়ন ডলারের নিচে নেমে যেতে পারে।
আন্তর্জাতিক বাণিজ্য গবেষণা সংস্থা বলছে, এমন পরিস্থিতিতে ভারতের জিডিপির প্রায় এক শতাংশ কমাতে পারে। এই সংখ্যা আগের অনুমানের চেয়ে অনেক বেশি। ১ আগস্ট প্রথম ২৫ শতাংশ শুল্কের সময় বলা হয়েছিল, জিডিপির ক্ষতি ০.২ শতাংশ ছাড়বে না। কিন্তু দ্বিতীয় শুল্কের পরে ক্ষতির পরিমাণ বেড়েছে।
তবে ভারতের অর্থনীতির শক্ত ভিত্তি আংশিকভাবে এই ক্ষতি সামলে নিতে পারে। বিশেষ করে রপ্তানি খাত, যা ট্রাম্পের শুল্ক সত্ত্বেও অর্থবছর ২০২৬ শেষে প্রায় ২.৩ শতাংশ বৃদ্ধির আশা করছে।
এ বিষয়টিকে রপ্তানি খাতে বড় ধাক্কা হিসেবে দেখছে ভারতের সংশ্লিষ্ট সংস্থা ফেডারেশন অব ইন্ডিয়ান এক্সপোর্ট অর্গানাইজেশনস (এফআইইও)। সংস্থাটি জানায়, চলতি অর্থবছরে (২০২৪-২৫) যুক্তরাষ্ট্রে ৮৬.৫ বিলিয়ন ডলারের পণ্য ও সেবা রপ্তানি করেছে ভারত। এই রপ্তানির দুই-তৃতীয়াংশ মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের আরোপ করা নতুন শুল্কের কারণে প্রভাবিত হবে।
বিশেষ করে প্রায় ৪৮ বিলিয়ন ডলারের রপ্তানি এখন ৩৫ শতাংশ বেশি খরচের ঝুঁকিতে পড়েছে। এতে ভিয়েতনাম, বাংলাদেশ ও চীনের প্রতিযোগীরা সহজেই সুবিধা নিতে পারবে।
এফআইইও সভাপতি এসসি রালহান বলেছেন, ট্রাম্পের নতুন শুল্কের কারণে তামিলনাড়ুর বস্ত্র শিল্প বন্ধ হয়ে যেতে পারে। ক্ষতির মুখে পড়বেন চিংড়ি রপ্তানিকারীরা, কেননা তাদের ৪০ শতাংশ মার্কিন বাজার নির্ভরশীল। এছাড়া চামড়া, সিরামিক ও হস্তশিল্পসহ অন্যান্য শিল্পকেও ঝুঁকিতে পড়তে হবে।
তিনি সরকারকে আহ্বান জানিয়েছেন যেন রপ্তানিকারকদের সাহায্য করা হয়। অন্তত ১২ মাসের জন্য ঋণ স্থগিত ও আর্থিক সহায়তা দেওয়া ও রপ্তানি বাজার বাড়ানোর জন্য দ্রুত বাণিজ্য চুক্তি করারও পরামর্শ দিয়েছেন রালহান।
ভারত সরকারের ভাষ্য, যুক্তরাষ্ট্রের চাপে তারা অস্থির হচ্ছে না। দেশটির প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি বলেছেন, তিনি কখনও ভারতের কৃষকদের স্বার্থে আপস করবেন না। কারণ, কৃষকরা দেশের গুরুত্বপূর্ণ ভোট ব্যাংক। দ
এসআরএ/এমজে