ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু শুক্রবার জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদে বলেছেন, গাজায় হামাসের বিরুদ্ধে ইসরায়েলকে ‘কাজ শেষ করতে হবে’। তিনি বক্তব্য শুরু করার সঙ্গে সঙ্গেই বিভিন্ন দেশের বহু প্রতিনিধি একযোগে হল ত্যাগ করেন।
নেতানিয়াহু কথা বলার সময় চারদিক থেকে অস্পষ্ট চিৎকার শোনা যাচ্ছিল। যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিনিধিদল, যারা হামাসবিরোধী অভিযানে নেতানিয়াহুকে সমর্থন করে এসেছে, তারা হলে থেকে যায়। অন্যদিকে নেতানিয়াহুর ভাষণের শুরুতেই কিছু অংশ থেকে হাততালি শোনা যায়।
অতীতের মতো এবারও নেতানিয়াহু ভিজ্যুয়াল মাধ্যমের সহায়তায় একটি মানচিত্র তুলে ধরেন, যার শিরোনাম ছিল ‘দ্য কার্স’। তিনি সেটিতে বড় মার্কার দিয়ে দাগ দেন। পরে তিনি নিজের কোটে একটি কিউআর কোড লাগান এবং শ্রোতাদের সামনে একটি বোর্ডে বহুনির্বাচনী প্রশ্ন তুলে ধরে তা পাঠ করেন।
ভাষণে নেতানিয়াহু বারবার যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রশংসা করেন। তিনি জানান, এক ‘অভূতপূর্ব অভিযানে’ গাজার বাসিন্দা ও হামাসের সদস্যদের মোবাইল ফোন নিয়ন্ত্রণে নেবে ইসরায়েলি সেনারা, আর তার ভাষণ সরাসরি সম্প্রচার করা হবে সেসব ডিভাইসে।
যুদ্ধাপরাধের অভিযোগ, আন্তর্জাতিক চাপ ও ক্রমশ একঘরে হয়ে পড়ার মাঝেই নেতানিয়াহুর জন্য শুক্রবারের এই ভাষণ ছিল বৈশ্বিক মঞ্চে নিজের অবস্থান তুলে ধরার সুযোগ।
সম্প্রতি অস্ট্রেলিয়া, কানাডা, ফ্রান্স, যুক্তরাজ্যসহ আরও কয়েকটি দেশ স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্রকে স্বীকৃতির ঘোষণা দিয়েছে।
নেতানিয়াহু বক্তব্য শুরু করার সঙ্গে সঙ্গেই বিভিন্ন দেশের বহু প্রতিনিধি একযোগে হল ত্যাগ করেন
ইউরোপীয় ইউনিয়ন ইসরায়েলের বিরুদ্ধে শুল্ক ও নিষেধাজ্ঞা আরোপের কথা বিবেচনা করছে। এ মাসেই জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদ একটি প্রস্তাব পাস করেছে, যেখানে ইসরায়েলকে স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্রের স্বীকৃতির প্রতি প্রতিশ্রুতিবদ্ধ হতে আহ্বান জানানো হয়। তবে নেতানিয়াহু এটিকে সম্পূর্ণ অগ্রহণযোগ্য বলে জানিয়েছেন।
আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত (আইসিসি) নেতানিয়াহুর বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগ এনে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেছে, যা তিনি অস্বীকার করেছেন। জাতিসংঘের সর্বোচ্চ আদালত বর্তমানে দক্ষিণ আফ্রিকার অভিযোগ খতিয়ে দেখছে, যেখানে বলা হয়েছে গাজায় গণহত্যা চালাচ্ছে ইসরায়েল।
নেতানিয়াহুর অবস্থানের বিরোধিতা বাড়ছে
চলতি সপ্তাহে জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের বিশেষ অধিবেশনে একের পর এক দেশ ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর হামাসের হামলায় নিহত ১,২০০ জন ইসরায়েলি নাগরিক ও ২৫১ জনকে জিম্মি করার ঘটনায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছে। তবে একইসঙ্গে অধিকাংশ প্রতিনিধি গাজায় অবিলম্বে যুদ্ধবিরতি এবং মানবিক সহায়তা নিশ্চিত করার আহ্বান জানিয়েছেন।
স্থানীয় স্বাস্থ্য কর্মকর্তাদের হিসাবে, ইসরায়েলের ব্যাপক হামলায় গাজায় ইতোমধ্যেই ৬৫ হাজারেরও বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছে এবং ৯০ শতাংশ মানুষ বাস্তুচ্যুত। বিপুল সংখ্যক মানুষ অনাহারের মুখে পড়ছে।
বর্তমানে দেড় শতাধিক দেশ ফিলিস্তিন রাষ্ট্রকে স্বীকৃতি দিলেও যুক্তরাষ্ট্র এখনও তা করেনি। তারা ইসরায়েলকে প্রবলভাবে সমর্থন দিয়ে যাচ্ছে। যদিও বৃহস্পতিবার ওয়াশিংটনে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প স্পষ্ট করেছেন, তিনি পশ্চিম তীর দখল বা সংযুক্তির অনুমতি দেবেন না।
ফিলিস্তিনিদের বক্তব্য
নেতানিয়াহুর ভাষণের আগের দিনই ফিলিস্তিনি নেতা মাহমুদ আব্বাস সাধারণ পরিষদে ভিডিও বার্তায় বক্তব্য দেন। যুক্তরাষ্ট্র তাকে ভিসা না দেওয়ায় তিনি জাতিসংঘের অধিবেশনে সরাসরি উপস্থিত হতে পারেননি।
মাহমুদ আব্বাস বলেন, ফিলিস্তিন রাষ্ট্রকে স্বীকৃতি দেওয়ার ঘোষণাগুলো তিনি স্বাগত জানালেও এর বাইরে আরও পদক্ষেপ প্রয়োজন। এখনই সময় আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের উচিত ফিলিস্তিনি জনগণের প্রতি ন্যায়বিচার করা।
এমজেএফ