ঢাকা: সিরিয়ার আকাশে তুর্কি হামলায় বিধ্বস্ত রুশ জঙ্গিবিমান। প্রতিক্রিয়ায় তুরস্ককে ভয়াবহ পরিণতির হুমকি রাশিয়ার।
এর মধ্য দিয়ে যেন সিরিয়া যুদ্ধের ছায়ায় বিশ্বে নতুন করে বাজছে ঠাণ্ডা যুদ্ধের দামামা।
মঙ্গলবার উত্তর সিরিয়ার আকাশে তুর্কি জঙ্গিবিমান একটি রুশ যুদ্ধবিমানকে গুলি করে ভূপাতিত করে। ক্ষুব্ধ রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন তুরস্ককে পেছন দিয়ে ছুরি মারার দায়ে অভিযুক্ত করেন। পাশাপাশি রুশ যুদ্ধবিমান ধ্বংসের পরিণতি ভয়াবহ হবে বলেও তুরস্ককে হুমকি দেন তিনি। জবাবে তুরস্কও সার্বভৌমত্ব রক্ষায় প্রয়োজনে কঠোরতম পদক্ষেপ নেয়ার ঘোষণা দেয়।
এ পরিস্থিতিতে বুধবার প্রকাশ্যেই তুরস্কের পাশে দাঁড়ানোর ঘোষণা দেয় আমেরিকার নেতৃত্বাধীন ন্যাটো সামরিক জোট।
গত অর্ধ শতাব্দীতে কোন ন্যাটো রাষ্ট্রের রুশ যুদ্ধবিমানকে গুলি করে নামানোর ঘটনা এই প্রথম। এর আগে রুশ জঙ্গিবিমানগুলো বহুবার ন্যাটো দেশগুলোর অাকাশসীমা লঙ্ঘন করলেও সেগুলোকে নামানোর সাহস করেনি কেউ। তুরস্কই প্রথম। তুরস্কের সমর্থনে তাই ন্যাটোর সেক্রেটারি জেনারেল জেন্স স্টোলেনবার্গ জানিয়ে দিয়েছেন, ‘‘জোটের সবক’টি দেশই তুরস্কের পাশে রয়েছে। ’
সিরিয়া ও তুরস্কের সীমান্তের লাতাকিয়া প্রদেশে মঙ্গলবার রুশ যুদ্ধবিমান গুলি করে মাটিতে নামানোর পর তুর্কি সামরিক বাহিনী দাবি করে, রুশ যুদ্ধবিমানটি তাদের আকাশসীমা লঙ্ঘন করেছিল। এছাড়া সেটিকে গুলি করে নামানোর আগে ওই বিমানের দুই পাইলটকে বেশ কয়েক দফা সতর্কও করে দেওয়া হয়েছিল।
কিন্তু কিছুক্ষণের মধ্যেই তুরস্কের দাবি উড়িয়ে দেয় রাশিয়া। চরম ভাষায় তুরস্ককে হুঁশিয়ারি দেন রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। তিনি বলেন, ‘‘এর পরিণতি ভয়াবহ হবে। আসলে জঙ্গিদের সাহায্য করতেই পিছন থেকে ছুরি মেরেছে তুরস্ক। ’’
এ পরিস্থিতিতে সদস্য রাষ্ট্র তুরস্কের সাহায্যে তড়িঘড়ি করে জরুরি বৈঠক ডাকে ন্যাটো। ন্যাটোর অপর সদস্য দেশ আফ্রিকার অ্যাঙ্গোলাও তুরস্কের পক্ষ নেয়।
সিরিয়াকে কেন্দ্র করে বেশ কিছু দিন ধরেই দু’ভাগে ভাগ হয়ে গিয়েছে গোটা বিশ্ব। গত সেপ্টেম্বরে সিরিয়ায় রুশ জঙ্গিবিমানের অভিযান শুরুর পরপরই আমেরিকা অভিযোগ করে বলে, সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট বাশার আল-আসাদের সরকারকে মদত দিচ্ছে রাশিয়া।
মস্কো সেই অভিযোগ উড়িয়ে দিয়ে বলেছিল, আইএস জঙ্গিদের নির্মূল করতেই সিরিয়ার আকাশে ঢুকেছে রুশ যুদ্ধবিমান। অপরদিকে সিরিয়ার আসাদ সরকারকে একেবারেই পছন্দ নয় তুরস্কের।
অবশ্য প্যারিস হামলার পর পরিস্থিতি অল্প সময়ের জন্য হলেও কিছুটা বদলেছিল। আইএস জঙ্গিদের দমন করতে সিরিয়া ও সিরিয়ার বাইরে অন্য দেশেও রাশিয়া ও ফ্রান্সের কাছে আরও বেশি সামরিক সক্রিয়তার দাবি জানিয়েছিল ওয়াশিংটন।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার সঙ্গে বৈঠকে ফরাসি প্রেসিডেন্ট ফ্রাসোঁয়া ওঁলাদও আইএস জঙ্গিদের বিরুদ্ধে এক জোট হয়ে লড়ার জন্য রাশিয়ার সঙ্গে মিলিতভাবে অভিযানের দাবি জানিয়েছিলেন ওয়াশিংটনের কাছে।
কিন্তু মঙ্গলবার তুরস্কের ঘটনা ফের পরিস্থিতিকে থমথমে করে দিল। গোটা বিশ্বকে আবার কার্যত তা দু’পক্ষে ভাগ করে দিল। যার এক দিকে আমেরিকা ও ‘ন্যাটো’ জোটের দেশগুলি। আর অন্য দিকে রাশিয়া।
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পরের ঠাণ্ডাযুদ্ধের সময় একদিকে ছিলো সোভিয়েত ইউনিয়নের নেতৃত্বাধীন সমাজতান্ত্রিক ব্লক। তাদের প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলো যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বাধীন ন্যাটো জোট। সঙ্গী ছিলো পুঁজিবাদী বিশ্ব।
রুশ যুদ্ধবিমান ভূপাতিত করার ঘটনায় সব মিলিয়ে সেই ঠাণ্ডা যুদ্ধের পদধ্বনি পাওয়া যাচ্ছে বলে মনে করছেন অনেকেই।
বাংলাদেশ সময়: ১৭২০ ঘণ্টা, নভেম্বর ২৫, ২০১৫
আরআই