আর এদিকটায় গুরুত্বপূর্ণ আলো ফেলেছে নাসার নতুন এক দুরবিন। যাকে ডাকা হচ্ছে ‘উড়ন্ত দুরবিন’ বা ‘ফ্লাইং টেলেস্কোপ’ নামে।
দুরবিনটি গতানুগতিক দুরবিনের মতো কোনো একটি জায়গায় স্থির নয়, বরং এটি সদা চলমান ও উড়ন্ত। কেননা এটি স্থাপন করা হয়েছে একটি উড়ন্ত জাম্বো জেটে।
সোফিয়া অবজারভেটরির হিসেব ও ধারণামতে, নক্ষত্রের জন্মের জন্য অত্যাবশ্যক হচ্ছে চুম্বক-ক্ষেত্র বা চৌম্বকীয় বলয়।
সোফিয়া অবজারভেটরিতে গবেষণারত ন মহাকাশবিজ্ঞানীদের একজন হচ্ছেন ফাবিও সান্তোস। ইলিনয় অঙ্গরাজ্যের নরর্থওয়েস্টার্ন বিশ্বাবিদ্যালয়ের এই অধ্যাপকে মতে, আধুনিক জ্যোতির্বিদ্যার সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জগুলোর একটি হচ্ছে, গ্রহ ও নক্ষত্রগুলো কীভাবে জন্ম নিল বা গঠিত হলো তা বুঝতে পারা। আমরা জানি যে, মিল্কিওয়ে বা ‘আকাশগঙ্গা’য় যে অপরিমেয় ধুলিকণা ও আণব গ্যাস অতিকায় মেঘমালা রূপে বিরাজমান, তাই এক সময় ঘনীভূত হতে হতে গ্রহ ও নক্ষত্রমণ্ডল হিসেবে আবির্ভূত হয়। এ ব্যাপারে বেসিক ধারণাটি হচ্ছে, এই অতিকায় গ্যাসীয় মেঘমালা নিজের ভর ও অভিকর্ষের কারণে সংকুচিত ও ঘনীভূত হতে থাকে। আর এভাবে তারা ঘন থেকে আরও ঘন হতে থাকে। এক পর্যায়ে সেসব গ্যাসীয় পিণ্ডের গুচ্ছ বা ঝাড়ের আকার নেয়। এভাবে এই পিণ্ডাকার গ্যাসীয় রূপটা হয়ে ওঠে ‘কোর’।
গ্যাস ও আণব দুলিকণার অতি-ঘনীভূত ‘কোর’ থেকেই জন্ম নেয় অসংখ্য নক্ষত্র শিশু।
তবে এই পক্রিয়াটিকে ‘খুবই জটিল’ বলে উল্লেখ করেন ড. সান্তোস।
ছায়াপথের ‘ Rho Ophiuchi cloud complex’ নামের ধুলি ও আণব গ্যাসের অতিকায় মেঘমালার খুবই স্পষ্ট ছবি ধারণ করেছে উড়ন্ত দুরবিন। যা একাধারে ধুলি ও গ্যাসময়-ধূম্রময় এক নিহারিকা। ‘Ophiuchus’ নামের নক্ষত্রমণ্ডলের অন্তর্গত ‘ρ Ophiuchi’ নক্ষত্রের ১ ডিগ্রি দক্ষিণে অবস্থান এই অন্ধকারাচ্ছন্ন ধূমল নিহারিকার। আর ‘Rho Ophiuchi A’ নামের এই অতিকায় গ্যাসীয় মেঘমালা শতশত নতুন নক্ষত্রের জন্ম দিয়ে চলেছে। সম্ভবত যেগুলোর অনেকগুলো হবে আমাদের সূর্যেরই অবিকল। আমাদের সূর্যের মতো এগুলোরও থাকবে গ্রহপুঞ্জ।
এর অবস্থান আমাদের থেকে অসীম দূরত্বে। বিজ্ঞানের ভাষায় যাকে বলা হয়, ‘131 ± 3 parsecs’।
উড়ন্ত দুরবিনের তোলা এসব ছবি ও জন্ম-নিতে-যাওয়া এই নক্ষত্রমণ্ডল নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা হয় ওয়াশিংটন ডিসির অদূরের ন্যাশনাল হারবার-এ অ্যামেরিকান অ্যাস্ট্রোনমিক্যাল সোসাইটির সম্প্রতি অনুষ্ঠিত ২৩তম বৈঠকে।
ড. সান্তোসের মতে, সুদূর ওই ধূমল মেঘময় নিহারিকায় রয়েছে বস্তুপুঞ্জ ও বস্তুপিণ্ড। সেই কারণে এর ভর ও মাধ্যাকর্ষণও রয়েছে। আর সেকারণে তা সংকুচিত হতে হতে ঘনীভূত অসংখ্য পিণ্ডের ঝাড়ের রূপ নেবে। এরপর এটি ক্রমশ আরও ঘনীভূত হতে থাকবে। এক সময় এগুলো সংখ্যাহীন আগামী নক্ষত্রের রূপ নেবে। তবে এজন্য সবচে যা জরুরি তা হচ্ছে চৌম্বকীয় আবেশ বা বলয়।
যুক্তরাষ্ট্র ও জার্মানির যৌথ উদ্যোগে পরিচালিত হচ্ছে ‘সোফিয়া’ নামের এই উড়ন্ত মানমন্দির বা ফ্লাইং অবজারভেটরি। ইংরেজিতে এর পুরো নাম স্ট্রাটোস্ফেয়ারিক অবজারভেটরি ফর ইনফ্রারেড অ্যাস্ট্রোনমি)। একটি বোয়িং ৭৪৭এসপি উড়োজাহাজকে এর আগের নক্সা পাল্টে দিয়ে বানানো হয়েছে অবজারভেটরি। যা উড়ে উড়ে অসীম মহাকাশের নানা প্রান্তের দিকে অনুসন্ধিৎসু চোখ রাখবে।
মাটি থেকে ১২ কিলোমিটার ওপর দিয়ে উড়ে যেতে যেতে উড়ন্ত এ মানমন্দির তার কাজ করে চলে। অতিকায় এই উড়েগাজাহাজটির পেটের দিকটায় আছে একটি বিশাল দরজা। যেখানে স্থাপন করা হয়েছে ২.৫ মিটার ব্যাসের একটি শক্তিশালী দুরবিন বা টেলিস্কোপ। যা বাজপাখির মতো মহাকাশের দূর অলিন্দে তার শ্যেন চোখ মেলে রাখবে। আর ক্রমাগত শিকার করে চলবে অভূতপূর্ব, অদৃষ্টপূর্ব, অবিশ্বাস্য আর রোমাঞ্চকর ছবির পর ছবি।
বাংলাদেশ সময়: ০৯২৮ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১১, ২০১৮
জেএম