বুধবার (১১ ডিসেম্বর) নেদারল্যান্ডসের হেগে জাতিসংঘের আন্তর্জাতিক বিচার আদালতে (আইজেসি) গাম্বিয়ার দায়ের করা রোহিঙ্গা গণহত্যা মামলার শুনানির দ্বিতীয় দিনে আত্মপক্ষ সমর্থনে এসব কথা বলেন সু চি।
এদিন আত্মপক্ষ সমর্থনে বক্তব্য দিতে উঠে সু চি রোহিঙ্গা মুসলিমদের ওপর রাষ্ট্রীয় সহিংসতা ও গণহত্যার অভিযোগ উড়িয়ে দেন।
আদালতে রাখাইনের মানচিত্রের ছবি তুলে ধরে সু চি বলেন, ২০১৬ সালের শেষের দিকে বিচ্ছিন্নতাবাদী আরাকান রোহিঙ্গা স্যালভেশন আর্মি (আরসা) গোষ্ঠী রাখাইনে নিরাপত্তা বাহিনীর একাধিক চৌকিতে হামলা চালায়। এতে সেনাবাহিনীর বেশ কয়েকজন সদস্য মারা যান। এর প্রতিক্রিয়াতেই ওই অঞ্চলে সেনাবাহিনী অভিযান পরিচালনা করে।
রাখাইন পরিস্থিতিকে ‘জটিল’ অভিহিত করে ও সেনা অভিযানের পক্ষে সাফাই গেয়ে মিয়ানমারের নেত্রী বলেন, ওই অভিযান ছিল মিয়ানমারের ‘অভ্যন্তরীণ কোন্দলের’ জেরে।
অবশ্য সেনা অভিযানে রোহিঙ্গাদের ভোগান্তির কথা স্বীকার করেন সু চি। কিন্তু গাম্বিয়ার গণহত্যার অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করে তিনি বলেন, গাম্বিয়া রাখাইনের বাস্তব পরিস্থতির অসম্পূর্ণ ও বিভ্রান্তিকর চিত্র তুলে ধরেছে। সেনা অভিযানের ক্ষেত্রে ‘গণহত্যার উদ্দেশ্য’ একমাত্র ব্যাখ্যা হতে পারে না।
সু চি বলেন, যেখানে রাষ্ট্র এ ব্যাপারে প্রত্যক্ষভাবে তদন্ত চালাচ্ছে, দোষী সেনা কর্মকর্তাদের বিচার ও শাস্তি দিচ্ছে, তা কী করে গণহত্যার উদ্দেশ্যে হতে পারে? যদিও এখন পর্যন্ত শুধু দোষী সেনা কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে, আমি আপনাদের আশ্বস্ত করতে পারি, এ ব্যাপারে পরবর্তীতে দোষী বেসামরিক নাগরিকদেরও বিচার করা হবে।
এদিকে আদালতে রোহিঙ্গা নিপীড়নের অভিযোগ অস্বীকারের কারণে এরই মাঝে বিশ্বব্যাপী সু চির সমালোচনা শুরু হয়েছে।
আগামীকাল (বৃহস্পতিবার) এ মামলায় এবারের মতো তৃতীয় ও শেষ দিনের শুনানি অনুষ্ঠিত হবে। এতে গাম্বিয়া ও মিয়ানমার উভয়পক্ষই একে ওপরের যুক্তিখণ্ডন ও আরও কিছু বলার থাকলে তা তুলে ধরবে।
চলতি বছরের নভেম্বরে মিয়ানমারের বিরুদ্ধে রোহিঙ্গা গণহত্যার মামলা করে পশ্চিম আফ্রিকার দেশ গাম্বিয়া। গতকাল (মঙ্গলবার) প্রথম দিনের শুনানিতে জরুরি ভিত্তিতে এ মামলার বিচারকাজ শুরুর দাবি জানায় তারা। রোহিঙ্গারা যেন আরও ক্ষতিগ্রস্ত না হয় সেটি নিশ্চিত করতেও আদালতকে অনুরোধ জানায় গাম্বিয়া।
এ মামলার পরও ন্যায়বিচার পেতে আরও দীর্ঘ সময় অপেক্ষা করতে হতে পারে রোহিঙ্গাদের। চূড়ান্ত রায় দিতে আন্তর্জাতিক বিচার আদালত বছরের পর বছর সময় নেন। কিন্তু আদালত চাইলে যে কোনো ধরনের অন্তর্বর্তী আদেশ দিতে পারেন। মিয়ানমারের ওপর নানা নিষেধাজ্ঞা আরোপ করতে পারেন।
গাম্বিয়ার করা এ মামলার সূত্রে মিয়ানমারের বিরুদ্ধে তেমনই কোনো অন্তর্বর্তী আদেশ আসতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে। এতে নতুন করে চাপের মুখে পড়তে পারে দেশটি।
আরও পড়ুন>>> গাম্বিয়ার দেওয়া চিত্র অসম্পূর্ণ-বিভ্রান্তিকর: সু চি
বাংলাদেশ সময়: ১৭০৯ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১১, ২০১৯
এইচজে /