ঢাকা, সোমবার, ১৭ আষাঢ় ১৪৩১, ০১ জুলাই ২০২৪, ২৩ জিলহজ ১৪৪৫

আন্তর্জাতিক

চীনের টার্গেটে উইগুর অ্যাক্টিভিস্টদের স্বজনরা

আন্তর্জাতিক ডেস্ক | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২০১৩ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ৩, ২০২১
চীনের টার্গেটে উইগুর অ্যাক্টিভিস্টদের স্বজনরা ক্যাম্পে বন্দি উইগুর মুসলিমরা

উইগুর অ্যাকটিভিস্টদের স্বজনদের কারাগারে বন্দি করে চীন প্রতিশোধ নিচ্ছে বলে দাবি করেছেন মার্কিন কর্মকর্তারা।  

তারা বলছেন, চীন উইগুর অ্যাকটিভিস্টদের আত্মীয়-স্বজনের বিরুদ্ধে সন্ত্রাসবাদের অভিযোগ তুলছে এবং তাদের কারাগারে বন্দি করছে।

এছাড়া যারা জিনজিয়াং অঞ্চলের মুসলিম সংখ্যালঘুদের দুর্দশা সম্পর্কে সচেতনতা বাড়ানোর কাজ করছেন তাদের ভয় দেখানো হচ্ছে।  

জিনজিয়াংয়ে সন্ত্রাসবাদের অভিযোগে উইগুর-আমেরিকান অ্যাকটিভিস্ট রুশান আব্বাসের বোন গুলশান আব্বাসকে ২০ বছরের কারাদণ্ড দিয়েছে চীন।  

আন্তর্জাতিক ধর্মীয় স্বাধীনতা বিষয়ক দ্বিপক্ষীয় মার্কিন কমিশনের একজন কমিশনার নুরি তুরকেল ভয়েস অব আমেরিকাকে (ভোয়া) বলেন, বিদেশে বসবাসকারী অনেক উইগুর তাদের নিরাপত্তা এবং উইগুর অঞ্চলে তাদের আত্মীয়দের নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বিগ্ন।  

রুশান আব্বাস বলেছেন, তার বোনের কারাদণ্ড যুক্তরাষ্ট্রে তার সক্রিয়তার বিরুদ্ধে প্রতিশোধ।

তিনি ভোয়াকে বলেন, ২০১৮ সালের সেপ্টেম্বর মাসে উইগুরদের ওপর চীনের নির্যাতন নিয়ে হাডসন ইনস্টিটিউটের একটি প্যানেলে বক্তৃতা দেওয়ার ছয় দিন পর চীনা কর্তৃপক্ষ আমার বোনকে তার বাড়ি থেকে নিয়ে যায়।

মুক্তির আহ্বান
নুরি তুরকেল বলেন, উইগুর মানবাধিকার নীতি আইনের অধীনে যুক্তরাষ্ট্রের সরকারের উচিত চীনা কর্মকর্তা এবং সংস্থার ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা।  

জিনজিয়াং-এ উইগুর মুসলমানদের ওপর চীনের অভিযানের প্রতিক্রিয়া হিসেবে উইগুর মানবাধিকার আইন ২০২০ সালের জুন মাসে কার্যকর হয়।

সাম্প্রতিক এক বিবৃতিতে যুক্তরাষ্ট্রের কংগ্রেশনাল-এক্সিকিউটিভ কমিশন অন চায়না (সিইসিসি) গুলশান আব্বাসকে মুক্তি দেওয়ার জন্য চীনা সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে।

কিন্তু চীনা কর্মকর্তারা তার কারাদণ্ড নিশ্চিত করে সাড়া দিয়েছেন।

চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একজন মুখপাত্র ওয়াং ওয়েনবিন ডিসেম্বরের শেষের দিকে এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, একটি সন্ত্রাসী সংগঠনে অংশগ্রহণের অপরাধে চীনা বিচার বিভাগীয় কর্তৃপক্ষ গুলশান আব্বাসকে কারাদণ্ড প্রদান করেছে।

গণহত্যা
সাম্প্রতিক বছরগুলোতে, আন্তর্জাতিক অধিকার গ্রুপ এবং যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমা সরকার জিনজিয়াং-এ উইগুর এবং অন্যান্য মুসলিম সংখ্যালঘুদের বিরুদ্ধে চীনের ক্রমবর্ধমান নিয়মতান্ত্রিক নিপীড়নের নিন্দা জানিয়েছে।

তারা বলছে, নিপীড়নের মধ্যে রয়েছে ডিটেনশন ক্যাম্পে ১০ লাখের বেশি উইগুরকে বন্দী করে রাখা, জোরপূর্বক নারীদের বন্ধ্যাকরণ, জোর পূর্বক শ্রম, জনগণের আন্দোলনের ওপর নজরদারি, উইগুর ভাষা নিষিদ্ধ করা এবং জনগণকে তাদের ধর্ম ত্যাগ করতে বাধ্য করা।

চীন জিনজিয়াংয়ে আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষকদের প্রবেশ করতে দেয় না। অন্যদিকে ‘সন্ত্রাসবাদ প্রতিরোধ এবং দারিদ্র্য বিমোচনের’ লক্ষ্যে উইগুরদের আটকে রেখে মগজ ধোলাই করা হচ্ছে।  

১৯ জানুয়ারি তৎকালীন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র পররাষ্ট্র মন্ত্রী মাইক পম্পেও ঘোষণা করেছেন যে চীন উইগুরদের বিরুদ্ধে মানবাধিকার বিরোধী এবং গণহত্যার মতো অপরাধ করেছে।

তবে চীন বরাবরই সব অভিযোগ অস্বীকার করে আসছে।  

চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র ঝাও লিজিয়ান অভিযোগের নিন্দা জানিয়ে বলেছেন, চীনে গণহত্যার মতো ঘটনা কখনও ঘটেনি।

অন্যান্য ক্ষেত্রে
ওয়াশিংটনে অবস্থিত উইগুর মানবাধিকার প্রকল্পের (ইউএইচআরপি) প্রজেক্ট ম্যানেজার নিকোল মরগ্রেট বলেছেন, উইগুরদের কার্যকলাপ চীনা আইনের পরিপন্থী নয়। যেমন, বিদেশে পরিবার বা বন্ধুদের কাছে অর্থ স্থানান্তর করা। কিন্তু চীনা সরকার এটাকে সন্ত্রাসবাদ হিসেবে বিবেচনা করে।  

৫৭ বছর বয়স্ক উইগুর ব্যবসায়ী এবং দক্ষিণ জিনজিয়াং-এর শহর কাশগারের চেম্বার অব কমার্সের চেয়ারম্যান আব্দুজেল হিলিলকে ২০১৭ সালে তুরস্কের এক বন্ধুকে তার মেয়ের বিয়ের উপহার পাঠানোর জন্য ১৪ বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়।  

‘সন্ত্রাসী কার্যকলাপে সাহায্য করার’ অভিযোগে তাকে ওই শাস্তি দেওয়া হয় এবং প্রায় ১১ মিলিয়ন মার্কিন ডলার মূল্যের সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করা হয়।

তার স্ত্রী, ছেলে এবং তার ব্যবসায়িক সহযোগীসহ ১৬ জন আত্মীয়কেও ইন্টার্নশিপ ক্যাম্পে নিয়ে যাওয়া হয়।

ওয়াশিংটনের একজন সেলস ম্যানেজার কালবিনুর ঘেনি ভয়েস অব আমেরিকাকে বলেন, তিনি অ্যাকটিভিস্ট হয়ে ওঠার পর তার ৪০ বছর বয়স্ক শিক্ষিকা বোনকে ক্যাম্পে ধরে নিয়ে যায়।  

ঘেনি বলেন, পরে আমাদের বাবার অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া চলার সময় প্রার্থনা করা এবং কুরআন থাকার জন্য আমার বোনকে ১৭ বছরের কারাদণ্ড প্রদান করা হয়।

২০১৯ সালের অক্টোবর মাসে রোচেস্টার বিশ্ববিদ্যালয়ে বক্তৃতা দেওয়ার পর এবং পরে তার বোনের মামলা নিয়ে টুইট পোস্ট করার পর ঘেনি বলেন, জিনজিয়াং-এর চীনা কর্তৃপক্ষ তাকে ক্রমাগত হুমকি দিচ্ছে।

ওয়াশিংটনের সিয়াটলের বাসিন্দা ২৮ বছর বয়স্ক উইগুর অ্যাকটিভিস্ট আকিদা পোলাত জানান, তার মা রাহিলা দাউতের খবর না পাওয়ার পর উইগুরদের জন্য তিনি কাজ শুরু করেন।  

৫৪ বছর বয়স্ক দাউত জিনজিয়াং বিশ্ববিদ্যালয়ের নৃতত্ত্বের একজন অধ্যাপক, যাকে ২০১৭ সালের ডিসেম্বর মাসে জিনজিয়াং-এ চীনা কর্তৃপক্ষ ইন্টার্নশিপ ক্যাম্পে নিয়ে যায়। সূত্র: ভয়েস অব আমেরিকা

বাংলাদেশ সময়: ২০০০ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ০৩, ২০২১
নিউজ ডেস্ক

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।