ঢাকা, সোমবার, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ২৩ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

আন্তর্জাতিক

কে এই আল-কুরাইশি

আন্তর্জাতিক ডেস্ক  | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৬২৬ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ৫, ২০২২
কে এই আল-কুরাইশি

মার্কিন বিশেষ বাহিনীর অভিযানে সিরিয়ার ইদলিব প্রদেশে নিহত হয়েছেন ইসলামিক স্টেট গোষ্ঠীর নেতা আবু ইব্রাহিম আল-হাশিমি আল-কুরাইশি। এ খবর জানিয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন।

  

বিবিসির প্রতিবেদনে বলা হয়, তুরস্ক সীমান্তের কাছে আতমেহ এলাকায় একটি দোতলা বাড়িতে সপরিবারে লুকিয়ে ছিলেন আইএস নেতা আবু ইব্রাহিম আল-হাশিমি আল-কুরাইশি।  

বৃহস্পতিবার (৪ ফেব্রুয়ারি) রাতে মার্কিন কমান্ডোরা হেলিকপ্টারে করে এসে বাড়িটিতে অভিযান চালায়। এ সময় ওই আইএস নেতা একটি বোমার বিস্ফোরণ ঘটান। এতে তিনি নিজে ও তার পরিবারসহ ১৩ জন নিহত হন।  

এই হামলার পরিকল্পনা হয়েছিল কয়েক মাস ধরে। প্রেসিডেন্ট বাইডেন অভিযান পরিচালনার চূড়ান্ত নির্দেশ দেওয়ার পর অভিযান শুরু হয়। হোয়াইট হাউসে বসে সেটি সরাসরি দেখেন জো বাইডেন।  

কে এই আইএস নেতা
আল-কুরাইশির জন্ম ১৯৭৬ সালে, ইরাকের দ্বিতীয় বৃহত্তম শহর মসুল থেকে ৩৫ কিলোমিটার দূরের আল-মেহালাবিয়ায়। ইসলামিক স্টেট গোষ্ঠীর ভেতরে আল-কুরাইশিকে ডাকা হতো ‘হাজী আবদুল্লাহ কারদাশ’ বা ‘হাজি আবদুল্লাহ’ নামে।

ইসলামিক স্টেটে ইরাক সরকারের কাউন্টার-টেররিজম ইউনিট ‘ফ্যালকন ব্রিগেড’ এর গুপ্তচর ছিলেন মেজর আহমেদ (ছদ্মনাম)। ইসলামিক স্টেটের সবশেষ নেতা সম্পর্কে তিনি বিস্তারিত জানেন। মেজর আহমেদ বলেন, হাজী আবদুল্লাহ বা আল-কুরাইশির আসল নাম আমির মোহাম্মদ সাঈদ আল-মওলা।  

তিনি আরও বলেন, আমির মোহাম্মদ সাঈদ আল-মওলার জন্ম আল-মেহালাবিয়ায়। তার বাবা সেখানকার একটি মসজিদের মুয়াজ্জিন ছিলেন। তার ছিল দুই স্ত্রী ও ১৭ জন সন্তান।  

সাদ্দাম হোসেনের শাসনকালে আল-কুরাইশি কিছুকাল ইরাকের সেনাবাহিনীতে ছিলেন বলে জানা যায়। তা ছাড়া তিনি মসুলের বিশ্ববিদ্যালয়েও ইসলাম বিষয়ে উচ্চশিক্ষা নিয়েছেন।

মার্কিন-নেতৃত্বাধীন বাহিনী যখন ২০০৩ সালে ইরাকে অভিযান চালায়, তখনই আল-কুরাইশি ছোট ছোট কিছু জিহাদি গোষ্ঠীর সঙ্গে জড়িত ছিলেন। পরে তিনি এসব গোষ্ঠী ছেড়ে দিয়ে আল-কায়েদায় যোগ দেন।

২০০৮ সালে তাকে গ্রেফতার করে আমেরিকানরা পুকা কারাগারে আটকে রাখে। সেখানে মার্কিন সৈন্যরা কয়েক মাস ধরে আল-কুরাইশিকে জিজ্ঞাসাবাদ করেন। তারা দাবি করে যে, আল-কুরাইশি তাদেরকে আইএস সদস্যদের সম্পর্কে অনেক তথ্য দিয়েছিলেন।  

২০১০ সালের শুরুতে আল-কুরাইশিকে ছেড়ে দেওয়া হয়। এর অল্প কিছু দিনের মধ্যেই তিনি ইসলামিক স্টেটের প্রতিষ্ঠাতা নেতা আবু বকর আল-বাগদাদির সঙ্গে যোগ দেন। আল-বাগদাদির ঘনিষ্ঠজন হিসেবে তিনি নিনেভেহ প্রদেশে আইএসএর একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তায় পরিণত হন।

আইএসের উচ্চাভিলাষ বাড়তে থাকার সঙ্গে সঙ্গে আল-কুরাইশি বিচার মন্ত্রীর দায়িত্ব পান। তার দায়িত্ব ছিল মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা এবং লোকজনকে নিষ্ঠুর-বীভৎস পন্থায় শাস্তি দেওয়ার কাজ তত্ত্বাবধান করা।

আইএস যখন ২০১৪ সালে সিঞ্জার শহরে প্রবেশ করে, তখন আল-কুরাইশির নিষ্ঠুরতা এবং তিনি যে কত প্রভাবশালী তা স্পষ্ট হয়। এখানে তারা ইয়াজিদি সংখ্যালঘু গোষ্ঠীর হাজার হাজার লোককে হত্যা করে। তবে ইয়াজিদি নারীদের নিয়ে কী করা হবে—এ প্রশ্নে আইএসের মধ্যে মতপার্থক্য দেখা দেয়।

২০১৭ সালের অক্টোবরে আল-বাগদাদি ও আল-কুরাইশি সিরিয়ার আল-বুকামাল শহরে চলে আসেন। এখানেও তাদের ওপর একটি বিমান হামলা হয়, যা থেকে অল্পের জন্য প্রাণে বেঁচে যান তারা।

আল-কুরাইশির গায়ে বোমার টুকরোর আঘাত লাগে কিন্তু তার এক সহচর নিহত হন। তখন হাজি আবদুল্লাহ একটি কৃত্রিম পা লাগিয়ে চলাফেরা করতেন। এরপর আল-কুরাইশিকে প্রথম হাসপাতালে এবং পরে ইদলিবে পাঠিয়ে দেওয়া হয়।

আল-বাগদাদি নিহত, নতুন আইএস নেতা আল-কুরাইশি
কয়েক মাস পর উত্তর সিরিয়ার ইদলিবে আল-বাগদাদি তার গোপন বাসভবনে অন্য কয়েকজন নেতার সঙ্গে বৈঠক করছেন—এমন একটি ভিডিও প্রকাশ হয়।  আল-বাগদাদি ছাড়া ভিডিওতে অন্য নেতাদের মুখ আইএস নিজেই ঝাপসা করে দেয়। তবে মনে করা হয় যে, উপস্থিত এই নেতাদের মধ্যে আল-কুরাইশি একজন।

এই সময়টায় তাকে সম্ভাব্য পরবর্তী নেতা হিসেবে গড়ে তোলা হচ্ছিল। অবশেষে ২০১৯ সালে সেই অবধারিত ঘটনাটি ঘটে, আমেরিকানদের এক হামলায় আবু-বকর আল-বাগদাদি নিহত হন। এর ফলে হাজি আবদুল্লাহ ওরফে আবু ইব্রাহিম আল-হাশিমি আল-কুরাইশির আইএস নেতা হওয়ার পথ খুলে যায়।

আমেরিকানরা কুরাইশির সন্ধান পায় গত বছর
ইদলিবের যে এলাকাটিতে আল-কুরাইশি তার পরিবার নিয়ে থাকতেন, সেটি একটি দরিদ্র এলাকা, যেখানকার বেশির ভাগ বাসিন্দাই সিরিয়ার অন্য এলাকা থেকে গৃহযুদ্ধের কারণে পালিয়ে এসেছেন।  

জলপাইয়ের গাছে ঘেরা একটি অতিসাধারণ ভবনের চারতলায় থাকতেন আল-কুরাইশি । প্রায় ১১ মাস আগে এই বাড়িটির তিন তলায় ভাড়াটি হিসেবে থাকতে আসেন একজন ট্রাক চালক ও তার পরিবার।

গত বছরের শেষ দিকে আমেরিকানরা গোপনসূত্রে খবর পায় যে, আল-কুরাইশি এই বাড়িটির ওপর তলায় থাকছেন। এ প্রেক্ষাপটেই প্রেসিডেন্ট বাইডেন এ আক্রমণের ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেন।  

যেভাবে চলে অভিযান
হেলিকপ্টারে আসা আমেরিকান বিশেষ বাহিনী বাড়িটিতে অভিযান চালায় রাত ১টার দিকে। প্রথমে মার্কিন সৈন্যরা লাউডস্পিকারে একজন দোভাষীর মাধ্যমে বাড়ির ভবনটির সবাইকে বের হয়ে আসতে বলে। দোতলার একটি পরিবার বেরিয়ে এলেও অন্যরা আসেনি।

মার্কিন বাহিনী এর পর বাড়িটি লক্ষ্য করে ক্ষেপণাস্ত্র ছুঁড়তে শুরু করে। এর কিছু পরই আল-কুরাইশি একটি বোমার বিস্ফোরণ ঘটান, যাতে তিনি নিজে এবং তার পরিবারের অন্যরাও নিহত হন।

মার্কিন কমান্ডোরা এরপর ভবনটিতে ঢুকে পড়ে এবং আল-কুরাইশির বার্তাবাহক সেই ট্রাকচালক ও তার স্ত্রীও আক্রমণে নিহত হন। তবে তাদের চার ছেলেমেয়ে প্রাণে রক্ষা পেয়েছে।

বাংলাদেশ সময়: ১৬২৫ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ৫, ২০২২
জেএইচটি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।