ইউক্রেনে অভিযানের পর রাশিয়ার কেন্দ্রীয় ব্যাংক পশ্চিমাদের নিষেধাজ্ঞার মুখে পড়েছে। একই সঙ্গে আন্তর্জাতিক আর্থিক লেনদেন ব্যবস্থা ‘সুইফট’ থেকে রাশিয়ার কয়েকটি ব্যাংককে বিচ্ছিন্ন করতে একমত হয়েছে ইউরোপীয় ইউনিয়ন, যুক্তরাষ্ট্র ও তাদের মিত্র দেশগুলো।
এমন পরিস্থিতিতে অর্থ তুলতে রাশিয়ার বিভিন্ন ব্যাংক ও এটিএম বুথে গ্রাহকদের দীর্ঘ সারি দেখা গেছে। শনিবার (২৬ ফেব্রুয়ারি) রাত থেকে গ্রাহকদের ভিড় বেশি দেখা যায়। রোববার সকালেও একই অবস্থা ছিল মস্কো ও অন্য শহরগুলোতে। রুশ মুদ্রা রুবল ও ডলার তুলতে ভিড় করছিলেন তারা।
ফিনান্সিয়াল টাইমসের প্রতিবেদনে বলা হয়, রুশ মুদ্রার পতন ও আন্তর্জাতিক পেমেন্ট সিস্টেম ব্যবহার না করতে পারার শঙ্কায় গ্রাহকরা আগেভাগেই তাদের অর্থ তুলে নিচ্ছেন।
২৪ ফেব্রুয়ারি রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন ইউক্রেনে সেনা অভিযান চালানোর ঘোষণা দেন। এরপর থেকেই বৈদেশিক মুদ্রা ও রুবল উত্তোলনের জন্য গ্রাহকদের দীর্ঘ সারি দেখা যায়। ফিনান্সিয়াল টাইমসের একজন সাংবাদিক সরেজমিনে দেখেছেন, ওই দিন দুপুরের দিকে আন্তর্জাতিক ব্যাংকগুলোর অনেক শাখায় মার্কিন ডলার শেষ হয়ে যায়।
তবে চলমান পরিস্থিতিতে সবাইকে শান্ত থাকার আহ্বান জানিয়েছে দেশটির কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এক বিবৃতিতে বলা হয়, রাশিয়ান ব্যাংকিং সিস্টেম স্থিতিশীল এবং পর্যাপ্ত মূলধন মজুদ রয়েছে। অর্থ তুলতে কোনো ধরনের সমস্যার সম্ভাবনা নেই। সব গ্রাহকের অর্থ ব্যাংকে নিরাপদ এবং যেকোনো সময় উত্তলন করা যাবে।
রুশ কেন্ত্রীয় ব্যাংকের এমন ঘোষণার পরও আশ্বস্ত হতে পারছেন না গ্রাহকরা। মস্কোর বাসিন্দা একাতেরিনা বলছিলেন, ‘আমি প্রথম দিকেই কিছু অর্থ তুলেছিলাম। এখন আবার এটিএম বুথে যাচ্ছি। কারণ কার্ডের প্রযুক্তিগত ক্রটি হওয়ার শঙ্কা রয়েছে। গতকাল গুগল পে দিয়ে ট্যাক্সির জন্য অর্থ প্রদান করতে আমার ইতোমধ্যে সমস্যা হয়েছে। তাই এখনই এক মাসের নগত অর্থ তুলতে চাই’।
বিবিসির প্রতিবেদনে বলা হয়, ইউরোপীয় ইউনিয়ন জানিয়েছে, একটি দেশ থেকে আরেকটি দেশের ব্যাংকে আর্থিক লেনদেন করতে সুইফট ব্যবস্থা ব্যবহার করা হয়। তেল ও গ্যাস রপ্তানির মাধ্যমে রাশিয়া যে অর্থ আয় করে, সেই অর্থ আদায়ে দেশটি সুইফটের ওপর ব্যাপকভাবে নির্ভরশীল।
জার্মান সরকারের একজন মুখপাত্র জানিয়েছেন, রাশিয়ান এসব ব্যাংকে বৈদেশিক অর্থ লেনদেন বন্ধ করাই তাদের এই উদ্যোগের মুল উদ্দেশ্য। কিন্তু রাশিয়ার সঙ্গে ব্যবসা রয়েছে, এমন পশ্চিমা প্রতিষ্ঠানগুলোও এর ফলে ক্ষতির সম্মুখীন হতে পারে।
বেলজিয়ামভিত্তিক সুইফট বিশ্বের ২০০টি দেশে ১১ হাজার আর্থিক প্রতিষ্ঠানের মধ্যে লেনদেনের মাধ্যম হিসেবে কাজ করে।
ইউক্রেন ছেড়েছে ৩ লাখ ৬৮ হাজার মানুষ
রাশিয়ার অভিযান শুরুর পর অন্তত ৩ লাখ ৬৮ হাজার মানুষ ইউক্রেনে ঘরবাড়ি ছেড়ে পালিয়েছে। জাতিসংঘের শরণার্থীবিষয়ক সংস্থা (ইউএনএইচসিআর) এ তথ্য জানিয়েছে।
বিবিসির প্রতিবেদনে বলা হয়, ইউক্রেন থেকে এ পর্যন্ত ১ লাখ ৫০ হাজারের বেশি লোক পালিয়ে পোল্যান্ডে আশ্রয় নিয়েছে। অন্যদিকে গত তিন দিনে ইউক্রেন থেকে রোমানিয়ায় পালিয়েছে ৪৩ হাজারের বেশি মানুষ।
যুদ্ধে ৪৩০০ রুশ সেনা নিহত
রাশিয়ার সঙ্গে যুদ্ধ চালিয়ে যাচ্ছে ইউক্রেনের সেনারা। রোববার (২৭ ফেব্রুয়ারি) চতুর্থ দিনের মতো যুদ্ধ চলছে।
এই যুদ্ধে রুশ ক্ষয়ক্ষতির একটি তালিকা প্রকাশ করেছেন ইউক্রেনের উপ-প্রতিরক্ষামন্ত্রী হানা মালিয়া। এক ফেসবুক পোস্টে তিনি দাবি করেন, এই যুদ্ধে এখন পর্যন্ত ৪ হাজার ৩০০ জন রুশ সেনা নিহত হয়েছেন।
তবে বিবিসি এই দাবির সত্যতা যাচাই করতে পারেনি। রাশিয়াও এখন পর্যন্ত হতাহতের কোনো সংখ্যা প্রকাশ করেনি।
ইউক্রেনের মন্ত্রীর দেওয়া তালিকায় ২৭টি বিমান, ২৬টি হেলিকপ্টার, ১৪৬টি ট্যাংক, ৭০৬টি সাঁজোয়া যান, ৪৯টি কামান, ১টি বুক এয়ার ডিফেন্স সিস্টেম, ৪টি গ্র্যাড রকেট লঞ্চ সিস্টেম, ৩০টি যানবাহন, ৬০টি ট্যাঙ্কার, ২টি ড্রোন ও ২টি নৌকা ধ্বংসের কথা বলা হয়।
রুশ সেনাদের প্রশংসায় পুতিন
ইউক্রেনে আগ্রাসন চালানো রুশ সেনাদের প্রশংসা করেছেন প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। একটি ভিডিও ভাষণে বিশেষ বাহিনীর সদস্যদের কার্যক্রম নিয়ে তিনি স্বস্তি প্রকাশ করেন বলে জানায় বিবিসি।
ইউক্রেনে ‘বীরত্বের সঙ্গে সামরিক দায়িত্ব পালন’ করার জন্য বিশেষ বাহিনীর সেনাদের ধন্যবাদ জানিয়েছে পুতিন বলেন, ‘আমি আপনাদের সৌভাগ্য ও সাফল্য কামনা করি’।
তিনি বলেন, ‘আমি কমান্ডকে ধন্যবাদ জানাতে চাই, বিশেষ অপারেশন বাহিনীর কর্মীদের, বিশেষ বাহিনী ইউনিট সদস্যদের শপথের প্রতি আনুগত্যের জন্য, রাশিয়ার জনগণ এবং আমাদের মহান মাতৃভূমির নামে তাদের অনবদ্য সেবার জন্য’।
ভিডিও বার্তাটি পুতিন শেষ করেছেন এই বলে, ‘আমি আপনার ও আপনার প্রিয়জনদের জন্য সৌভাগ্য, সাফল্য মঙ্গল কামনা করি’।
শান্তি আলোচনায় বসার আহ্বান
এমন পরিস্থিতিতে চলমান যুদ্ধ বন্ধ করতে রাশিয়ার সঙ্গে আলোচনায় বসতে রাজি হয়েছেন ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি। তিনি বলেন, ‘অবশ্যই আমরা শান্তি চাই, আমরা দেখা করতে চাই, আমরা যুদ্ধের অবসান চাই। ওয়ারশ, ব্রাতিস্লাভা, বুদাপেস্ট, ইস্তাম্বুল, বাকু—এসব জায়গায় আলোচনায় বসার জন্য আমরা রাশিয়ার কাছে প্রস্তাব করেছি’।
বাংলাদেশ সময়: ১৯৩০ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ২৭, ২০২২
জেএইচটি