ঢাকা, শনিবার, ৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ২১ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

ইসলাম

জিকিরকারী হাসতে হাসতে জান্নাতে যাবে

নিউজ ডেস্ক | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১১৪৫ ঘণ্টা, জুলাই ১৫, ২০২৪
জিকিরকারী হাসতে হাসতে জান্নাতে যাবে

আল্লাহর জিকির করা একটি বিশেষ নফল ইবাদত। এ ইবাদতের ধরাবাঁধা সময় নেই।

যে কোনো সময়েই তা পালন করা যায়। জিকির সাধারণত তিন প্রকার। প্রথমত, জিকিরে লিসানি বা মৌখিক। দ্বিতীয়ত, জিকিরে কালবি বা আন্তরিক, স্মরণ তথা মনে মনে স্মরণ। তৃতীয়ত, জিকিরে আমালি বা কার্যত স্মরণ, তথা বাস্তব কর্মের মধ্য দিয়ে আল্লাহকে স্মরণ। তাৎক্ষণিকভাবে আল্লাহর আদেশ-নিষেধ বাস্তবায়ন করাও আল্লাহকে স্মরণ করার নামান্তর।

পবিত্র কোরআন কারিমে আল্লাহতায়ালা ৪০ বার জিকিরের কথা বলেছেন। আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘হে ঈমানদাররা, তোমরা বেশি বেশি আল্লাহর জিকির করো। ’ জিকির বিভিন্ন রকমের বা  বিভিন্নভাবে করা যায়। এস্তেগফারের মাধ্যমেও আল্লাহতায়ালার স্মরণ বা জিকির করা যায়। সবারই দৈনিক ১০০ বার এস্তেগফার পাঠ করা উচিত। এস্তেগফারের মাধ্যমে আল্লাহতায়ালা বান্দার রিজিক বাড়িয়ে দেন।

এ প্রসঙ্গে আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘তোমরা তোমাদের প্রভুর কাছে ক্ষমা চাও, নিশ্চয় তিনি ক্ষমাশীল। ’ এস্তেগফার করতে হবে নিজের গুনাহ ক্ষমা করানোর জন্য। কেউ রিজিক বাড়ানোর উদ্দেশে এস্তেগফার করলে তার এস্তেগফার কবুল হবে না। বান্দা নিজের গুনাহ, নিজের অবাধ্যতার প্রতি লজ্জিত হয়েই আল্লাহতায়ালার দরবারে ক্ষমা ভিক্ষা চাইবে। তাহলে আল্লাহতায়ালা তাকে ক্ষমা করবেন এবং তার রিজিক বাড়িয়ে দেবেন। কিন্তু এর ভিন্ন কোনো উদ্দেশ্য থাকলে সেটি আর এস্তেগফার হবে না।
হাদিস শরিফে আছে- লা হাউলা ওয়ালা কুওয়্যাতা ইল্লাবিল্লাহ- এটি জান্নাতের ভাণ্ডারগুলোর একটি। এটি দৈনিক ১০০ বার পড়তে হবে। যে কোনো দরুদ শরিফ ১০০ বার পড়লে ১০০টি রহমত পাওয়া যায়। শুদ্ধ করে দরুদ শরিফ পড়তে হবে। অশুদ্ধ দরুদ শরিফ পড়লে হবে না। কেউ ১ হাজার বার দরুদ শরিফ পড়লে ১ হাজার নেকি পাবে, তার ১ হাজার গুনাহ মাফ হবে এবং সে ১ হাজার প্রমোশনও পাবে।

আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘তোমরা আমাকে স্মরণ করো, আমি তোমাদের স্মরণ করব। ’ লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু জিকিরের মানে হচ্ছে, লা ইলাহা বলার সময় মনে করতে হবে, আমি দুনিয়ার সবকিছু আমার হৃদয় থেকে বের করে দিলাম। আর ইল্লাল্লাহ বলার সময় মনে করতে হবে, আমি আল্লাহর সবটুকু ভালোবাসা আমার হৃদয়ে ঢুকিয়ে নিলাম। এ জিকির দৈনিক ৩০০ অথবা ৫০০ বার পড়তে হবে। যে হৃদয়ে আল্লাহর জিকির আছে, সেটি জীবিত হৃদয়, আর জিকিরহীন হৃদয় হলো মৃত হৃদয়ের সমান।

জিকিরকারীকে শয়তান সহজে খারাপ কাজের দিকে নিয়ে যেতে পারে না। জিকিরকারীর হৃদয়ে গুনাহ করার মজা ধীরে ধীরে নষ্ট হয়ে যায়। সে ভালো কাজের দিকে আগ্রহী হতে থাকে। নেকির মজা আস্তে আস্তে বাড়তে থাকে তার। তাকে কুমন্ত্রণা দেওয়ার সময় শয়তান পালিয়ে যায় অনেক দূরে।

আমরা নিজেদের আশপাশের মসজিদগুলোর জিকিরে শামিল হতে পারি। আমাদের সবার উচিত, নিজেদের বাড়িতে ইবাদতের জন্য একটি জায়গা নির্ধারণ করে রাখা। এখন যারা ঘরবাড়ি করেন, তাদের ক’জনই আর ইবাদতের জন্য জায়গা রাখেন আমরা বাড়িতে সবকিছুর জায়গা করতে পারি, আর বাড়ি যিনি করে দিলেন, তার জন্য একটু জায়গা আমাদের হয় না। আমার প্রভুর স্মরণের জন্য একটু জায়গা আমার বাড়িতে হয় না। হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) হাদিস শরিফে বলেন, ‘তোমাদের ঘরকে কবর বানিয়ো না। ’ কবরে যেমন কোনো আমলের সুযোগ থাকে না, তেমনি নিজেদের ঘর আমলহীন বানিয়ো না। যদি নিজেদের ঘর আল্লাহর রহমত দ্বারা পূর্ণ রাখতে চাও, তবে ঘরে নিয়মিত আল্লাহর জিকির করো।

হজরত রাসূলুল্লাহ বলেন, ‘জিকির করতে করতে যে ব্যক্তি নিজের জিহ্বা সতেজ রাখবে, সে হাসতে হাসতে জান্নাতে যাবে।

কেউ যদি কোনো জিকিরই না পারে, সে আল্লাহর ইসমে জাতের জিকির করবে। শুধু আল্লাহ আল্লাহ বলবে। ওই ব্যক্তিই সফল, যার শেষ কথা হবে লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ। সমগ্র পৃথিবীর সবকিছু এক পাল্লায় রাখলে আর আল্লাহ শব্দ এক পাল্লায় রাখলে আল্লাহ শব্দের পাল্লা ভারি হয়ে যাবে। আল্লাহতায়ালা আমাদের তার খুশি হওয়ার মতো জিকির করার তওফিক দান করুন। আমিন।  

বাংলাদেশ সময়: ১১৪৬ ঘণ্টা, জুলাই ১৫, ২০২৪ 
এসআইএস
 

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।