বৃদ্ধকাল অনেকের জন্য শতভাগ সুখকর হয় না। কারো জন্য সুখকর হলেও বেশির ভাগের সময় হয়ে ওঠে তিক্ত ও অসহ্য।
বেশি বয়সীদের বিশেষ মর্যাদা সম্পর্কে রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘আমি কি তোমাদের মধ্যে উত্তম ব্যক্তির সংবাদ দেব না? তারা বলল, হ্যাঁ, আল্লাহর রাসুল (সা.)! তিনি বলেন, তোমাদের মধ্যে ওই ব্যক্তি উত্তম যে দীর্ঘ আয়ু লাভ করে এবং সুন্দর আমল করে। ’ (মুসনাদ আহমাদ, হাদিস : ৭২১২, ইবনে হিব্বান, হাদিস : ৩০৪৩)
অন্য হাদিসে এসেছে, এক ব্যক্তি প্রশ্ন করেছে, হে আল্লাহর রাসুল (সা.)! উত্তম ব্যক্তি কে? তিনি বলেন, যে দীর্ঘ জীবন পেয়েছে এবং তার আমল সুন্দর হয়েছে। সে আবার প্রশ্ন করল, মানুষের মধ্যে নিকৃষ্ট কে? তিনি বলেন, যে দীর্ঘ জীবন পেয়েছে এবং তার আমল খারাপ হয়েছে। (তিরমিজি, হাদিস : ২৩৩০)
এ জন্য বয়োবৃদ্ধ মুরব্বিদের করণীয় হলো বেশি পরিমাণ ইবাদতে লিপ্ত থাকা।
এ সময় প্রবীণদের কারো কারো মেজাজ খিটখিটে থাকে। তাই সর্বদা ইবাদতে মশগুল থাকলে মনের অবস্থা পরিবর্তন হওয়ার রাস্তা খুলে যেতে পারে। জীবনের এই পড়ন্ত দিনগুলোতে বেশি বেশি তাসবিহ-তাহলিল, দোয়া-দরুদ, ইস্তিগফার পাঠ করতে হবে। মহান আল্লাহ বলেন, ‘হে ঈমানদাররা! তোমরা আল্লাহর কাছে তাওবা করো—খাঁটি তাওবা।
আশা করা যায়, তোমাদের রব তোমাদের পাপ মোচন করবেন এবং তোমাদের এমন জান্নাতে প্রবেশ করাবেন, যার পাদদেশে নদী প্রবাহিত, নবী ও তাঁর সঙ্গে যারা ঈমান এনেছে তাদের সেদিন আল্লাহ লাঞ্ছিত করবেন না। তাদের আলো তাদের সামনে ও ডানে ধাবিত হবে। তারা বলবে, হে আমাদের রব! আমাদের জন্য আমাদের আলো পূর্ণ করে দিন এবং আমাদের ক্ষমা করুন; নিশ্চয়ই আপনি সর্ববিষয়ে সর্বক্ষমতাবান। ’ (সুরা : তাহরিম, আয়াত : ৮)
রাসুল (সা.) বলেন, ‘প্রত্যেক বনি আদম ভুলকারী। আর উত্তম ভুলকারী হচ্ছে তাওবাকারীরা।
’ (ইবনে মাজাহ, হাদিস : ৪২৫১)
মুসআব ইবনে সাদ ও আমর ইবনে মায়মুন (রা.) থেকে বর্ণিত, তারা উভয়ে বলেন, সাদ ইবনে আবি ওয়াক্কাস (রা.) তাঁর সন্তানদের নিম্নোক্ত বাক্যগুলো এমনভাবে শিক্ষা দিতেন, যেভাবে মক্তবে শিক্ষক শিশুদের শিক্ষা দেন। আর তিনি বলতেন, রাসুল (সা.) সালাতের পর এগুলো দ্বারা আল্লাহ তাআলার কাছে আশ্রয় প্রার্থনা করতেন—‘আল্লাহুম্মা ইন্নি আউজু বিকা মিনাল জুবনি ওয়া আউজু বিকা মিনাল বুখলি ওয়া আউজু বিকা মিন আরজালিল উমুরি ওয়া আউজু বিকা মিন ফিতনাতিত দুনইয়া ওয়া আজাবিল কাবরি। ’
অর্থ : ‘হে আল্লাহ! তোমার কাছে আমি ভীরুতা থেকে আশ্রয় চাই, তোমার কাছে কৃপণতা থেকে আশ্রয় চাই, তোমার কাছে অতি বার্ধক্যে পৌঁছার বয়স থেকে আশ্রয় চাই এবং তোমার কাছে দুনিয়ার ফিতনা-ফ্যাসাদ ও কবরের শাস্তি থেকে আশ্রয় চাই। ’ (বুখারি, হাদিস : ২৮২২)
এ ছাড়া প্রবীণদের কর্তব্য হলো আত্মীয়-স্বজনদের যথাসম্ভব খোঁজখবর নেওয়া ও দোয়া করা। যেমন—ইবরাহিম (আ.) বৃদ্ধ অবস্থায় তাঁর ছেলে ইসমাঈল (আ.)-এর সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে যান। একসঙ্গে কাবাঘর নির্মাণ করেন এবং তাদের জন্য ও পরবর্তী বংশধরের জন্য দোয়া করেন। (বুখারি, হাদিস : ৩৩৬৪)
মহান আল্লাহ বয়োবৃদ্ধ মুরব্বিদের ছায়া আমাদের ওপর দীর্ঘায়িত করুন।
বাংলাদেশ সময়: ০৭৫১ ঘণ্টা, আগস্ট ২, ২০২৪
এসআই