মানুষ আল্লাহকে ভয় করে, জাহান্নামকে ভয় করে, কবরের আজাবকে ভয় করে। জান্নাতের কামনা করে।
অনেক মানুষকে এ রাতে কবরস্থানেও যেতে দেখা যায়। অনেকের শ্রদ্ধেয় পিতা-মাতা সেখানে চিরনিদ্রায় শায়িত। অনেকের প্রিয়তমা স্ত্রী সেখানে, আছে অনেকের স্নেহের সন্তানও। কারো শোয়ে আছে প্রিয় ভাই, বন্ধু কিংবা অন্য স্বজন। সেই কবরের পাশে দাঁড়িয়ে প্রিয়জনের কথা মনে করে মানুষ কাঁদে। স্বজনদের মাগফিরাতের জন্য, কবরের আজাব মাফের জন্য আল্লাহর কাছে মুনাজাত করে। হজরত আয়েশা (রা.) থেকে বর্ণিত। আল্লাহর নবী (সা.) ইরশাদ করেছেন, ১৪ শাবান দিবাগত রাতে আল্লাহতায়ালা দুনিয়ার নিকটবর্তী আকাশে অবতরণ করেন। বনু কালব গোত্রের ছাগল পালের পশমের সংখ্যার চেয়ে অধিক সংখ্যক লোককে তিনি ক্ষমা করেন। -তিরমিজি
অন্য আরেক হাদিসে আছে, এক রাতে আল্লাহর নবী (সা.) উম্মত জননী হজরত আয়েশা (রা.) কে জিজ্ঞাসা করলেন, তুমি কি জান আজ কোন রাত? আজ মধ্য শাবানের রাত। এ রাতে আল্লাহতায়লা স্বীয় বান্দাদের প্রতি বিশেষ দয়ার দৃষ্টি দেন। ক্ষমাপ্রার্থীদের ক্ষমা করেন। রহমতপ্রার্থীদের রহমত করেন। -শোয়াবুল ঈমান
শবেবরাত উপলক্ষে অনেক মসজিদে বাড়তি আলোকসজ্জা করতে দেখা যায়। আরো দেখা যায় পাড়ার সবার থেকে চাঁদা সংগ্রহ করে তবারকের ব্যবস্থা করতে। যারা এমনটি করে থাকেন তাদের অনেকের সঙ্গে আলোচনা করে জানা গেছে, তারা মনের ভক্তি ও ভালোবাসা থেকে এগুলো করেন। এ রাতে অনেক নতুন মুসল্লি মসজিদে অাসেন। তাদের মেহমানদারির জন্য তবারকের আয়োজন করা হয়। ইসলামি স্কলাররা এ দু‘টি বিষয়ে অবশ্য ভিন্ন মত পোষণ করেছেন। তাদের কথা হলো, সমাজের মানুষের কাছে আলোকসজ্জা হলো বিনোদনের ও উৎসবের অংশ। শবেবরাত যেহেতু কোনো উৎসবের রাত নয়, এ রাত ইবাদতের রাত, মাগফিরাত লাভের রাত; আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের রাত। তাই বিষয় দু’টি সম্পূর্ণ বিপরীত।
অভিজ্ঞতায় দেখা গেছে, মসজিদকে কেন্দ্র করে এমন উৎসবের পরিবেশ ইবাদতের পরিবেশকে বিঘ্নিত করে। তাই এ রাতের আয়োজনে ইবাদতের মেজাজ ও প্রকৃতিকে প্রাধান্য দেয়া উচিৎ হবে বলে তারা মত ব্যক্ত করেছেন।
শবেবরাত উপলক্ষে অনেক বাড়িতে রুটি-হালুয়ার আয়োজন করা হয় এবং তা পাড়া-পড়শীর বাড়িতেও বিলি করা হয়। এ আয়োজনে সামাজিক সম্প্রীতী ও সৌহার্দ্য ফুটে উঠে। তাই অনেকেরই কাছে আয়োজনটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে হয়। আবার অনেকেই মনে করেন, যেহেতু সামনে ইবাদতের রাত। সারারাত জেগে ইবাদত করতে হবে। রাত জাগার একটা বড় পরিশ্রম সামনে আছে, তাই এ দিনে অন্যদিনের চেয়ে বাড়তি কোনো আয়োজনের ঝামেলায় জড়িয়ে দেহ-মনকে ক্লান্ত করা উচিৎ হবে না। রুটি-হালুয়ার মতো সুস্বাদু খাবার খেয়ে তৃপ্তি পেতে চাইলে কিংবা পাড়া-পড়শীর মাঝে খাবার বিলি করতে চাইলে, তা অন্য যেকোনো দিন করা যেতে পারে। অনেকেই আরো অগ্রসর হয়ে বলেন, রাতের ইবাদতের জন্য এ দিনে অন্য দিনের চেয়ে কাজ কমিয়ে দিনের কিছুটা সময় ঘুমিয়ে নেয়া উচিৎ। যেন রাত জাগা সহজ হয়। স্বাচ্ছন্দে ও স্বতস্ফূর্তভাবে ইবাদতে রাত কাটানো যায়।
বাংলাদেশ সময়: ১৮৩৫ ঘন্টা, জুন ০২, ২০১৫
এমএ/