ঢাকা, মঙ্গলবার, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ২৪ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

ইসলাম

হজ আদায়ে রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর দীর্ঘ অপেক্ষা কেন?

মোহাম্মদ মাকছুদ উল্লাহ, অতিথি লেখক, ইসলাম | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৯২১ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ২২, ২০১৫
হজ আদায়ে রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর দীর্ঘ অপেক্ষা কেন?

মহানবী হজরত মোহাম্মদ (সা.) পবিত্র কাবার তত্ত্বাবধায়ক পরিবারে জন্মগ্রহণ করেছিলেন। তাকে কেন্দ্র করেই এ বিশ্ব জগতের সৃষ্টি।

তার পরও তাকে হজ আদায়ের জন্য অপেক্ষা করতে হয়েছিল সুদীর্ঘ ছয় দশক। এমনকি নবুওয়ত লাভের পরও হজ আদায়ে প্রিয় নবী (সা.)-এর ইচ্ছাপূরণ হতে সময় লেগেছে বাইশ বছর। কারণ আল্লাহতায়ালা চাননি তার হাবীব কুফর আর শিরকের সঙ্গে মিতালী করে নিজের বাসনাকে পূরণ করুক।

যদিও হজের প্রথা প্রচলিত ছিল সেই আদিকাল থেকে। কিন্তু আল্লাহর ঘর পবিত্র কাবায় মুশরিকদের মুর্তির উপস্থিতি, হজ পালনের নামে নানাবিধ অনাচার আর শ্রেণী বৈষম্যের মাঝে আল্লাহর রাসূল হজ পালন করলে তা বাহ্যত খোদাদ্রোহীদের কর্মকাণ্ডকে অনুমোদন দেওয়া হয়। অষ্টম হিজরিতে মক্কা বিজয়ের সময় কাবাঘরের অভ্যন্তরে থাকা মূর্তিগুলো আল্লাহর রাসূল (সা.) কর্তৃক অপসারিত হলেও পবিত্র নগরী তখনও শিরকমুক্ত হয়নি। ওই সময়ও সীমিত সংখ্যত মুসলমান, কাফের ও মুশরিক একত্রে হজ পালন করত। কাফের-মুশরিকরা তাদের চিরায়ত প্রথা অনুযায়ী উলঙ্গ হয়ে কাবাঘরের তওয়াফ করত এবং সাফা-মারওয়ায় স্থাপিত ইসাফ ও নায়েলা মুর্তিদ্বয়ের সিজদা করত। আর মুসলমানরাও তাদের পাশাপাশি হজ করতেন। যে কাবাকে মহান আল্লাহ সৃষ্টি করেছেন তাওহিদের কেন্দ্রবিন্দু হিসেবে সেই কাবাকে কেন্দ্র করে কুফর আর শিরকের আস্ফালন। এর অবসান জরুরি ছিল। জরুরি ছিল হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর হজ আদারের তামান্না পূরণের জন্য এবং তাওহিদের উৎসভূমিকে শিরক আর কুফরের ছায়া থেকে চিরতরে মুক্ত করার। আর তার জন্য সময়ও এসে গিয়েছিল।

এ মর্মে আল্লাহতায়ালা তার রাসূল (সা.)-এর আগমনের জন্য সমগ্র বিশ্ববাসীর হেদায়েত ও নিরাপত্তার কেন্দ্রবিন্দু খানায়ে কাবা ও মক্কাকে পবিত্র করার চুড়ান্ত ঘোষণাসহ নির্দেশ জারি করলেন। ইরশাদ হলো, ‘আল্লাহ এবং আল্লাহর রাসূলের পক্ষ থেকে ওই সমস্ত মুশরিকদের সঙ্গে সম্পর্কচ্ছেদ করা হলো, যাদের সঙ্গে তোমরা চুক্তিবদ্ধ হয়েছিলে। সুতরাং তোমরা পরিভ্রমন করতে থাক এই পবিত্র জনপদে আগামী চারমাস। আর জেনে রেখ যে, তোমরা আল্লাহকে পরাভূত করতে পারবে না এবং আল্লাহ নিশ্চয়ই কাফেরদেরেকে লাঞ্চিত করবেন। আর আল্লাহ এবং তার রাসূলের পক্ষ থেকে বড় হজের দিনে (আরাফার দিনে) জনসাধারণে প্রতি বিশেষ ঘোষণা দেওয়া হচ্ছে যে, আল্লাহ এবং তার রাসূল মুশরিকদের থেকে সম্পূর্ণ দায়িত্বমুক্ত। অতএব তোমরা যদি তওবা করে নাও তাহলে সেটা তোদের জন্যেই মঙ্গলজনক হবে। কিন্তু যদি মুখ ফিরিয়ে নাও তাহলে জেনে রেখ, তোমরা আল্লাহকে পরাভূত করতে পারবে না। আর কাফেরদের মর্মান্তিক শাস্তির সংবাদ শুনিয়ে দাও। কিন্তু যে সব মুশরিকদের সঙ্গে তোমরা নির্দিষ্ট সময়ের জন্যে নিরাপত্তা চুক্তি করেছ আর তারা তোমাদের সঙ্গে কৃত চুক্তির ব্যাপারে কোনো অন্যথা করেনি বা তোমাদের বিরুদ্ধে কাউকে সাহায্যও করেনি তাদের সঙ্গেকৃত চুক্তিকে মেয়াদ পর্যন্ত পূরণ কর। নিশ্চয়ই আল্লাহ মুত্তাকিদেরকে ভালোবাসেন। -সূরা তওবা

নবম হিজরিতে রাসূলে কারিম (স.) হজরত আবু বকর (রা.) কে আমিরে হজ নিয়োগ করে মুসলমানদের এক বিরাট জামাতকে হজ আদায়ের উদ্দেশ্যে প্রেরণ করেন। আসল উদ্দেশ্য ছিল সমগ্র পৃথিবীর হেদায়েত ও নিরাপত্তার কেন্দ্রবিন্দু পবিত্র কাবা ও মক্কাকে শিরক মুক্তির ঘোষণা দেওয়া। হজের আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন করার পর হজরত আলী (রা.)-এর দারাজ কন্ঠে সূরা তওবায় বর্ণিত আল্লাহর জারিকৃত ফরমান ঘোষিত হলো। মহান আল্লাহর প্রেম আর পরাক্রমের মিশেল ঘোষণা সমগ্র আরব ভূখণ্ডে ছড়িয়ে পড়ল। দলে দলে মানুষ ইসলাম গ্রহণ করতে লাগল। নির্ধারিত সময়ের আগেই আরব ভূখণ্ড শিরকমুক্ত হলো। আর পরের বছর রাসূলে কারিম (সা.) তার জীবনের প্রথম এবং শেষ অর্থাৎ একমাত্র হজটি আদায় করেন এবং তাওহিদি জনতার এক বিশাল সমাবেশে ঐতিহাসিক বিদায় হজের ভাষণ প্রদান করেন।

আল্লাহর রাসূলকে শিরকমুক্ত হজ আনুষ্ঠানিকতার জন্য সুদীর্ঘ ছয়টি দশক অপেক্ষা করতে হয়েছিল। আর আজ মুশরিকমুক্ত ভূখণ্ডে যদি শিরকি আকিদা নিয়ে কেউ হজের আনুষ্ঠানিকতা পালন করে, তা হলে সেটা কি হবে মোহাম্মাদি হজ না ইসলামের মোড়কে মুশরিকি হজ। আর এমন হজের বিনিময় মহান আল্লাহর পরাক্রমের বিরুদ্ধে দাঁড়িয়ে নিজেকে নরকে ঠেলে দেওয়া ছাড়া আর কিছু নয়! 

লেখক: ইমাম ও খতিব, রাজশাহী কলেজ কেন্দ্রীয় মসজিদ
 


বাংলাদেশ সময়: ১৯২১ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ২২, ২০১৫
এমএ/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।