আগামী ৮ জানুয়ারি টঙ্গির তুরাগ নদীর তীরে শুরু হচ্ছে তাবলিগ জামাতের বিশ্ব ইজতেমা। এখন পুরোদমে চলছে ইজতেমার মাঠ প্রস্তুতির কাজ।
তবে সবকিছু ছাপিয়ে আলোচনায় এবারের ইজতেমার ধারা বিন্যাস। এবার থেকে শুরু হচ্ছে নতুনধারার বিশ্ব ইজতেমা।
এবারের বিশ্ব ইজতেমা ৮ জানুয়ারি প্রথম দফায় শুরু হয়ে ১০ জানুয়ারি দুপুরে আখেরি মোনাজাতের মধ্য দিয়ে শেষ হবে। এরপর ৪ দিন বিরতি দিয়ে দ্বিতীয় দফার ইজতেমা ১৫ জানুয়ারি শুরু হয়ে ১৭ জানুয়ারি আখেরি মোনাজাতের মাধ্যমে শেষ হবে।
বিগত কয়েক বছরের মতো বিশ্ব ইজতেমা এবার দুই পর্বে হলেও তাতে সব জেলার মানুষ অংশ নিতে পারবে না। আগামী বিশ্ব ইজতেমায় অংশ নেবেন মাত্র ৩২ জেলার মুসল্লি। বাকি ৩২ জেলার মুসল্লিরা ইজতেমায় অংশ নেবেন পরের বছর।
ইজতেমায় আগত মুসল্লিদের দুর্ভোগ লাঘব, টঙ্গিতে মানুষের চাপ কমানো ও ইজতেমার মূল লক্ষ্য তাবলিগের কাজকে আরও গতিশীল করার জন্য দেশের বিভিন্ন জেলায় আঞ্চলিকভাবে ইজতেমা করার সিদ্ধান্ত হয়। তাবলিগ জামাতের শীর্ষ পর্যায় থেকে এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
শুরার সিদ্ধান্ত মতে এবার দেশের ৩২টি জেলায় আঞ্চলিক ইজতেমা করার সিদ্ধান্ত হয়। বাকী ৩২ জেলার তাবলিগের সাথীদের নিয়ে দু’দফায় (১৬ জেলার মুসল্লিদের নিয়ে) বিশ্ব ইজতেমা আয়োজন করা হবে বলে জানানো হয়।
কাকরাইলের শুরার সিদ্ধান্ত মতে যেসব জেলায় এবার আঞ্চলিক ইজতেমা হবে, ওই সব জেলার মুসল্লিরা এবার ইজতেমায় অংশ নিতে পারবেন না। ইতোমধ্যে বেশ কয়েকটি জেলার ইজতেমা সম্পন্ন হয়েছে।
এবার যে ৩২ জেলার মুসল্লিরা ইজতেমায় অংশ নেবেন, তারা ২০১৭ সালের ইজতেমায় অংশ নিতে পারবেন না। প্রত্যেক পর্বে মাত্র ১৬ জেলার মুসল্লিরা অংশ নেবেন।
এবারের ইজতেমার প্রথম পর্বে অংশ নেবেন- ঢাকা জেলার একাংশ, নারায়ণগঞ্জ, শেরপুর, মাদারীপুর, সিরাজগঞ্জ, নাটোর, গাইবান্ধা, নীলফামারী, পঞ্চগড়, লক্ষ্মীপুর, সিলেট, নড়াইল, মাগুরা, চট্টগ্রাম, পটুয়াখালী, ভোলা ও ঝালকাঠির মুসল্লিরা।
দ্বিতীয় পর্বে অংশ নেবেন ঢাকা জেলার একাংশ, নেত্রকোনা, ফরিদপুর, জামালপুর, নরসিংদী, রাজশাহী, কুড়িগ্রাম, বগুড়া, ঠাকুরগাঁও, ফেনী, কুমিল্লা, সুনামগঞ্জ, খুলনা, ঝিনাইদহ, চুয়াডাঙ্গা ও পিরোজপুরের মুসল্লিরা।
২০১৭ সালে ইজতেমায় অংশ নিবেন- কক্সবাজার, বান্দরবান, রাঙামাটি, খাগড়াছড়ি, নোয়াখালী, চাঁদপুর, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, মৌলভীবাজার, হবিগঞ্জ, কিশোরগঞ্জ, ময়মনসিংহ, টাঙ্গাইল, গাজীপুর, মানিকগঞ্জ, ফরিদপুর, শরীয়তপুর, গোপালগঞ্জ, রংপুর, লালমনিরহাট, কুড়িগ্রাম, দিনাজপুর, চাঁপাইনবাবগঞ্জ, নওগাঁ, পাবনা, জয়পুরহাট, যশোর, মেহেরপুর, কুষ্টিয়া, বাগেরহাট, সাতক্ষীরা, বরিশাল ও বরগুনা জেলার মুসল্লিরা।
ইজতেমায় প্রতিবছর ২০ লাখের বেশি মুসল্লির সমাগম হয়। আখেরি মোনাজাতের দিন এ সংখ্যা দ্বিগুণ হয়, যা টঙ্গির তুরাগ নদের তীরের ১৬০ একরের ইজতেমা ময়দানের ধারণক্ষমতার চেয়ে কয়েকগুণ বেশি।
১৯৬৭ সাল থেকে নিয়মিত ইজতেমা অনুষ্ঠিত হচ্ছে। চাপ কমাতে ২০১১ সাল থেকে দুই পর্বে ইজতেমা আয়োজন করা হচ্ছে।
তাবলিগ জামাতের উদ্যোগে প্রতিবছর এ ইজতেমা অনুষ্ঠিত হয়। ইজতেমায় দেশি মুসল্লি ছাড়াও ইউরোপ, আমেরিকা ও মধ্যপ্রাচ্যসহ বিশ্বের প্রায় সব মুসলিম দেশ থেকেই তাবলিগ জামাতের সাথীরা অংশ নেন।
ইজদেমায় আগদ মুসল্লিরা এখানে তাবলিগ জামাতের শীর্ষ আলেমদের বয়ান শোনেন এবং দাওয়াতে তাবলিগের কাজ বিশ্বব্যাপী পৌঁছে দেওয়ার জন্য একত্রিত হয়ে জামাত নিয়ে বেরিয়ে পড়েন। এবার দুই পর্বের ইজতেমা থেকে দুই পর্বে বিভিন্ন মেয়াদে ৪ হাজারের মতো জামাত বের করার লক্ষ্য নিয়ে ইজতেমা অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে।
প্রতিবছরের মতো এবারও সম্পূর্ণ স্বেচ্ছাশ্রমের ভিত্তিতে স্কুল-কলেজ ও মাদরাসার শিক্ষার্থী, কলকারখানার শ্রমিক-মালিকসহ বিভিন্ন পেশার মানুষ ইজতেমা মাঠে প্রস্তুতির কাজে সহায়তা করছেন।
বাংলাদেশ সময়: ১৮০০ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২৯, ২০১৫
এমএ/