ঢাকা, মঙ্গলবার, ১ মাঘ ১৪৩১, ১৪ জানুয়ারি ২০২৫, ১৩ রজব ১৪৪৬

ইসলাম

সাবধান! শিশুদের কষ্ট দিবেন না

মুহাম্মদ ইকরামুল ইসলাম, অতিথি লেখক, ইসলাম | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৫৩৭ ঘণ্টা, জানুয়ারি ৭, ২০১৬
সাবধান! শিশুদের কষ্ট দিবেন না

একটি মানবশিশু একটি পুষ্পতুল্য। পুষ্প যেমন পবিত্র, প্রতিটি শিশু পুষ্পের ন্যায় পবিত্র এবং কলুষমুক্ত।

পুষ্প প্রস্ফুটিত হয়ে সে তার সৌরভ-সৌন্দর্যে মানুষকে মুগ্ধ করে। শিশুরাও বড় হয়ে জ্ঞানে-গুনে সমৃদ্ধ হয়ে পৃথিবীকে আলোকিত ও সমৃদ্ধ করে।
 
মহানবী হজরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের জীবনের প্রতিটি প্রেক্ষাপট ও পদক্ষেপ তাৎপর্যপূর্ণ এবং উম্মাতের জন্য অনুসরণীয়। তার আখলাক-চরিত্র ছিল কালিমামুক্ত। কথাবর্তা ছিল হৃদয়কাড়া মাধুর্যপূর্ণ। জ্ঞানে-গুণে, চরিত্র-বিহ্বলে দুনিয়ার অন্য কাউকে তার সঙ্গে তুলনা করা যায় না। শিশুদের প্রতিও ছিল তার অগাধ স্নেহ ও ভালোবাসা।

নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম শিশুদের খুব আদর করতেন।   অন্যদের তুলনায় এ নিষ্পাপ শিশুরা তার নিকট অধিক প্রিয়পাত্র ছিল। জীবনের কঠিন মুহূর্তেও তিনি তাদের কথা মনে রাখতেন। স্নেহমাখা চাদরে তিনি সর্বদা তাদের ঢেকে রাখতেন। হৃদয়ের সবটুকু ভালোবাসা দিয়ে তাদের খুশি করার ও আনন্দ দেওয়ার চেষ্টা করতেন। দুঃখ ও কষ্টের কারণে কোনো শিশুর চোখ থেকে  অশ্রুফোঁটা গড়িয়ে পড়ুক, এটা তিনি মেনে নিতে পারতেন না। তাদের দুঃখ-কষ্ট এবং ব্যথা ও বেদনা তাকে ভীষণ ভাবিয়ে তুলতো।

বিশ্বনবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম শিশুদের ছোটাছুটি ও  খেলাধুলা দেখে বড্ড আনন্দ পেতেন, খুশি হতেন। অবুঝমনা শিশুদের খামখিয়ালিপনা কাজে অন্যরা রাগান্বিত হলেও তিনি কখনও বিরক্তবোধ করতেন না। নামাজরত অবস্থায় শিশুরা তার সঙ্গে খেলা করতো। এমনকি তার কোলে পেশাব করে দিতো। তখনও মহামানব নীরব। বিরক্তি বা অসন্তুষ্টির কোনো আভা তার চেহারায় প্রকাশ পেতো না।   শিশুদের সঙ্গে তার বন্ধুসুলভ ও প্রীতিপূর্ণ আচরণ দেখে অন্যরা ঈর্ষান্বিত হত, অবাক চোখে চেয়ে চেয়ে দেখতো এবং বিস্মিত হত। তিনি সফর থেকে ফিরে এসে কলিজার টুকরো শিশু ফাতেমার সঙ্গে আগে দেখা করতেন। যখন মদিনায় প্রবেশ করতেন, কোনো শিশুকে দেখতে পেলে নিজের বাহনে তুলে নিতেন। ‍

হিজরতের সময় মদিনার ছেলে-মেয়েরা ভালোবেসে খুশির গজল গেয়ে অভ্যর্থনা জানিয়ে নবী মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বরণ করে নেয়। শিশু-মনের ভালোবাসায় তিনি মুগ্ধ হন। উট থেকে নেমে এসে সকলের হাত ধরে মৃদু হেসে বললেন, তোমরা কি আমাকে ভালোবাস? তারা একসঙ্গে বলে উঠলো, নিশ্চয়! নিশ্চয়! হে আল্লাহর রাসূল! আমরা আপনাকে অনেক ভালোবাসি। তখন তিনি তাদের চিবুক ধরে মুখে মধুর হাসির রেখা টেনে বললেন, আমিও তোমাদের ভালোবাসি।

যায়েদের পুত্র শিশু উসামাকে তিনি তেমনই ভালোবাসতেন যেমন ভালোবসতেন শিশু হাসান ও হোসাইনকে। এত ভালোবসতেন যে, নিজের হাতে তিনি উসামার নাকের ময়লা পরিষ্কার করে দিতেন। একদিন নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম শিশু উসামাকে এক হাঁটুতে এবং শিশু হাসানকে অন্য হাঁটুতে বসিয়ে এই দোয়া করলেন- হে আল্লাহ! আমি এদের ভালোবাসি, তুমিও এদের ভালোবাস। -সহিহ বোখারি শরিফ

নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের অনুপম আদর্শ তিনি তার সাহাবাদের শিক্ষা দিয়ে গেছেন। সাহাবিদের জীবনে নববী এ আদর্শ পরিলক্ষিত হয়। একদিন এক লোক হজরত মুয়াবিয়া রাজিয়াল্লাহু অানহুর বাড়িতে যেয়ে দেখতে পায় যে, একটি শিশু খলিফার গলায় রশি লাগিয়ে টানছে। আর খলিফা চার হাত পায়ে হাম্বা হাম্বা করে শিশুটির পিছনে চলছেন। ফলে শিশুটি খিলখিলিয়ে হাসছে। এ অদ্ভূত দৃশ্য দেখে লোকটি অবাক হয়ে বললো, হে খলিফাতুল মুসলিমিন! আপনার এ কি কাণ্ড! হজরত মুয়াবিয়া রাজিয়াল্লাহু আনহু লোকটিকে ধমক দিয়ে বললেন, চুপ করো! শিশুদের আদর করা এবং আনন্দ দেওয়া আমরা নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছ থেকে শিখেছি। তিনি আমাদের বলেছেন, শিশুদের সঙ্গে তোমরা শিশুর মতো খেলা করবে, যাতে তারা আনন্দ পায়।
 
হজরত রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের এ আদর্শ শুধু যে মুসলমান এবং মুসলিম শিশুদের জন্যই সীমাবদ্ধ তা কিন্তু নয়। তিনি তো জগদ্বাসীর জন্য রহমতস্বরূপ। বিশ্ব মানবতার মুক্তির দূত। তার আদর্শ কি কখনও কোনো জাতিকেন্দ্রিক হতে পারে! মুসলিম-অমুসলিম সকলে তারই উম্মত। আর তিনি সবার জন্য নবীয়ে রহমত। তাই মুসলিম-অমুসলিমের কোনো ভেদাভেদ ছিল না তার কাছে। সব শিশুর প্রতি তার ছিল অকুণ্ঠ স্নেহ, ভালোবাসা, সমান মায়া-মমতা। শিশু তো শিশুই। সকলে পূতঃপবিত্র, নিষ্পাপ ও কলুষমুক্ত। যুদ্ধক্ষেত্রে কঠিন মুহূর্তেও তিনি এ শিশুদের কথা ভুলতেন না। তখনও তিনি তাদের কথা মনে রাখতেন। পুষ্পতুল্য শিশুদের প্রতি কোনো সহিংস ব্যবহার যেন না করা হয়- এ জন্য তিনি যুদ্ধযাত্রার শুরুতে যথাযথ দিক নির্দেশনা দিয়ে দিতেন।

শিশুদের প্রতি ইসলাম ও নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের এমন আচরণ ও দৃষ্টিভঙ্গির পরও কিন্তু হাল সময়ে শিশুদের প্রতি জঘন্য আচরণ করা হয়। এমন পাশবিকতা কোনো অবস্থাতেই সমর্থনযোগ্য নয়। এগুলো অত্যন্ত ঘৃণ্য কাজ।

সাম্প্রতিককালে চাঞ্চল্যকার কিছু শিশু হত্যার খবরে দেশবাসী হতবাক হয়েছেন। দেশের প্রতি এমন আচরণ প্রত্যাশিত নয়। এই শিশুরা দেশ ও জাতির ভবিষ্যৎ কর্ণধার। তারা বেঁচে থাকলে, যোগ্য হয়ে গড়ে উঠলে- দেশ ও জাতি সমৃদ্ধশীল হবে। দেশের মানুষ উপকৃত হবে। তাই তাদেরকে নিরাপত্তার সঙ্গে যোগ্য করে গড়ে তোলার ব্যবস্থা সুনিশ্চিত করতে হবে।

হজরত রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সাহাবিদের সতর্ক করে বলতেন, সাবধান! কোনো শিশুকে হত্যা করো না। ছোটদের কষ্ট দিও না। তারা তো নিষ্পাপ। ছোটদের যারা কষ্ট দেয় আল্লাহ তাদের প্রতি অসন্তুষ্ট হন। কোনো শিশুর মৃতদেহ দেখলে তিনি শোকে কাতর হয়ে পড়তেন। দুঃখ ও বেদনায় তার চেহারা মলিন হয়ে যেতো। অশ্রুসিক্ত নয়নে তাই তিনি বলতেন, মনে রেখো, সমস্ত শিশুকে আল্লাহ ফিতরাতের ওপর সৃষ্টি করেছেন। অর্থাৎ সব শিশুকে তার হৃদয়ে ইমানের নূর নিয়ে দুনিয়াতে আসে। কিন্তু পিতামাতার কারণে সে ইহুদি-খ্রিস্টান বা বিধর্মী হয়ে ইসলাম থেকে দূরে সরে যায়।

বাংলাদেশ সময়: ১৫৩৮ ঘণ্টা, জানুয়ারি ০৭, ২০১৬
এমএ                                     

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।