আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি মানুষের প্রতি সদয় নন, আল্লাহও তার প্রতি সদয় নন। ’ –সহিহ বোখারি ও মুসলিম
ইতিহাসের দিকে তাকালে দেখা যায়, মানুষই মানুষের প্রতি সবচে’ বেশি অত্যাচার চালিয়েছেন, নির্দয়ভাবে এক অন্যকে হত্যা করেছেন।
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আল্লাহতায়ালার পক্ষ থেকে আগত রহমাতুল্লিল আলামিন। তিনি পথ বাতলিয়েছেন; কীভাবে এ অশান্তময় পৃথিবী শান্তির আবাসভূমিতে পরিণত হবে। জগৎকে শান্তির আবাসভূমিতে পরিণত করতে সবার ঊর্ধ্বে প্রয়োজন মানুষকে মানুষের ভালোবাসা, একে অপরের প্রতি সদয় হওয়া। একে অপরের প্রতি সদয় হলেই আল্লাহর করুণাধারা নেমে আসবে অশান্ত ধরণীকে শান্ত শীতল করতে।
দয়া প্রদর্শনকারী মুমিন ব্যক্তিকে আল্লাহতায়ালা দুনিয়া ও আখেরাতে দয়া করবেন। আমাদের বড় দায়িত্ব দুর্দশাগ্রস্ত মানুষের সাহায্য করা, তাদের পাশে দাঁড়ানো। মানুষের প্রতি সদয় হওয়ার ব্যাপারে হাদিসে মুসলিম-অমুসলিমদের মধ্যে কোনো রূপ পার্থক্য করা হয়নি।
মানুষ হিসেবে অপর যে কোনো মানুষের প্রাতি দয়া করা বিশ্বাসীদের কর্তব্য। বিপন্ন ও বিপদগ্রস্ত মানুষের সাহায্য করার জন্য আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ঈমানের শর্ত শুধু আরোপ করেননি। তিনি তা তার কাজের মধ্য দিয়ে দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন।
একবার এক ব্যক্তি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের দরবারে হাজির হয়ে তার গোত্রের লোকজনের আর্থিক অভাব-অনটন দূর করার জন্য অনুরোধ করলেন। আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একপাল ছাগল তাকে ও তার গোত্রের লোকজনদের দান করলেন। আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের মহানুভবতার ফলে গোত্রের সবাই ইসলাম কবুল করলেন। রহমকারী হোক সে মানুষের প্রতি বা হোক তা আল্লাহর সৃষ্ট অন্য কোনো জীব সবার প্রতি দয়া প্রদর্শন করা মুমিনের কর্তব্য। এমন রহমকারীদের প্রতি রয়েছে আল্লাহর পক্ষ থেকে সুখবর।
হাদিসে ইরশাদ হয়েছে, হজরত আবদুল্লাহ বিন আমর রাজিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, রহমকারীদের প্রতি পরম রহমশীল রহম করেন, তোমরা দুনিয়াবাসীর প্রতি রহম করো, আসমানে অবস্থানকারী তোমাদের রহম করবেন। -আবু দাউদ ও তিরমিজি
দুনিয়াবাসীর প্রতি রহম করার অর্থ শুধু মানুষ পর্যন্ত সীমিত নয়, মানুষকে অবশ্যই দয়া প্রদর্শ করতে হবে এবং সেই সঙ্গে দুনিয়ায় অবস্থানকারী সব সৃষ্টিজীবের প্রতিও দয়া প্রদর্শন করতে হবে।
সৃষ্টিজীবের প্রতি দয়া প্রদর্শনে আল্লাহতায়ালা খুশি হন। কারণ পুরো সৃষ্টিজীব আল্লাহর পরিবারভুক্ত। এ প্রসঙ্গে হাদিসে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রাসূল ইরশাদ করেন, মাখলুক আল্লাহর পরিবার। সুতরাং আল্লাহ তামাম মাখলুকের মধ্যে তাকে অধিক মহব্বত করেন, যে তার পরিবার-পরিজনের প্রতি ভালো ব্যবহার করেন। পরিবার-পরিজনের প্রতি উত্তম আচরণের অর্থ হলো- তাদের প্রতি কর্কশ ব্যবহার না করা, দয়া ও রহম প্রদর্শন করা, তাদের ত্রুটি-বিচ্যুতি ক্ষমা করা। তাদের প্রয়োজন পূরণ করা ও তাদের ভালো আখলাক এবং ভালো আমল শিক্ষা দান করা।
সর্বাপেক্ষা ঘনিষ্ঠ ব্যবহার পাওয়ার প্রথম হক পবিরারের সদস্যরা, পরে অন্যরা। একবার রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে জিজ্ঞাসা করা হলো- ইয়া রাসূলুল্লাহ! সর্বাপেক্ষা ঘনিষ্ঠ ব্যবহার পাওয়ার যোগ্য কে? রাসূলুল্লাহ (সা.) বললেন, তোমার বাবা-মা, তোমার ভাই-বোন এবং এর সাথে তোমার সেই গোলাম, যে তাদের সাথে সংশ্লিষ্ট রয়েছেন। এসব হচ্ছে ওয়াজিব হক এবং নিকটাত্মীয়দের সাথে ঘনিষ্ঠতা অবশ্যই রক্ষা করতে হবে।
আজ সমাজে যখন এত হানাহানি, এত রক্তপাত, এত অস্থিরতা; তখন মানুষের উচিত রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের পথ অনুসরণ করা। তবেই আমরা শান্তির সুফল ভোগ করতে পারবো।
আল্লাহতায়ালা আমাদের তওফিক দান করুন। আমিন।
বাংলাদেশ সময়: ১৫৫৮ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১২, ২০১৬
এমএ