ঢাকা, শুক্রবার, ৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২২ নভেম্বর ২০২৪, ২০ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

ইসলাম

বিশ্ব ইজতেমার আখেরি মোনাজাতের অনুবাদ

মুফতি এনায়েতুল্লাহ ও কাজী আবুল কালাম সিদ্দীক | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৪৫৮ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১৭, ২০১৬
বিশ্ব ইজতেমার আখেরি মোনাজাতের অনুবাদ ছবি: বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

রোববার (১৭ জানুয়ারি) সকালে সেই টঙ্গীর বিশ্ব ইজতেমার ময়দান ও এর আশপাশের এলাকার শুষ্ক মাটি ভিজেছে লাখো মুসল্লির চোখের পানিতে। তুরাগ নদীর ছলাৎ ছলাৎ ঢেউয়ে গিয়ে মিশেছে মুসল্লিদের চোখের নোনাজল।

খোদার দরবারে হাজারো ফরিয়াদ জানিয়ে ইজতেমার আখেরি মোনাজাত শেষ হয়েছে। এ সময় সৃষ্টিকর্তা মহান আল্লাহ তায়ালার কাছে বিশ্ব উম্মাহর সুখ, শান্তি ও সমৃদ্ধি প্রত্যাশা করা হয়।

বেলা ১১টা ০৫ মিনিটে মোনাজাত শুরু হয়ে ১১টা ৩৩ মিনিটে শেষ হয়। ২৮ মিনিট স্থায়ী আখেরি মোনাজাতের প্রথম ১২ মিনিট আরবিতে আল্লাহ তায়ালার প্রশংসা, নবীর (সা.) ওপর দরুদ, কোরআন-হাদিসে বর্ণিত বিভিন্ন আয়াত এবং দোয়াগুলো পাঠ করা  হয়। মোনাজাত চলাকালে ইজতেমাস্থল ও আশপাশের এলাকা কান্নাজড়িত কণ্ঠে ‘আমিন’ ‘আমিন’ ধ্বনিতে প্রকম্পিত হয়ে ওঠে।

মোনাজাত পরিচালনা করেন ভারতের মাওলানা মোহাম্মদ সাদ। এই মোনাজাতের মাধ্যমে শেষ হলো এবারের ৫১তম বিশ্ব ইজতেমা। এতে দেশ-বিদেশের ৩০ লক্ষাধিক ধর্মপ্রাণ মুসল্লি অংশ নিয়েছেন বলে মনে করা হচ্ছে।

মোনাজাতে প্রথম পর্বের মতো দ্বিতীয় পর্বেও লাখো মুসল্লির ঢল নামে। ইজতেমার আখেরি মোনাজাতে অংশ নেওয়া মুসল্লিরা যার যার চাওয়া-পাওয়া নিয়ে ফরিয়াদ জানান আল্লাহর দরবারে। বারবার তওবা-ইস্তিগফার করে আত্মশুদ্ধি, নিজ গুনাহ মাফের পাশাপাশি দুনিয়ার সব বালা-মুসিবত থেকে নিরাপদে থাকার জন্য প্রার্থনা করা হয়।

মোনাজাতে বলা হয়, “হে আল্লাহ! আমাদের গুনাহসমূহ ক্ষমা করে দিন। আমাদের ত্রুটি-বিচ্যুতিগুলো মার্জনা করে দিন। সমুদয় উম্মতে মুহাম্মদীর পাপ মাফ করে দিন। আমরা পাপিষ্ঠ, আমরা অপরাধী, আমরা ভুলে যাই, আমরা ভুল করি; অনুগ্রহ করে আমাদের সব গুনাহ আপনি ক্ষমা করে দিন। আমাদের মা-বাবা, আত্মীয়-স্বজন সকলের গুনাহ মাফ করে দিন। ”

“ও দয়াময় মাওলা! যে কাজের জন্য আপনি আমাদের দুনিয়াতে পাঠিয়েছেন, যে দায়িত্ব আমাদের দিয়েছেন- আমরা সে সব থেকে আজ গাফেল। মেহেরবানি করে আমাদের গাফেলতির পর্দা উঠিয়ে দিন। আমাদের উদাসিনতা বিদূরিত করুন। ”

“হে আল্লাহ! উম্মত আজ দাওয়াতের কাজ থেকে দূরে সরে গেছে, জাগতিক মোহ, নফসের পূজা আর প্রবৃত্তির অনুসরণে লিপ্ত হয়ে পড়েছে। হে আল্লাহ, আপনি আমাদের দ্বীনের সঠিক বুঝ দান করুন। জাগতিক মোহ, নফসের পূজা আর প্রবৃত্তির অনুসরণ থেকে দূরে রেখে আমাদের মূল জিম্মাদারির সঙ্গে জুড়ে থাকার তাওফিক দিন। ”

“হে আল্লাহ! আমাদের ঈমানে পরিপূর্ণতা দান করুন। আপনার সমুদয় নির্দেশ আপনার হাবিবের সুন্নতমতে পালন করার তাওফিক দিন। রাত-দিন, সকাল-বিকেল, দেশে-বিদেশে, জলে-স্থলে যখন-যেখানে আপনার যে হুকুম, তা সঠিকভাবে পালন করার তাওফিক দিন। ”

“হে আল্লাহ! আমাদের ঈমান বাড়িয়ে দিন। ঈমানের দাওয়াতের কাজে ঘর থেকে বের হবার তওফিক দিন। ঈমানের জন্য সাহাবায়ে কেরামের মতো যে কোনো ত্যাগ-তিতিক্ষা, কষ্ট-ক্লেশ সহ্য করার ক্ষমতা ও সামর্থ্য দান করুন। ”

“হে আল্লাহ! আমাদের দুর্বল ঈমানকে আপনি শক্তিশালী করে দিন। দাওয়াতে তাবলিগের ওপর আপনি ঈমানের মজবুতি রেখেছেন- এ কথা সবাইকে বোঝার ও মানার তওফিক দিন। যখন-যেখানে আপনার যে হুকুম রয়েছে সেগুলো নবীর (সা.) মোবারক সুন্নত অনুযায়ী পালন করার হিম্মত বাড়িয়ে দিন। সুন্নতমতে জীবন গড়ার তাওফিক দিন। সুন্নতের দাওয়াত বিশ্বময় ছড়িয়ে দেওয়ার তওফিক দান করুন। বিদয়াত থেকে আমাদের দূরে রাখুন। সুন্নত ও বিদয়াতকে চেনার ও পার্থক্য করার বিবেচনাবোধ দান করুন। ”

“হে আল্লাহ! আমাদের দ্বীনের ওপর অটল, অনড় ও অবিচল থাকার যোগ্যতা দিন, তাওফিক দান করুন। হে আল্লাহ! আমরা মুহতাজ, আপনি বে নায়াজ। আমরা পাপী, আপনি ক্ষমাকারী। আমরা উদাসীন, আপনি আমাদের সতর্ক থাকার তাওফিক দিন। নামাজের পাবন্দি করার তওফিক দান করুন। জিন্দা নামাজ আদায় করার তাওফিক দান করুন। নামাজে খুশ-খুজু দান করুন। জামাতে তাকবিরে উলার সঙ্গে নামাজ পড়ার তাওফিক দিন। আমাদের সব আমল কবুল করুন। ইখলাস দান করুন। অলসতা, বিলাসিতা ও লৌকিকতা থেকে বেঁচে থাকার তওফিক দান করুন। ”

“হে আল্লাহ! আমাদের দাওয়াতের ফরযিয়াত ও অপরিহার্যতার বিষয়ে অবগত থাকার তাওফিক দান করুন। উম্মতের শ্রেষ্ঠত্বের হেতু সম্পর্কে ওয়াকিবহাল করুন। দেশ-বিদেশের আনাচে-কানাচে আপনি দ্বীনের কাজ চালু করে দিন। ”

“হে আল্লাহ! দ্বীনের দাওয়াতে দেশ-বিদেশে যত জামাত কাজ করছে তাদের হিম্মত বাড়িয়ে দিন। কাজে আগে বাড়ার তাওফিক দান করুন। সকল বাধা ও সমস্যা দূর করে দিন। সবার ভেতর দ্বীনের ফিকর দান করুন। ”

“হে আল্লাহ! আমরা সকলেই হেদায়েতের মোহতাজ। আমাদের হেদায়েত দান করুন। সঠিক পথের দিশা দিন। হেদায়েতের লাইনে মেহনত করার তাওফিক দান করুন। হেদায়েতকে আম করে দিন। ”

“হে আল্লাহ! পৃথিবীর সকল ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানকে আপনি কবুল করুন। সব মসজিদ, মাদ্রাসা, খানকাহ, জামাতকে আপনি কবুল করুন। সবাইকে ইখলাসের সঙ্গে দ্বীনের কাজে লেগে থাকার তাওফিক দান করুন। ”

“হে আল্লাহ! যে সব জামাত আপনার রাস্তায় বেরিয়ে যাচ্ছে, তাদের আপনি জিম্মাদার বনে যান। সকল প্রকার নুসরাত ও সাহায্য করুন। আর যারা আপনার রাস্তায় এখনও বের হতে পারেনি তাদের দ্রুত আপনার রাস্তায় বের হওয়ার তওফিক দান করুন। ”

“হে আল্লাহ! যারা অসুস্থ তাদের সুস্থতা দান করুন। যারা বিভিন্ন সমস্যায় পতিত তাদের সমস্যাগুলো দ্রুত সমাধান করে দিন। যারা ঋণগ্রস্ত তাদের ঋণ আদায়ের ব্যবস্থা করে দিন। যারা নিযার্তিত তাদের সহায়তা করুন। ”

“ইয়া হান্নান, ইয়া মান্নান, ইয়া আরহামার রাহিমিন! আপনি পৃথিবীবাসীর ওপর রহম করুন। বেকারদের হালাল রুজির ব্যবস্থা করে দিন। বিবাহযোগ্যদের বিয়ের ব্যবস্থা করে দিন। যারা বিভিন্ন বৈধ বাসনা নিয়ে মোনাজাতে শরিক হয়েছে তাদের সেসব বাসনাগুলোকে আপনি কবুল করুন। ”

“ইয়া আল্লাহ! মেহেরবানি করে আমাদের মোনাজাতকে কবুল করেন। যেভাবে আপনার কাছে চাওয়া দরকার, আমরা সেভাবে চাইতে পারিনি। কিন্তু আপনি অন্তর্যামী, আপনি সবার মনের কথা জানেন, সেটাকেই আপনি কবুল করে নেন। ”

বাংলাদেশ সময়: ১৪৫৩ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১৭, ২০১৬
এমএ/এইচএ

** চোখের পানিতে খোদার দরবারে ফরিয়াদ
** ভোগান্তিতে ঘরে ফিরছেন মুসল্লিরা
** বিভিন্ন সড়কে ইজতেমা ফেরত মুসল্লিদের ভিড়
** ইজতেমার দ্বিতীয় পর্বে এক বিদেশিসহ ৭ মুসল্লির মৃত্যু
** বিশ্ব ইজতেমার আখেরি মোনাজাত চলছে
** আখেরি মোনাজাতের অপেক্ষায় লাখো মুসল্লি
** ইজতেমায় আরো তিন মুসল্লির মৃত্যু
** ইজতেমার দ্বিতীয় পর্বের আখেরি মোনাজাত সকালে
** জায়নামাজ-কম্বলের দোকানে মুসল্লিদের ভিড়

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।