মানুষ সামাজিক জীবন। সামাজিক পরিমণ্ডলে সবার মাঝে বেড়ে ওঠা মানুষের সহজাত প্রকৃতি।
মানবচরিত্রের দু’টি দিক রয়েছে- ভালো ও মন্দ। মানুষের মধ্যে যার যে স্বভাবটি প্রাধান্য পায়, সে সেভাবেই খ্যাতি লাভ করে। যাদের চরিত্রে উত্তম গুণাবলীর সমাবেশ ঘটে সে হয়- স্মরণীয় ও বরণীয়। আর যার চরিত্র মন্দ দোষে দুষ্ট হয় সে হয় ধিকৃত ও পরিত্যাজ্য। মানুষ তার আচার-আচরণের মাধ্যমে স্থান করে নেয় সবার অন্তরে। তার কৃত আচরণ মৃত্যুপরবর্তী সময়েও তাকে তুলে আনে মানুষের স্মৃতিতে। এজন্য অনন্তকালের জন্য মানব মনে স্থান করে নিতে প্রয়োজন উত্তম আচরণ ও সুন্দর ব্যবহার।
কোমলতা উত্তম আচরণের অনন্য বৈশিষ্ট্য। স্বভাবে যে কোমল, আচরণে যে মার্জিত, সে হয় সবার কাছে সমানভাবে স্বীকৃত। স্বভাবের কোমলতা মানুষকে মহীয়ান করে। নম্র ও কোমল আচরণের মনুষকে সবাই ভালোবাসে, সমীহ করে। কোমল আচরণের দ্বারা মানুষের চারিত্রিক মাধুর্যতা প্রকাশ পায়।
শান্তি ও মানবতার ধর্ম ইসলাম মানুষের আচরণ মার্জিত ও ভদ্রোচিত হওয়ার প্রতি জোরালো তাগিদ প্রদান করেছে। মানুষের সীমাবদ্ধতা ও অপারগতার প্রতি দৃষ্টি আকর্ষণ করে ইসলাম মানুষকে ঔদ্ধত্যপূর্ণ আচরণ থেকে বেঁচে থাকার নির্দেশ দিয়েছে।
মানবতার মহান পথ-প্রদর্শক নবী হজরত মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিজে কোমল ও মার্জিত আচরণ করে এর শিক্ষা দিয়েছেন উম্মতকে। তার চারিত্রিক মাধুর্যের কথা প্রবাদতুল্য। তার চরিত্রের অন্যতম বিশেষ ভূষণ ছিল কোমলতা।
মানবতার শ্রেষ্ঠ আসনে আসীন হওয়া সত্ত্বেও তিনি তার কথা, কাজ, ইশারা-ইঙ্গিত তথা আচরণের মাধ্যমে এমন কিছু প্রকাশ করেননি যাতে তার বড়ত্ব প্রকাশ পায়। বরং নম্র, ভদ্র, মার্জিত, কোমল ও মায়াবী স্বভাবের দ্বারা তিনি সবার অন্তর জয় করে নেন।
তিনি নিজেই তার চরিত্রের ব্যাখ্যা দিয়ে বলেন, ‘আমি প্রেরিত হয়েছি চারিত্রিক উৎকর্ষ সাধনের লক্ষ্যে। ’
এ জন্য বাস্তব জীবনে চারিত্রিক শ্রেষ্ঠত্বের প্রয়োগ ঘটিয়ে তিনি মানবতাকে শিক্ষা দিয়েছেন চারিত্রিক উৎকর্ষ কী, চরিত্রের বঞ্চিত ধারা কোনটি? চারিত্রিক কোমলতার উদাহরণে হজরত রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের বর্ণিল জীবন ভরপুর। তার পবিত্র জীবনী পর্যালোচনা করলে অসংখ্য ঘটনার দ্বারা এ কথার প্রমাণ মেলে।
হজরত আনাস (রা.) দীর্ঘ ১০ বছর পর্যন্ত নবীজীর খাদেম ছিলেন। তার মুখের ভাষ্য হচ্ছে, ‘এই সুদীর্ঘ সময়ে কোনোদিন তিনি আমাকে অনুযোগের স্বরে এ কথা বলেননি যে, হে আনাস! তুমি এ কাজটি কেন করেছো বা কেন করোনি?’
সবচেয়ে কাছে থেকে দেখা খাদেমের কথা থেকেই তার মহান চরিত্রের কোমলতার পরিধি কিছুটা নির্ণিত হয়। পরিবার থেকে সমাজ পর্যন্ত সবাই তার কোমল আচরণে ছিল সন্তুষ্ট। তার কোমল আচরণের কারণে কর্কশ, বর্বর, অসভ্য, মরুবাসী আরব জাতির পাথরের মতো শক্ত হৃদয় মোমের ন্যায় গলে গিয়েছিল। তার মহান চরিত্র শোভায় আসক্ত হয়ে ইসলামের আদর্শের কাছে মাথা নত করেছিল তারা।
শেষ নবী হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর আদর্শের সৈনিক সাহাবায়ে কেরাম প্রত্যেকেই ছিলেন এই চরিত্রের অধিকারী। ফলে ইসলাম দুর্বার গতিতে ছড়িয়ে পড়ে। আর ইসলাম ছড়ানোর পেছনে মূখ্য ভূমিকা পালন করে রাসূলের চারিত্রিক উদারতা ও কোমল স্বভাব, কোনো অবস্থাতেই তলোয়ারের জোর নয়।
বাংলাদেশ সময়: ২০৩৭ ঘণ্টা, নভেম্বর ২১, ২০১৬
এমএইউ/