ঢাকা, শনিবার, ৬ বৈশাখ ১৪৩১, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫

ইসলাম

শিশু-কিশোরদের অপরাধ প্রতিরোধে পরিবারের দায়িত্বই বেশি

মুফতি এনায়েতুল্লাহ, বিভাগীয় সম্পাদক, ইসলাম | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৪১৭ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১০, ২০১৭
শিশু-কিশোরদের অপরাধ প্রতিরোধে পরিবারের দায়িত্বই বেশি ইসলাম মানুষের নৈতিক সুরক্ষার্থে কিশোরদের সুন্দর ও নির্মলভাবে লালন ও প্রশিক্ষণ দিয়ে গড়ার কথা বলে

রাজধানীসহ সারা দেশে ভয়ংকর অপরাধে জড়িয়ে পড়ছে কিশোররা। দিন কয়েক আগে রাজধানীর উত্তরায় কয়েক কিশোরের হাতে নিহত হয়েছে আরেক কিশোর। এর আগেও কিশোর অপরাধের ঘটনা ঘটেছে। 

যে সব কাজ প্রাপ্ত বয়স্কদের দ্বারা সংঘটিত হলে অপরাধ হিসেবে গণ্য করা হয়, ওই ধরনের প্রচলিত আইন ভঙ্গকারী কাজ অপ্রাপ্ত বয়স্ক বা কিশোরদের দ্বারা সংঘটিত হলে সেটিকে কিশোর অপরাধ বলা হয়।

বাংলাদেশসহ পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে কিশোর অপরাধ সমস্যা মারাত্মক আকার ধারণ করেছে।

চুরি, হত্যা, আত্মহত্যা, ধর্ষণ, ছিনতাই, পকেটমার, মাদকসেবন ও ইভটিজিং থেকে শুরু করে এমন সব লোমহর্ষক কর্মকাণ্ডের সঙ্গে কিশোররা যুক্ত হচ্ছে- যা অকল্পনীয়।  

কিশোর বয়সের চাহিদা হলো- নিজেকে প্রকাশ করা। আত্মপ্রকাশের চাহিদা তার মাঝে কৌতূহলপ্রিয় করে তুলে। কৌতুহলের বশে নতুন কিছু জানতে চায়, শিখতে চায়। এ স্বতঃস্ফূর্ত আকাঙ্খাকে যদি মাতা-পিতা, শিক্ষক, অভিভাবক সঠিক পথে পরিচালনা করতে পারেন তবে এ ছেলেমেয়েরা ভবিষ্যৎ জীবনে, কর্মক্ষেত্রে, সমাজে সফল মানুষ হয়।

এর বিপরীতে কিশোর বয়সে তাকে নিয়ন্ত্রণ না করলে সে নানাবিধ অন্যায়-অপরাধে জড়িয়ে যায়। অপরাধমুখী কিশোরদের মাঝে অপরাধ প্রবণতা কিছু বেশি থাকে। সুযোগ- সুবিধা পেলে অপকর্ম করার জন্য তারা থাকে উম্মুখ। সামান্য প্রলোভন, আনন্দ ও ক্রোধ তাদেরকে আন্দোলিত করে।  

এ ছাড়া কিশোরদের অপরাধী হওয়ার নেপথ্যে আরও কিছু স্বভাবগত কারণ রয়েছে। যেমন- মাতা-পিতার অযত্ন-অবহেলা, উদাসীনতা, স্নেহহীনতা, সন্তানকে প্রয়োজনীয় ধর্মীয ও নৈতিক শিক্ষাদানে অমনোযোগীতা, পারিবারিক পরিমণ্ডলের ঝগড়া-বিবাদ, দারিদ্র্য, সুষ্ঠু বিনোদনের সঙ্কট, সামাজিক অসাম্য, দুঃখ-দুর্দশা, যথাযথ তদারকির ঘাটতি, অবিচার, আশৈশব দুর্ব্যবহার প্রাপ্তি, কুসংস্কার ও কুসঙ্গ, অতি আদর, আর্থিক প্রাচুর্য ও অনিদ্রার মতো বিষয়গুলো কিশোরদের অপরাধী করে তোলে।  

এ কথা বলার অপেক্ষা রাখে না যে, কোনোমানুষই অপরাধী হয়ে জন্মায় না। পারিবারিক, সামাজিক, অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক ও নানাবিধ কারণে আবেগ ও পরিবেশের নেতিবাচক প্রভাবে মানুষ অপরাধের সঙ্গে জড়িয়ে পড়ে। সুতরাং কিশোর অপরাধীরা পেশাদার অপরাধীদের সঙ্গে কীভাবে যুক্ত হচ্ছে তা অনুসন্ধানপূর্বক প্রতিকারমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ প্রয়োজন।

এ জন্য সবার আগে দরকার গ্রাম, শহর, পাড়া ও মহল্লার সর্বত্র ভালো পরিবেশ বজায় রাখতে শিক্ষিত সজ্জন ও অভিভাবক শ্রেণীর সম্মিলিত প্রয়াস। অধ্যয়ন, সৃজনশীলতা এবং ধর্মীয় ও সামাজিক মূল্যবোধে তাদেরকে উদ্বুদ্ধ করা জরুরি। পরিবার, সমাজ ও স্কুলের পরিবেশ হওয়া দরকার আনন্দময় ও প্রণোদনাপূর্ণ।  

শিশু-কিশোরদের কাদামাটির সঙ্গে তুলনা করা হয়। শিশুরা পরিবার থেকে প্রথমে শেখে। এ কারণে পরিবারকে বলা হয়, মানব জীবনের প্রধান বুনিয়াদ। তাই সুষ্ঠুভাবে শিশু-কিশোরের ব্যক্তিত্ব বিকাশে এবং কিশোর অপরাধ প্রতিরোধে একটি সুসংহত পরিবার এবং পারিবারিক দায়িত্ব অপরিসীম।

বস্তুত কিশোর অপরাধ প্রতিরোধে ধর্মীয় অনুশীলনের প্রয়োজন অনস্বীকার্য। ধর্ম মানব জীবনকে পরিপূর্ণ ও সৌন্দর্যমণ্ডিত করে। পৃথিবী সৃষ্টির শুরু থেকে যুগে যুগে যত ধর্ম এসেছে, যত ধর্মগুরু এসেছেন- সবাই অন্যায়ের বিপক্ষে ন্যায়ের ও মানবতার জয়গান গেয়েছেন। সততা, সাধুতা, সেবা, সংযম, সৌজন্য, সম্প্রীতি, সৌহার্দ্য, সদাচার, দয়া, ক্ষমা, প্রেম, পরোপকার, পরমতসহিষ্ণুতা, বিনয় ও বদান্যতা ইত্যাদি সব ধর্মেরই সারকথা।

সব ধর্মই তার অনুসারীকে শৈশব-কৈশোর থেকে সৎ পথে চলার, সুন্দরভাবে বাঁচার ও সরলপথ অনুসরণ করার তাকিদ দিয়েছে। সুতরাং আশৈশব স্বধর্মের বিশুদ্ধ চর্চা ও যথাযথ অনুশীলন ব্যক্তির অপরাধস্পৃহা অবদমনসহ আত্মশুদ্ধির জন্য সহায়ক।

কিশোর অপরাধ প্রতিরোধে ইসলাম বিশেষ গুরুত্বারোপ করেছে। ইসলামের নির্দেশনা হচ্ছে, প্রথম সাত বছর তাকে (সন্তানকে) মুক্ত রাখ, দ্বিতীয় সাত বছর তাকে শিষ্টাচার (আদব) শিক্ষা দাও এবং তৃতীয় সাত বছর তার সঙ্গে গভীর সম্পর্ক ও ঘনিষ্ঠতা গড়ে তোল।  

ইসলাম অপরাধ সংঘটিত হওয়ার আগেই তাকে অঙ্কুরে বিনষ্ট করতে চায়। এ কারণে ইসলাম মানুষের নৈতিক সুরক্ষার্থে কিশোরদের সুন্দর ও নির্মলভাবে লালন ও প্রশিক্ষণ দিয়ে গড়ার কথা বলে।  

কাঙ্খিত লক্ষে পৌঁছতে শিশুকে ধর্মের বিশুদ্ধ চর্চা ও যথাযথ অনুশীলন শেখাতে হবে। সেই সঙ্গে সুশিক্ষক নিয়োগ এবং কিশোর শিক্ষার্থীদের বয়স, সামর্থ্য ও অভিরুচির প্রতি লক্ষ্য রেখে পাঠ্যপুস্তক প্রণয়ন করা প্রয়োজন। তবে পরিবারের ভূমিকা সবচেয়ে বেশি।  

মনোবিজ্ঞানীদের মতে, কিশোর অপরাধ নিয়ন্ত্রণে সবার আগে পরিবার থেকে উদ্যোগ নিতে হবে। বাবা-মায়ের সঠিক নির্দেশনা পেলে একটি শিশু ছোট থেকেই ভালোভাবে বেড়ে ওঠে। আর পরিবারের সদস্যদের মধ্যে সমস্যা থাকলে তার প্রভাব শিশুটির ওপর পড়তে বাধ্য।

ইসলাম বিভাগে লেখা পাঠাতে মেইল করুন [email protected]

বাংলাদেশ সময়: ২০১৭ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১০, ২০১৭
এমএইউ/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।