মনোবিজ্ঞানীরা বলেন, কোনো কোনো দুঃখ-কষ্ট মানুষকে শক্তিশালী করে ও তার প্রতিভার বিকাশ ঘটায়। কোনো দুঃখ-কষ্ট মানুষের দেহকে শক্তিশালী করে, আবার কোনো কোনো দুঃখ-কষ্ট মানুষের আত্মা বা আধ্যাত্মিক দিকগুলোকে শক্তিশালী করে।
ইসলামি স্কলারদের মতে, আল্লাহতায়ালা মানুষকে নানা ধরণের দুঃখ-কষ্টের মধ্য দিয়ে এবং বিভিন্ন দায়িত্ব দিয়ে তাদের সংগ্রামী ও যোগ্য হিসেবে গড়ে তোলেন। ফলে আরামপ্রিয় কিংবা সুবিধাবাদী লোকদের বিপরীতে এ ধরনের মানুষ কখনও অহংকারী হন না বরং আল্লাহর প্রতি সব সময় নতজানু থাকেন। ওইসব দুঃখ-কষ্ট ও বেদনার মধ্য দিয়েই তাদের ওপর আল্লাহর অনুগ্রহ বিস্তৃত হয়।
তাইতো তারা সংকটের কাছে মাথা নত করতে বলেননি। বরং সংকট মোকাবিলায় দৃঢ়তা এবং ব্যাপক চেষ্টা-প্রচেষ্টা চালানোর কথা বলেছেন। আর ইসলামে স্পষ্টভাবে বলা হয়েছে, কোনো অবস্থাতেই ধৈর্যহীন ও নিরাশ না হতে।
যারা ইহকালীন জীবনের গতি-প্রকৃতি সম্পর্কে সচেতন এবং দুঃখ-বিপদে ভেঙে পড়ে না তারা কখনও হতাশায় কিংবা দুঃখে কাতর হন না। তারা আল্লাহতায়ালার ওপর ভারসা করেন। কারণ, তারা জানেন, সুখ ও দুঃখ, সাফল্য ও ব্যর্থতা দুইই ইহকালীন জীবনের অপরিহার্য অংশ বিশেষ।
আর আল্লাহতায়ালার ওপর ভরসা করা বলতে হাত-পা গুটিয়ে ঘরে বসে থাকাকে বোঝায় না। আল্লাহর ওপর ভরসার অর্থ হলো, যে কাজ যেভাবে করা উচিত সেভাবে সম্পন্ন করার পাশাপাশি আল্লাহর সাহায্য চাওয়া। অন্য কথায়, আল্লাহর ওপর ভরসা চেষ্টা-প্রচেষ্টার পরিপূরক মাত্র, বিকল্প নয়। তদ্রুপ সমস্যা মোকাবিলার ক্ষেত্রেও এর প্রকৃতি ও নানা দিক সম্পর্কে ব্যাপক ধারণা অর্জন করে দৃঢ়তা নিয়ে প্রতিরোধে এগিয়ে যাওয়ার পরই আল্লাহর সাহায্য নেমে আসে।
মহাপুরুষদের জীবনের দিকে লক্ষ্য করলে দেখা যায়, ইস্পাত কঠিন মনোবল, দৃঢ়-সংকল্প নিয়ে সংগ্রাম, কষ্ট সহিষ্ণুতা ও ধৈর্য্য- এসবই তাদেরকে সম্মান ও মর্যাদা এনে দিয়েছে।
ইসলামি স্কলারদের মতে, ‘কষ্ট সহিষ্ণু মানুষ বিজয় থেকে বঞ্চিত হন না, দেরিতে হলেও তার বিজয় অনিবার্য। ’
বস্তুত মানুষের জীবনে দুঃখ-কষ্ট ও সংকট অস্বাভাবিক কোনো বিষয় নয়। বরং আল্লাহতায়ালা মানুষকে পরীক্ষা করা ও প্রতিভার বিকাশ ঘটানোর জন্য দুঃখ-কষ্টে ফেলেন। আর এ জন্যই আল্লাহতায়ালা নবী-রাসূল এবং অলি-আওলিয়াদের বিভিন্ন কঠিন সংকটের মধ্যে ফেলে তাদের বহুমুখি যোগ্যতার বিকাশ ঘটিয়েছেন।
মানব জীবনে সংকট নতুন কিছু। নবী-রাসূলদেরও নানা সংকট মোকাবিলা করতে হয়েছে। যেমন হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘কোনো নবী আমার মতো উৎপীড়িত হননি। ’ শত্রুরা তার মাথার ওপর ময়লা ফেলেছে, যুদ্ধের ময়দানে শত্রুর তরবারির আঘাতে নবী করিম (সা.)-এর পবিত্র চেহারা হয়েছে রক্তাক্ত ও ভেঙে গেছে দাঁত মোবারক, কিন্তু তিনি ধৈর্য হারাননি। সাহাবিরা রাসূলের ওপর শত্রুদের নির্যাতন ও নিপীড়নের তীব্রতা দেখে বলেছেন, ‘আপনি তাদেরকে অভিশাপ দিন যাতে আল্লাহর কঠোর শাস্তি তাদের ওপর নেমে আসে।
জবাবে তিনি বলেছেন, মানুষকে অভিশাপ দেওয়ার জন্য আমার আমাকে নবী হিসেবে নিযুক্ত করা হয়নি, বরং তাদেরকে আল্লাহর দিকে আহ্বান জানানো ও তার অনুগ্রহের দিকে পরিচালনার জন্যই আমাকে রাসূল করা হয়েছে। মানুষের জন্য রহমত হিসেবে আমাকে রাসূল করা হয়েছে। মানুষকে আল্লাহর রহমত থেকে নিরাশ করার জন্য নয়। হে আল্লাহ! তুমি আমার জাতিকে সুপথ দেখাও। কারণ, তারা বুঝতে পারছে না। ’
অভাব-অনটন, অবরোধ, যুদ্ধ ও অন্য অনেক সংকট মোকাবিলায় অবিচল থাকার ফলে শেষ পর্যন্ত বিজয়ী হয়েছিলেন নবী করিম (সা.)। তার দৃঢ়তা ও মহানুভবতায় প্রভাবিত হয়ে বহু মানুষ ইসলাম গ্রহণ করেছে।
নবী করিম (সা.) ও তার সঙ্গীরা ধৈর্য ধরেছিলেন ও আল্লাহর ওপর ভরসা করেছিলেন বলেই বিশ্বের প্রত্যন্ত অঞ্চলে ইসলাম ধর্ম ছড়িয়ে পড়েছিলো।
তাই সংকট মোকাবিলার জন্য দৃঢ়তা জরুরি। জরুরি আল্লাহর ওপর ভরসা। দুঃখ ও বিপদের মোকাবিলায় নবী-রাসূলদের ধৈর্য ও অবিচলতা সব যুগের মানুষের জন্য আদর্শ। মনে রাখতে হবে, কষ্ট ও সুখ এবং পরাজয় ও সাফল্য পরস্পর হাত ধরে চলে পালাক্রমে।
বাংলাদেশ সময়: ২০২৫ ঘণ্টা, ২৭ অক্টোবর, ২০১৭
এমএইউ/