নামগুলো প্রকাশ করছে আল্লাহতায়ালার বিভিন্ন ও বহুমুখি গুণ ও বৈশিষ্ট্য। এসব নামের বেশ কয়েকটি নাম করুণা ও ক্ষমার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট।
আল গাফুর: আল গফুর (সর্বাধিক ক্ষমাশীল)। কোরআনে কারিমে নামটি এসেছে ৭০ বারেরও বেশি। এই নামের একই উৎস থেকে আরও কিছু নাম এসেছে আল্লাহতায়ালার। যেমন, গাফির ও গাফফার।
আরবি ভাষার ‘গাফারা’ শব্দটির অর্থ আবৃত করা, কিংবা গোপন করা। এর থেকে এসেছে তাৎপর্যবাচক কয়েকটি শব্দ। যেমন ক্ষমা করা, অব্যাহতি প্রদান, নিষ্কৃতি প্রভৃতি। আল্লাহ এ সব কিছু করে থাকেন।
কোরআনে কারিমে বলা হয়েছে, ‘আল্লাহ শিরক ক্ষমা করেন না (তওবা না করলে), তবে তিনি যার ব্যাপারে ইচ্ছা করেন, তার অন্য সব গোনাহ বা পাপ মাফ করে দিতে পারেন। ’ -সূরা আন নিসা: ১১৬
আল্লাহতায়ালার ক্ষমা লাভের উদ্দেশ্যে আমাদের উচিত তার দিকে রুজু হওয়া।
আল আফউ: আল আফউ। এটা ক্ষমার আরেক অংশের সঙ্গে সম্পর্কিত। কোরআনে নামটির উল্লেখ রয়েছে পাঁচবার। শাব্দিকভাবে ‘আফ্উ’ মানে, উপশম, পুনঃস্থাপন, অব্যাহতিদান, মুক্ত করা।
আল্লাহতায়ালার সঙ্গে সম্পর্কের ক্ষেত্রে শব্দটির অর্থ হলো- আমাদের পাপ ও ভ্রান্তির কারণে যে শাস্তিপ্রাপ্য, এর বোঝা থেকে আমাদের মুক্তি দেওয়া; অথবা পাপ ও ভুলের মাধ্যমে আমরা নিজেদের যে মর্যাদাহানি করেছি, এর পুনঃপ্রতিষ্ঠা।
কোরআনে কারিমে কোনো কোনো সময়ে আফউ ও গাফুর উভয় নামই এসেছে একসঙ্গে।
আত্ তাওয়াব: আত্ তাওয়াব (তওবা বা অনুশোচনা গ্রহণকারী)। আল্লাহতায়ালার এই নাম কোরআনে কারিমে উল্লিখিত হয়েছে ১১ বার।
আল্লাহতায়ালা তাদের তওবা কবুল করে নেন, যারা আন্তরিকতার সঙ্গে তওবা করে এবং প্রত্যাবর্তন করে তার দিকে। ‘তাওয়াব’ শব্দটি দ্বারা বোঝায় ‘প্রায়শ প্রত্যাবর্তনকারী’। এর তাৎপর্য হলো- আল্লাহতায়ালা বারবার তওবা কবুল করে থাকেন। তারপর আবার আমরা গোনাহ করি, ভুল করি। তবুও আমরা তওবা করলে তিনি দয়াবশত তা গ্রহণ করে থাকেন।
এভাবে আমাদের আরও একবার সুযোগ দেন সত্যের পথে ফিরে আসার।
আল হালিম: আল হালিম (ধৈর্যশীল)। কোরআনে কারিমে এই নাম ১৫ বার উল্লেখ করা হয়েছে। এই নামের তাৎপর্য হলো- আল্লাহতায়ালা বিচারের জন্য তাড়াহুড়া করেন না। তিনি বান্দাদের সময় দেন। তিনি পরিচয় দেন ধৈর্যশীলতার, যাতে তার বান্দারা তার দিকে ফিরে আসে।
আর রাহমান ও আর রাহিম: আর রাহমান ও আর রাহিম (সর্বাধিক করুণাময় ও দয়ালু)। কোরআনে আল্লাহতায়ালার এই দু’টি নাম সবচেয়ে বেশিবার এসেছে। আর রাহমান এসেছে ৫৭ বার। আর আর রাহিম এসেছে ১১৫ বার। আর রাহমান ইঙ্গিত দেয়, আল্লাহর করুণা বিপুল। আর রাহিম বোঝায়, আল্লাহতায়ালা সবসময়ই করুণাময় বা দয়ালু। তিনি ভালোবাসা ও করুণায় পরিপূর্ণ।
কোরআন শেখায়, আল্লাহতায়ালা হলেন বিচারক। তিনি শাস্তিও দিয়ে থাকেন। কোরআন অনুসারে আল্লাহর ন্যায়বিচার হচ্ছে, তিনি কাউকে অহেতুক বা অতিরিক্ত শাস্তি দেন না বা দেবেন না। তিনি কারও ভালো কাজকে উপেক্ষা করবেন না। তবে কোনো পাপীকে ক্ষমা করার ইচ্ছা করলে তার এটা করার পূর্ণ স্বাধীনতা আছে। আল্লাহতায়ালার করুণা অপরিসীম এবং তার ভালোবাসারও নেই সীমা-পরিসীমা।
আল্লাহতায়ালার ভালোবাসা, করুণা ও ক্ষমা সম্পর্কে কোরআনের বহু আয়াত এবং হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর অনেক হাদিস রয়েছে। হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) যেসব মুনাজাত শিখিয়েছেন, তার একটিতে তিনি বলেছেন, ‘হে আল্লাহ! আপনি সবচেয়ে বেশি ক্ষমাশীল; আপনি ক্ষমা করতে ভালোবাসেন। তাই আমাকে ক্ষমা করুন। ’-তিরমিজি ও ইবনে মাজাহ
আমাদের মনে রাখতে হবে, আল্লাহর করুণা ও ক্ষমা আমাদের প্রয়োজন সব সময়। কখনও এই ধারণা করা ভুল যে, আল্লাহর ক্ষমা ব্যতিরেকে আখেরাতে নাজাত বা মুক্তি লাভ করা সম্ভব।
ইসলাম বিভাগে লেখা পাঠাতে মেইল করুন: [email protected]
বাংলাদেশ সময়: ২২০৫ ঘণ্টা, নভেম্বর ১১, ২০১৭
এমএইউ/