বালিহাঁস, বাটুল, চখাচখি, শামুকখোল, খোপাডুবুরিসহ অন্যান্য পাখির চঞ্চল ওড়াওড়ি মুগ্ধ করে যে কাউকে। একটু উষ্ণতার জন্য এসব পাখি হাজার হাজার মাইল পথ পাড়ি দিয়ে আমাদের দেশে আসে।
জানা গেছে, পৃথিবীতে প্রায় ৫ লাখ প্রজাতির পাখি আছে। এর মধ্যে অনেক প্রজাতির পাখি বছরের নির্দিষ্ট সময়ে অন্য দেশে চলে যায়। আমাদের দেশের পরিযায়ী পাখিগুলোর বেশির ভাগ আসে হিমালয় কিংবা সুদূর সাইবেরিয়া অঞ্চল থেকে। শীতের দৌরাত্ম্য কমে গেলে পাখিগুলো ঠিকই তাদের ঠিকানায় ফিরে যায়।
পরিযায়ী পাখিরা ফিরে যাওয়ার জন্য আল্লাহতাআলা তাদের মধ্যে এ ধরনের একটি জিপিএস সিস্টেম তৈরি করে দিয়ে দিয়েছেন। রাতের বেলায় তারকা ও দিনের বেলায় সূর্যের অবস্থান দেখেও পাখিগুলো দিক নির্ণয় করতে পারে। পাখিদের ব্যাপারে আল-কোরআনে বলা হয়েছে, ‘তারা কি লক্ষ্য করে না আকাশের শূন্যগর্ভে নিয়ন্ত্রণাধীন পাখিদের প্রতি? আল্লাহই ওদের স্থির রাখেন। অবশ্যই এতে নিদর্শন রয়েছে বিশ্বাসী সম্প্রদায়ের জন্য। ’ (সুরা নাহাল, আয়াত : ৭৯)
পরিযায়ী পাখিরা নিরাপদে থাকার ব্যবস্থা করা আমাদের দায়িত্ব। কারণ এসব পাখি আমাদের মেহমান। তারা পাখিরা আল্লাহর জিকির করে। এগুলো দেশের সৌন্দর্য বাড়ানোর পাশাপাশি আল্লাহর জিকিরে মশগুলো থাকার বরকত সহজেই অনুভব করা যায়। আল্লাহ তাআলা কোরআনে ইরশাদ করেন, ‘তুমি কি দেখনি যে, আসমান ও জমিনে যারা আছে তারা এবং সারিবদ্ধ হয়ে উড়ন্ত পাখিরা আল্লাহর তসবিহ পাঠ করে? প্রত্যেকেই তাঁর সালাত ও তসবিহ জানে। তারা যা করে সে সম্পর্কে আল্লাহ সম্যক অবগত। ’ (সুরা নুর, আয়াত : ৪১)
অনেক সময় গাছের ফল কিংবা পুকুরের মাছ রক্ষায় এদের তাড়িয়ে দেওয়ার চেষ্টা করা হয়। কিন্তু কালেভদ্রে কিংবা যেকোনো সময় পাখিরা কারো গাছের ফল ও শস্যদানা আহার করে থাকলে, তার বিনিময়ে সে সদকার সওয়াব লাভ করবে। জাবের (রা.) থেকে হাদিসে রাসুল (সা.) বলেন, ‘যে কোনো মুসলমান (ফলবান) গাছ লাগায় আর তা থেকে যা কিছু খাওয়া হবে তা তার জন্য সদকা, তা থেকে যা কিছু চুরি হবে তা তার জন্য সদকা, পাখি যা খাবে তাও তার জন্য সদকা এবং যে কেউ এর থেকে কিছু নেবে তাও তার জন্য সদকা। অর্থাৎ সে দান-খয়রাতের সওয়াব পাবে। ’ (মুসলিম শরিফ)
প্রসঙ্গত ইসলামে যদিও পাখি শিকার করা জায়েজ। তবে নির্ভরযোগ্য কারণ ছাড়া এদের নিশানা বানানো হারাম। রাসুল (সা.) বলেন, ‘যে ব্যক্তি অহেতুক কোনো চড়ুই পাখি মেরে ফেলল, কিয়ামতের দিন পাখিটি আল্লাহর কাছে এই বলে নালিশ করবে, হে আল্লাহ! অমুক ব্যক্তি আমাকে অহেতুক হত্যা করেছে। ’ (নাসায়ি, ইবনে হিব্বান)
এ হাদিস দ্বারা বোঝা যায়, একান্ত প্রয়োজন ছাড়া পাখি শিকার অনুচিত।
বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ আইন অনুসারে পরিযায়ী পাখি শিকার ও বিক্রয় দণ্ডনীয় অপরাধ। ২০১২ সালের বন্যপ্রাণী (সংরক্ষণ ও নিরাপত্তা) আইন অনুযায়ী, ‘পাখি নিধনের সর্বোচ্চ শাস্তি ১ লাখ টাকা জরিমানা, এক বছরের কারাদণ্ড বা উভয় দণ্ড। একই অপরাধ আবার করলে শাস্তি ও জরিমানা দ্বিগুণ। ’
কিন্তু এ আইনের সুষ্ঠু প্রয়োগের অভাবে এই মৌসুমে পাখিশিকারিদের দৌরাত্ম্য বেড়ে যায়। পেশাদার ছাড়াও অনেক শৌখিন শিকারি পরিযায়ী পাখি শিকারে মহড়া দেন। এতে প্রতিদিনই শত শত পরিযায়ী পাখি মারা পড়ছে। ফলে জীববৈচিত্র্য মারাত্মক হুমকির মুখে পড়ছে।
বেসরকারি একটি প্রতিবেদনের বরাতে জানা যায়, দেশের বিভিন্ন চরাঞ্চলে ধানের সঙ্গে বিষ মিশিয়ে, কারেন্ট জাল দিয়ে পাখি নিধন করা হচ্ছে। অনেক মৃত পাখি নদীতে ভেসে আছে। জমিতে পড়ে আছে। এভাবে বিষ মিশিয়ে ও কারেন্ট জালে আটকে পাখিগুলো মেরে ফেলা হচ্ছে। ফলে এগুলো জবাই করার আগেই মারা যায়। এ ধরনের মৃত পাখি ভক্ষণ ইসলামী শরিয়তে যেমন নিষিদ্ধ তেমনি স্বাস্থ্যের পক্ষে যেমন ভালো নয়। শুধু মৃত পাখ নয়, বরং যে কোনো পশুপাখিই জবাইয়ের আগে মারা গেলে তা খাওয়া বৈধ নয়।
বস্তুত প্রাকৃতিক ভারসাম্য রক্ষা ও জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণের স্বার্থে পরিযায়ী পাখি রক্ষার দায়িত্ব আমাদের সবার। আসুন, আমরা পরিযায়ী পাখি শিকার বন্ধ করি। পরিবেশের বৈচিত্র টিকিয়ে রেখে মহান আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন করি। আল্লাহ তাওফিক দান করুন।
ইসলাম বিভাগে লেখা পাঠাতে মেইল করুন: [email protected]
বাংলাদেশ সময়:০৮১৮ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১৬, ২০১৯
এমএমইউ/