বিয়ের প্রস্তাবদাতা ছেলেদের সঙ্গে ও অন্য মানুষদের সঙ্গে কীভাবে আচরণ করতে হবে, নারী হিসেবে সে সম্পর্কে তিনি আমাকে কিছুই শেখাননি। মেয়ের জীবনের প্রায় সব বিষয়েই অবহেলা করেছেন।
আমি জানি হাদিসে আছে, মায়ের অবাধ্যতা ও মার সঙ্গে অসদাচরণের কারণে সন্তানকে আল্লাহ তাআলা বিচারের মুখোমুখি করবেন। কিন্তু আমার জানার আগ্রহ হলো, মা-কেও কী অবহেলার কারণে সেভাবে বিচারের মুখোমুখি করা হবে? আশা করি জানাবেন।
উত্তর: সন্তানদের উপর পিতামাতার যেমন অধিকার রয়েছে, তেমনি পিতামাতার ওপরও সন্তানদের অধিকার রয়েছে।
আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘হে ঈমানদারগণ! তোমরা নিজেদেরকে ও তোমাদের পরিবার-পরিজনকে আগুন থেকে রক্ষা কর; যে আগুনের ইন্ধন হবে মানুষ ও পাথর, যাতে নিয়োজিত আছে নির্মম, কঠোরস্বভাবের ফেরেশতাগণ, যারা আল্লাহর আদেশ অমান্য করে না। তারা যে কাজে আদেশপ্রাপ্ত হয়, তাই তারা করে। ’ (সুরা তাহরিম, আয়াত: ৬৬)
প্রিয় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, ‘তোমরা প্রত্যেকেই দায়িত্বশীল এবং তোমাদের প্রত্যেককেই অধীনস্থদের (দায়িত্ব) সম্পর্কে জিজ্ঞেস করা হবে। পুরুষ তার পরিবার-পরিজনের দায়িত্বশীল; তাকে তার অধীনস্থদের সম্পর্কে জিজ্ঞেস করা হবে। নারী তার স্বামীগৃহের কর্ত্রী; তাকে তার অধীনস্থদের সম্পর্কে জিজ্ঞেস করা হবে...। ’ (বুখারি, হাদিস নং: ৮৯৩, মুসলিম, হাদিস নং: ১৮২৯)
রাসুল (সা.) আরও বলেন, ‘আল্লাহ যে বান্দাকে কোনো জনসমষ্টির দায়িত্বশীল করেন; কিন্তু সে এমন অবস্থায় মৃত্যুবরণ করে যে, সে তার অধীনস্থদের ব্যাপারে খেয়ানত করেছে; আল্লাহ তার জন্য জান্নাত হারাম করে দেন। ’ (মুসলিম, হাদিস নং: ১৪২)
পিতামাতার ওপর সন্তানদের কিছু অধিকার রয়েছে; যেগুলো অধিকার আদায় করা আবশ্যক। যেমন-
এক. স্বামীর উচিত নিজের জন্য উত্তম স্ত্রী নির্বাচন করা এবং স্ত্রীর উচিত নিজের জন্য উত্তম স্বামী নির্ধারণ করা। পুরুষ তার জন্য এমন একজন স্ত্রী নির্বাচন করবেন, যে নারী ভবিষ্যতে তার সন্তানদের মা হওয়ার উপযুক্ত। আর নারী এমন একজন পুরুষকে নির্বাচন করবেন, যে পুরুষ তার সন্তানদের পিতা হওয়ার উপযুক্ত।
দুই. সন্তানের সুন্দর নাম রাখা, যত্ম নেওয়া ও তার খাবার-পানীয়, পোশাকাদি ও বাসস্থান ইত্যাদি মৌলিক প্রয়োজনীয় সামগ্রীগুলো সাধ্যানুযায়ী ব্যবস্থা করা; এক্ষেত্রে কৃপণতা বা অপচয় না করা।
তিন. পিতামাতার ওপর সন্তানদের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অধিকার হচ্ছে— উত্তম প্রতিপালন, তাদের চরিত্র ও শিষ্টাচার গঠনে যত্মবান হওয়া, আল্লাহর সন্তুষ্টি অনুযায়ী দ্বীন-ধর্ম পালন করছে কিনা সেটা তত্ত্বাবধান করা এবং তাদের যাবতীয় দুনিয়াবি প্রয়োজনগুলোর খোঁজখবর রাখা; যাতে করে তাদের জন্য উপযুক্ত ও সম্মানজনক জীবন-নির্বাহ নিশ্চিত করা যায়।
সন্তানদের এ অধিকারের ক্ষেত্রে অনেক পিতামাতাই অসচেতন থাকেন। প্রচুর পরিমাণে অবহেলা করেন। ফলে তিনি নিজেরাই সন্তানদের ভেতর অবাধ্যতা ও দুর্ব্যবহারের সুযোগ তৈরি করে দেন।
আল্লামা ইবনু কায়্যিমিল জাওযিয়্যাহ (রহ.) বলেন, ‘যে ব্যক্তি তার সন্তানকে উপকারী শিক্ষা দেয় না ও অবহেলায় ছেড়ে দেয়, সে তার সন্তানের প্রতি জঘন্যতম অন্যায় করে। অধিকাংশ সন্তান নষ্ট হয় পিতামাতার অবহেলার কারণে এবং সন্তানদের ইসলামের ফরজ-সুন্নত ও গুরুত্বপূর্ণ আমলগুলো শিক্ষা না দেওয়ার কারণে। এভাবে পিতামাতাই অঙ্কুরে সন্তানদের নষ্ট করে…। ’
তিনি আরো বলেন, ‘কত মানুষ নিজেই নিজের তার কলিজার টুকরা সন্তানকে দুনিয়া-আখেরাতে দুর্ভাগা বানায়; অবহেলা, শাসন না করা, ভোগবিলাসে সহযোগিতা ইত্যাদির মাধ্যমে তাকে অভাগা করে। হয়তো ভাবে যে, সে তাকে খুশি করেছে; বস্তুত সে তাকে লাঞ্ছিত করেছে। ভাবে তার প্রতি দয়া করছে; অথচ সে তার প্রতি অন্যায় করছে। এভাবে সে ব্যক্তি সন্তান দিয়ে উপকৃত হওয়া থেকে বঞ্চিত হয় এবং সন্তানকেও দুনিয়া-আখেরাতের কল্যাণ থেকে বঞ্চিত করে...। খেয়াল করলে দেখবেন, অধিকাংশ সন্তান নষ্ট হওয়ার কারণ পিতামাতা। ’ (তুহফাতুল মাওদুদ ফি আহকামিল মাওলুদ, পৃষ্ঠা: ২২৯-২৪২)
তবে সন্তান প্রতিপালনে পিতামাতার অবহেলার মানে এটা নয় যে, সন্তানও পিতামাতার অধিকার আদায়ে অবহেলা করবে। তাদের সঙ্গে দুর্ব্যবহার ও অসদাচরণ করবে। বরং সন্তানদের ওপর ফরজ হলো পিতামাতার সঙ্গে ভালো ব্যবহার করা। তাদের দুর্ব্যবহার হয়ে থাকলে ক্ষমা করে দেওয়া।
প্রশ্নটি করেছেন: জারা মাহবুবা (ছদ্মনাম), বনানী, ঢাকা।
ইসলাম বিভাগে জীবনঘানিষ্ঠ প্রশ্ন পাঠাতে মেইল করুন: [email protected]
বাংলাদেশ সময়: ১২৪১ ঘণ্টা, জুলাই ০১, ২০১৯
এমএমইউ