তবে ওয়েলিংটনের মসজিদটিতে ভ্রমণ করে কিছু মুসলিম পর্যটক জানিয়েছেন ওন্টারিওর গ্রামীণ এলাকায় আরো বেশ কিছু মসজিদ হওয়া জরুরি। খবর গুয়েলফ টুডের।
মসজিদটির সভাপতি কাশিফ আলী বলেন, অনেক দূরের অঞ্চলে মসজিদ খুঁজে বের করা দুষ্কর। রকউড, জর্জটাউন, অরেঞ্জভিল, ফার্গুস, আর্থার ও হিলসবার্গ—এসব জায়গায় কোনো মসজিদ নেই।
বর্তমান মসজিদটি আগে এরিন ভিলেজ অ্যালায়েন্স চার্চ ছিল। কিন্তু গত মার্চে আলী চার্চটি ক্রয় করে মসজিদে রূপান্তর করেন। গত বছর মারা যাওয়া তার মায়ের প্রতি শ্রদ্ধা হিসেবে মসজিদটির সমুদয় সম্পত্তি সদাকায়ে জারিয়াহ হিসেবে ওয়াকফ করে দেন।
চার্চটিকে বদলে মসজিদ করার সময় আলী এর নামকরণ করেন- ‘দারুল ক্বামার মস্ক’। এ প্রসঙ্গে আলী বলেন, আমি আমার মায়ের কাছে এই নামটি দেওয়ার সিদ্ধান্ত জানিয়েছিলাম। আমার মায়ের নামও ছিল ক্বামার। তাই মায়ের নামেই এই মসজিদের নাম দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিই।
গত এপ্রিলে প্রথমবারের মতো মসজিদটি সবার জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়া হয়। এতে প্রতিবেশী শহরগুলোর মুসলমানদের জন্য মসজিদটি একটি গন্তব্য হয়ে ওঠে। পবিত্র রমজানে ইবাদত-বন্দেগির উদ্দেশ্যে প্রচুর মুসল্লি এতে সমবেত হন।
ওন্টারিওতে কানাডার প্রায় ৬০ শতাংশ মুসলমান বাস করে। তবে এরিন ভিলেজে বসবাসরত মুসলমানদের সংখ্যা অপেক্ষাকৃত কম। কিন্তু অরেঞ্জভিল ও গুয়েলফের মসজিদগুলোর মধ্যবর্তী অঞ্চলে বসবাসকারী মুসলিমদের জন্য এটি একটি সুবিধাজনক স্থানে রয়েছে।
মসজিদটির চেয়ারম্যান সদস্য আতিফ মঈন বলেন, আমাদের বিশ্বাস হলো, ইবাদতের জন্য একটি ইবাদতগৃহ তৈরি করা এবং সেখান থেকে মানুষের সেবায় কাজ করা। আর মানুষের সেবা করার কারণে নিশ্চয় আল্লাহ আমাদের পুরস্কার দেবেন। এখানকার কমিউনিটিকে সাহায্য করতে এবং তাদের দিতেই আমরা এখানে এসেছি।
আলী বলেন, মসজিদে কিমিউনিটির বাচ্চাদের এবং বয়স্কদের জন্য ইবাদত-সেবা ও শিক্ষাসেবার ব্যবস্থা রয়েছে। এতে করে মসজিদে আসতে ও ইসলাম সম্পর্কে আরো জানতে মানুষ উৎসাহিত হবে।
এছাড়াও আমরা কী করছি—সে বিষয়ে আমরা জনগণকে আমন্ত্রণ জানাতে চাই যে এবং ইসলাম সম্পর্কে তাদের কোনো প্রশ্ন থাকলে, আমরা তাদের সেটা শিক্ষা দিতে চাই।
এটি একটি মুসলিমদের ধর্মীয় স্থান। আমরা সবার আমন্ত্রণ জানাচ্ছি, যদি তাদের কোনো প্রশ্ন থাকে বা তারা ইসলাম সম্পর্কে জানতে চায় এবং আমরা যেসব আমল করছি, তা জানতে আগ্রহী হলে আমরা তাদের স্বাগত জানাই।
এরিন ভিলেজ মসজিদটি আইআইপিসি কানাডা থেকে অনুমোদিত এবং সব মুসলমানের জন্য উন্মুক্ত। এরিনের মেয়র অ্যালান অ্যালস এবং কিছু স্থানীয় খ্রিস্টান পাদ্রি মসজিদের উদ্বোধী অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন। তারা শহরের বিশ্বাসী সম্প্রদায়কে স্বাগত জানান।
বর্তমানে কানাডায় মসজিদের সংখ্যা প্রায় এক হাজার এক শ। এ সংখ্যা বেড়েই চলছে। ৭০ শতাংশের বেশি মুসলমান নিয়মিত মসজিদে গিয়ে জামাতে নামাজ আদায় করেন। অনেকগুলো মসজিদে জুমায় একাধিকবার জামাত অনুষ্ঠিত হয়। দৈনন্দিন মুসল্লিদের উপচেপড়া ভিড়ও লক্ষণীয়। প্রায় সব মসজিদে এক হাজার মুসল্লি একসঙ্গে অনায়াসে নামাজ আদায় করতে পারেন।
বর্তমানে কানাডার প্রায় প্রতিটি শহরে বিভিন্ন কমিউনিটিকেন্দ্রিক ইসলামিক সেন্টার ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান গড়ে উঠেছে। শুধু টরন্টো নগরীতে এ ধরনের প্রায় ১৬টি প্রতিষ্ঠান ও বড় কয়েকটি মাদরাসাও রয়েছে।
আরো পড়ুন: কানাডার প্রথম মসজিদের ইতিহাস
আরো পড়ুন: কানাডার আদালতে হিজাব পড়তে পারবেন নারীরা
কানাডায় মুসলমানদের আগমন শতাধিক বছর আগে। ১৮৭১ সালের কানাডিয়ান আদমশুমারিতে প্রথম মুসলমানদের নাম অন্তর্ভুক্ত হয়। ওই শুমারিতে সংখ্যায় মাত্র ১৩ জন মুসলমানের উল্লেখ পাওয়া যায়।
সিআইএ’র সর্বশেষ জরিপ অনুযায়ী, ২০১০ সালের আগেই মুসলমানের সংখ্যা ১০ লাখ ৫৩ হাজার ৯৪৫ জন্য। মোট জনসংখ্যার ৩.২ শতাংশ মুসলমান। সাম্প্রতিক একটি সমীক্ষায় দেখা গেছে, ২০৩০ সাল নাগাদ কানাডায় মুসলমান জনসংখ্যা তিন মিলিয়ন ছাড়িয়ে যেতে পারে। খ্রিস্টধর্মের পর ইসলাম কানাডার দ্বিতীয় বৃহত্তম ধর্ম।
ইসলাম বিভাগে আপনিও লিখতে পারেন। লেখা পাঠাতে মেইল করুন: [email protected]
বাংলাদেশ সময়: ১৭৪৫ ঘণ্টা, জুলাই ০৪, ২০১৯
এমএমইউ