ঢাকা, শনিবার, ৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ২১ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

ইসলাম

স্বাস্থ্যের ঝুঁকি কমাতে ইসলামের নির্দেশনা

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৯১৫ ঘণ্টা, জুলাই ৩১, ২০১৯
স্বাস্থ্যের ঝুঁকি কমাতে ইসলামের নির্দেশনা ছবি : প্রতীকী

সুস্থ মানুষ ও অসুস্থ মানুষ কখনই এক নয়। একজন সুস্থ মানুষ প্রতিটি কাজ যত সুন্দর ও নিখুঁতভাবে করতে পারেন, তা কখনই একজন অসুস্থ মানুষ করতে পারেন না। সুস্থতা আল্লাহ তাআলার অনেক বড়ধরনের নেয়ামত। এই নেয়ামত আমরা তখনই উপলব্দি করি, যখন আমরা অসুস্থ হয়ে কাতরাই। ইহকালীন ও পরকালীন সব ধরনের কাজের জন্যই একটি সুস্থ শরীর ও মন জরুরি। হাদিসে এসেছে রাসুল কারিম (সা.) এরশাদ করেন, ‘আল্লাহ তাআলার নিকট শক্তিশালী মুমিন দুর্বল মুমিনের চেয়ে অধিক উত্তম ও প্রিয়তর।’ (মুসলিম, হাদিস নং: ২৬৬৪)

অন্য একটি হাদিসে বর্ণিত আছে, রাসুল (সা.) ইরশাদ করেন, ‘তোমরা পাঁচটি বিষয়কে পাঁচটি বিষয়ের পূর্বে গনিমত মনে করো। বার্ধ্যকের পূর্বে যৌবনকালকে, অসুস্থতার পূর্বে সুস্থতাকে, দারিদ্র্যের পূর্বে প্রাচুর্যতাকে, ব্যস্ততার পূর্বে অবসর সময়কে আর মৃত্যুর পূর্বে জীবনকালকে।

’ (শুআবুল ঈমান, হাদিস নং: ৯৭৬৭)

এই হাদিসের মাধ্যমে যে বিষয়টি আমাদের নিকট স্পষ্ট, তা হলো মানবজীবনের পাঁচটি মূল্যবান বিষয়ের একটি হল সুস্থতা। সুস্থ থাকতে হলে আমাদের অনেক বিষয়ে সচেতন থাকতে হবে, যার মধ্যে অন্যতম হল খাদ্য।

বর্তমান সমাজে মানুষ না খাওয়ার চেয়ে বেশি খেয়েই অধিকতর নিজেকে অসুস্থ্যতা ও আকস্মিক মৃত্যুর দিকে ঠেলে দেয়। খাবার-দাবারের ব্যাপারে আমরা অনেকেই সচেতন নই। যার ফলশ্রুতিতে প্রতিনিয়তই আমরা নিজেদের এক অজানা বিপদের দিকে দাবিত করছি। ভেজালমুক্ত এবং পরিমিত খাবার সবার জন্য অত্যন্ত জরুরি।

কিন্তু বাস্তবতার নিরিখে বলতে গেলে যে বিষয়টি দিবালোকের ন্যায় স্পষ্ট, তাহলো আমরা যা খাই তার অধিকাংশ খাবারই ভেজাল ও ত্রুটিযুক্ত। বাজারের ফলমূল, তরিতরকারি, মাছ, মাংসসহ অনেক খাবারেই মিশ্রিত রয়েছে ‘ফরমালিন’ নামের বিষ। এমনকি আজকাল দুধেও মেশানো হয় অ্যান্টিবায়োটিক। একেতো ভেজালযুক্ত খাবার, তারমধ্যে আবার আমরা যখন খাই তখন অনেকেই কিন্তু খাবারের পরিমাণের দিকে ভ্রক্ষেপ করি না। বরং খাবার যদি স্বাদ হয়, তাহলে আমাদের অনেকেই পেটভরে খাই। এইধরনের খাদ্যাভাস ইসলাম ও বর্তমান চিকিৎসা বিজ্ঞানের দৃষ্টিকোণ থেকেই বর্জনীয়।

সম্প্রতি এক গবেষণার দ্বারা প্রমাণিত হয়েছে যে, ‘মানুষ যদি কম খায়, তাহলে তা হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি কমাতে সাহায্য করে। ’ সিডনি ইউনিভার্সিটির ফ্যাকাল্টি অফ মেডিসিন অ্যান্ড হেলথ’-এ কর্মরত প্রফেসর লুইগি ফোনটানা। তিনি তার গবেষণার মাধ্যমে এই বিষয়টি প্রমাণ করেছেন। প্রসিদ্ধ জার্নাল বা সাময়িক পত্রিকা ‘ল্যানসেট ডায়াবেটিস অ্যান্ড অ্যান্ডোক্রিনলজি’-তে  তার লিখিত প্রবন্ধটি প্রকাশিত হয়েছে।

যে বিষয়টি আজ আধুনিক চিকিৎসা বিজ্ঞানীরা গবেষণা করে বের করেছে, ১৪৫০ বছর পূর্বে সেই একই বিষয়ের দিকে ইঙ্গিত দিয়েছেন আমাদের প্রিয়নাবী (সা.)। হজরত মিকদাম বিন মা‘দি কারুবা (রা.) হতে বর্ণিত আছে যে, আমি রাসুল (সাঃ)-কে বলিতে শুনেছি- ‘মানুষের জন্য পেটভরে খাওয়ার চেয়ে ক্ষতিকার আর কিছু নেই। তাদের জন্য ততটুকু খাবার খাওয়াই যথেষ্ট, যতটুকু খেলে পরে তার মেরুদণ্ড ঠিক থাকবে। তারপরেও যদি আরো বেশি খাওয়ার প্রয়োজন হয়, তাহলে সে তার পেটের এক তৃতীয়াংশ রাখবে খাওয়ার জন্য, এক তৃতীয়াংশ রাখবে পান করার জন্য আর অপর এক তৃতীয়াংশ রাখবে শ্বাস-প্রশ্বাসের জন্য। ’ (তিরমিজি, হাদিস নং: ২৩০২)

এই হাসিসের মাধ্যমে যেই বিষয়টির দিকে ইঙ্গিত করে, তাহল কম খাওয়া। যদিও রাসুল (সাঃ) এখানে কোনো নির্দিষ্ট করে কোনো রোগের কথা বলেননি। তবে তিনি বলেছেন এটি মানুষের জন্য ক্ষতিকারক।

অধিকাংশ চিকিৎসকদের মতে মানুষ রোগাক্রান্ত হওয়ার অনেকগুলি কারণের মধ্যে অন্যতম কারণ হল ‘অতিরিক্ত খাবার খাওয়া’। তাই আমাদের কে এই বিষয়ে সর্তক থাকতে হবে। আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘তোমরা খাও এবং পান করো, কিন্তু অপচয় করো না। নিশ্চয়ই তিনি অপচয়কারীকে পছন্দ করেন না। ’ (সুরা আরাফ, আয়াত: ৩১)

অতিরিক্ত খাওয়াও এক ধরনের অপচয়। আল্লাহ তাআলা আমাদের তার দ্বীনকে সঠিকভাবে মেনে ও সুন্নাত তারিকায় চলার তাওফিক দান করুন।

লেখক: পিএইচডি গবেষক, কোরআন অ্যান্ড সুন্নাহ স্টাডিজ, ইন্টারন্যাশনাল ইসলামিক ইউনিভার্সিটি, মালয়েশিয়া।

ইসলাম বিভাগে আপনিও লিখতে পারেন। লেখা পাঠাতে মেইল করুন: [email protected]

বাংলাদেশ সময়: ১৫১৫, জুলাই ৩১, ২০১৯
এমএমইউ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।