ঢাকা, শুক্রবার, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৮ রমজান ১৪৪৫

ইসলাম

করোনা

তওবা- ইস্তিগফার, দোয়া-দানসহ ৮ পরামর্শ আলেমদের

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১০৫৫ ঘণ্টা, মার্চ ৩১, ২০২০
তওবা- ইস্তিগফার, দোয়া-দানসহ ৮ পরামর্শ আলেমদের ইসলামিক ফাউন্ডেশনের লোগো।

ঢাকা: করোনা ভাইরাস সংক্রমণের কারণে বিরাজমান পরিস্থিতিতে জনগণের সুরক্ষার জন্য তওবা-ইস্তেগফার, দোয়া-দানসহ আট দফা পরামর্শ দিয়েছেন দেশের বিশিষ্ট আলেমরা।

ইসলামিক ফাউন্ডেশনের উদ্যোগে রোববার (২৯ মার্চ) সংস্থার প্রধান কার্যালয় আগারগাঁওয়ে দেশের শীর্ষস্থানীয় ওলামায়ে কেরামরা করোনা ভাইরাস সংক্রমণ রোধে জনগণের সুরক্ষা বিষয়ে পরামর্শ দিতে জরুরি বৈঠকে মিলিত হন।

সভায় সভাপতিত্ব করেন ইসলামিক ফাউন্ডেশনের মহাপরিচালক (অতিরিক্ত সচিব) আনিস মাহমুদ।

প্রধান অতিথি ছিলেন ধর্ম সচিব মো. নূরুল ইসলাম।

ইসলামিক ফাউন্ডেশন এক বিজ্ঞপ্তিতে জানায়, সভায় করোনা ভাইরাস সংক্রমণ থেকে সুরক্ষা বিষয়ে উপস্থিত বিশিষ্ট আলেমরা স্ব স্ব মতামত উপস্থাপন করেন।

এছাড়াও আল্লামা আহমদ শফি (চেয়ারম্যান, হাইয়াতুল উলয়া বাংলাদেশ ও মহাপরিচালক, আল জামিয়াতুল দারুল উলূম মঈনুল ইসলাম হাটহাজারী, চট্টগ্রাম), আল্লামা মুফতি আব্দুল হালীম বোখারী (মহাপরিচালক, আল জামিয়া ইসলামিয়া পটিয়া, চট্টগ্রাম), মুফতি নুরুল ইসলাম (নাযেমে তা’লীমাত, গওহরডাঙ্গা মাদরাসা, গোপালগঞ্জ), মুফতি মুহাম্মদ ছালাহ উদ্দীন (মুহতামিম, জামিয়া ইসলামিয়া ওবাইদিয়া, নানুপুর, ফটিকছড়ি, চট্টগ্রাম), মাওলানা মুহিব্বুল হক (মুহতামিম, জামেয়া কাসিমুল উলূম দরগাহে শাহজালাল (রাহ), সিলেট), মাওলানা সৈয়দ আবু তালেব মোহাম্মদ আলা উদ্দিন (খতীব, জমিয়তুল ফালাহ মসজিদ, চট্টগ্রাম), আল্লামা সৈয়দ অছিউর রহমান (প্রিন্সিপাল, জামেয়া আহমদিয়া সুন্নিয়া, চট্টগ্রাম), আল্লামা মুফতি মোবারকুল্লাহ (মুহাতামিম, জামিয়া ইউনুছিয়া, ব্রাহ্মণবাড়িয়া) প্রমুখের কাছ থেকে ইমেইলের মাধ্যমে নেওয়া মতামত বিবেচনা করা হয়।

সভায় উপস্থিত ওলামায়ে কেরামের বক্তব্য এবং ইমেইলের মাধ্যমে প্রাপ্ত মতামত পর্যালোচনা করে করোনা ভাইরাস সংক্রমণ রোধে সুরক্ষার জন্য ওলামায়ে কেরামরা আট দফা পরামর্শ দিয়েছেন।

তারা বলেন, বিশ্ব আজ করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত। আমাদের দেশও বেশ ঝুঁকিপূর্ণ। সরকার ও জনগণ চরম উদ্বিগ্ন। এ ভাইরাসের সংক্রমণ থেকে বাঁচার জন্য সচেতনতা তৈরি এবং প্রয়োজনীয় নির্দেশনাগুলো মেনে চলা আবশ্যক।

ওলামায়ে কেরামের পক্ষ থেকে প্রণীত নির্দেশনাগুলো হলো:

(ক) তওবা, ইস্তিগফার ও দোয়া: পৃথিবীতে যা কিছু হয় আল্লাহ তাআলার হুকুমেই হয়। রোগবালাই, মহামারি সবই আল্লাহর হুকুমে আসে। আবার তার হুকুমেই নিরাময় হয়। এ বিশ্বাস সব মুমিনেরই থাকতে হবে। এ মহামারি থেকে বাঁচার জন্য মহান আল্লাহর সাহায্য চাইতে হবে। আমাদের অপরিহার্য কর্তব্য হলো সব গুনাহ ও অপরাধ হতে বিরত থেকে বেশি বেশি তওবা ও ইস্তিগফার করা এবং দোয়াগুলো সর্বদা পড়তে থাকা।

‘বিছমিল্লা হিল্লাযি লা ইয়াদুররু মা‘আছমিহি শাইউন ফিল আরদি ওয়ালা ফিছছামায়ি ওয়া হুয়াছ্ ছামিয়ুল আলিম’; ‘আল্লাহুম্মা ইন্নী আ‘উজুবিকা মিনাল বারাছি ওয়াল জুনুনি ওয়াল জুযামি ওয়ামিন সায়্যিইল আসকাম’ এবং ‘লা ইলাহা ইল্লা আনতা সুবহানাকা ইন্নী কুন্তু মিনাজ্ জলিমীন। ’

(খ) সতর্কতা অবলম্বন: রোগ ও ক্ষতি থেকে বাঁচার জন্য সতর্কতা অবলম্বন ইসলামের অন্যতম বৈশিষ্ট্য। সতর্কতা অবলম্বন তাওয়াক্কুল পরিপন্থি নয়। বরং নবীজী (সা) এর সুন্নত।

(গ) মসজিদ সংক্রান্ত: মসজিদে নিয়মিত আযান, ইকামত, জামাত ও জুমার নামাজ অব্যাহত থাকবে। তবে জুমা ও জামাতে মুসল্লিদের অংশগ্রহণ সীমিত থাকবে অর্থাৎ নিম্নলিখিত ব্যক্তিরা জুমা ও জামাতে অংশ নেবেন না:

(১) যারা করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত,

(২) যাদের সর্দি, জ্বর, কাশি, গলা ব্যথা ও শ্বাসকষ্ট আছে,

(৩) যারা আক্রান্ত দেশ ও অঞ্চল থেকে এসেছেন,

(৪) যারা উক্তরূপ মানুষের সংস্পর্শে গিয়েছেন,

(৫) যারা বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত,

(৬) বয়োঃবৃদ্ধ, দুর্বল, নারী ও শিশু,

(৭) যারা অসুস্থদের সেবায় নিয়োজিত ও

(৮) যারা মসজিদে গিয়ে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা করেন তাদেরও মসজিদে না আসার অবকাশ আছে।

যারা জুমা ও জামাতে যাবেন তারা সবাই যাবতীয় সুরক্ষা ব্যবস্থা অবলম্বন করবেন। অজু করে নিজ নিজ ঘরে সুন্নাত ও নফল আদায় করবেন। শুধু জামাতের সময় মসজিদে যাবেন এবং ফরজ নামাজ শেষে দ্রুত ঘরে চলে আসবেন। সাবান দিয়ে বারবার হাত ধোয়া, মাস্ক পড়া, জীবাণুনাশক দিয়ে মসজিদ ও ঘরের মেঝে পরিষ্কার রাখাসহ বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সব নির্দেশনা মেনে চলবেন। হঠাৎ হাঁচি-কাশি এসে গেলে টিস্যু বা বাহু দিয়ে মুখ ঢেকে রাখবেন।

(ঘ) খতিব, ইমাম, মুয়াজ্জিন ও মসজিদ কমিটির করণীয়:

(১) পাঁচ ওয়াক্ত নামাজের আগে সম্পূর্ণ মসজিদ জীবাণুনাশক দিয়ে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করা এবং কার্পেট-কাপড় সরিয়ে ফেলা।

(২) জামাত সংক্ষিপ্ত করা।

(৩) জুমার বয়ান, খুতবা ও দোয়া সংক্ষিপ্ত করা।

(৪) বর্তমান সংকটকালে দরসে হাদীস, তাফসির ও তা’লীম স্থগিত রাখা।

(৫) ওযুখানায় অবশ্যই সাবান ও পর্যাপ্ত টিস্যু রাখা।

(৬) বর্তমান পরিস্থিতিতে জামাতের কাতারে ফাঁক ফাঁক হয়ে দাঁড়ানো।

(৭) ইশরাক, তিলাওয়াত, যিকির ও অন্য আমল ঘরে করা।

(৮) ঢাকাসহ দেশের কোনো মসজিদে যদি কোনো বিদেশি মেহমান অবস্থানরত থাকেন তাদের বিষয়ে বিস্তারিত বিশ্লেষণ করে সত্ত্বর প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া।  

(ঙ) করোনায় মৃত ব্যক্তির দাফন-কাফন ও জানাজা: হাদিসের বর্ণানুযায়ী মহামারিতে মৃত মুমিন ব্যক্তি শহীদের মর্যাদা লাভ করেন। করোনায় মৃত ব্যক্তির কাফন, জানাযা ও দাফন যথাযথ মর্যাদার সঙ্গে করা জরুরি। করোনায় মৃত ব্যক্তির দাফনে সহযোগিতা করুন। তাদের প্রতি বিরূপ মনোভাব প্রকাশ বা কোনরূপ অসহযোগিতা করা শরীয়তবিরোধী ও অমানবিক।

(চ) দান-সাদকা: হাদিস শরীফে আছে দান-সাদকা বালা মছিবত দূর করে। এ সংকটকালে আল্লাহর রহমত লাভের উদ্দেশ্যে দুস্থ ও অসহায়দের বেশি বেশি দান-সাদকা করুন। নিম্ন আয়ের মানুষের নিকট খাদ্যপণ্য পৌঁছে দেওয়ার ব্যবস্থা করুন।

(ছ) গুজব সৃষ্টি না করা: এ সমস্ত বিষয়ে গুজব মানুষের জন্য মারাত্মক ক্ষতির কারণ হতে পারে। তাই গুজব সৃষ্টি করা বা গুজবে বিশ্বাস করা থেকে বিরত থাকতে হবে।

(জ) প্রচার-প্রচারণা: ওলামায়ে কেরামের এ আহ্বান আন্তরিকতার সঙ্গে ব্যাপক প্রচার ও বাস্তবায়নের জন্য দেশের সব মসজিদের খতিব, ইমাম, মসজিদ কমিটি, গণমাধ্যম, জনপ্রতিনিধি, ইসলামিক ফাউন্ডেশনের বিভাগ, জেলা ও উপজেলা পর্যায়ের কর্মকর্তা/কর্মচারী/শিক্ষকসহ সব শ্রেণি-পেশার মানুষকে উদাত্ত আহ্বান জানানো হয়।

ইসলামিক ফাউন্ডেশন জানায়, করোনা ভাইরাসের এ সংকটকালে শরীয়তের দিক নির্দেশনা চেয়ে দেশের শীর্ষস্থানীয় ওলামায়ে কেরামের পরামর্শ নেওয়ায় তারা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতি আন্তরিক ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করেন।

সভায় দেশের শীর্ষস্থানীয় ওলামায়ে কেরামের মধ্যে কিশোরগঞ্জের শোলাকিয়া ঈদগাহের ইমাম আল্লামা ফরীদ উদ্দিন মাসউদ, জামেয়া ইসলামিয়া দারুল উলুমের মুহতামিম মুফতি দিলাওয়ার হোসাইন, শায়খ যাকারিয়া (র.) ইসলামিক রিসার্চ সেন্টারের মহাপরিচালক মুফতি মীযানুর রহমান সাঈদ, জাতীয় মুফতি বোর্ডের সদস্য সচিব মুফতি মোঃ নূরুল আমীন, ঢাকা নেছারিয়া কামিল মাদ্রাসার প্রিন্সিপাল ড. আল্লামা কাফীলুদ্দীন সরকার সালেহী, জামেয়া রহমানিয়ার মুহতামিম মাওলানা মাহফুজুল হক, চরমোনাই কামিল মাদ্রাসার প্রিন্সিপাল মাওলানা সৈয়দ মো. মোসাদ্দেক বিল্লাহ আল মাদানী, মদীনাতুল উলুম কামিল মাদ্রাসার প্রিন্সিপাল মাওলানা আব্দুর রাজ্জাক আল আযহারী, ইদারাতুল উলূম আফতাবনগর মাদ্রাসার মুহতামিম মুফতি মোহাম্মদ আলী, দারুল উলূম রামপুরার মুহতামিম মুফতি ইয়াহ্ইয়া মাহমুদ, জামিয়াতুল ‍উলুমের মুহতামিম মুফতি মাহমুদুল হাসান, বায়তুল উলূম ঢালকানগর মাদ্রাসার মুহতামিম মাওলানা জাফর আহমাদ উপস্থিত ছিলেন।

ঢাকা আলিয়া মাদ্রাসার উপাধ্যক্ষ মাওলানা মুহাম্মাদ আবদুর রশীদ, মহাখালী হোসাইনিয়া কামিল মাদ্রাসার প্রিন্সিপাল ড. মুহাম্মদ নজরুল ইসলাম আল মারুফ, নারায়ণগঞ্জের ভূমিপল্লী আবাসন জামে মসজিদের খতিব শায়খ আহমাদুল্লাহ, তেজগাঁও জামেয়া ইসলামিয়ার শায়খুল হাদিস ড. মাওলানা মুশতাক আহমদ, বায়তুল মুকাররম জাতীয় মসজিদের সিনিয়র পেশ ইমাম মাওলানা মিজানুর রহমান, ইসলামিক ফাউন্ডেশনের মুফতি মাওলানা মোহাম্মদ আব্দুল্লাহ, মুহাদ্দিস মুফতি ওয়ালিয়ুর রহমান খান ও মুফাসসির ড. মাওলানা আবু ছালেহ পাটোয়ারী, বায়তুল মুকাররম জাতীয় মসজিদের পেশ ইমাম মুফতি মুহিব্বুল্লাহিল বাকী নদভী, পেশ ইমাম মাওলানা মুহিউদ্দীন কাসেম, চকবাজার শাহী মসজিদের খতিব মাওলানা মুহাম্মদ মিনহাজ উদ্দিন, বড় কাটরা মাদ্রাসার প্রিন্সিপাল মুফতি সাইফুল ইসলাম মাদানী, শামসুল উলূম মাদ্রাসার মুহতামিম মুফতি শারাফাত হোসাইন, মাদানীনগর মাদ্রাসার মুহতামিম মুফতি ফয়জুল্লাহ এবং উস্তাদ মুফতি মাহবুবুর রহমান প্রমুখ অংশ নেন।

বাংলাদেশ সময়: ১০৫৫ ঘণ্টা, মার্চ ৩১, ২০২০
এমআইএইচ/এফএম

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।