ঢাকা, শুক্রবার, ১২ পৌষ ১৪৩১, ২৭ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৪ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

ইসলাম

মুসলিম স্থাপত্য শিল্পের অনন্য নিদর্শন তেঁতুলিয়া শাহী জামে মসজিদ

শেখ তানজির আহমেদ, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট  | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১১৩১ ঘণ্টা, আগস্ট ১৫, ২০২২
মুসলিম স্থাপত্য শিল্পের অনন্য নিদর্শন তেঁতুলিয়া শাহী জামে মসজিদ তেঁতুলিয়া শাহী জামে মসজিদ

সাতক্ষীরা: মুসলিম স্থাপত্য শিল্পের অনন্য নিদর্শন সাতক্ষীরার তালা উপজেলার ঐতিহ্যবাহী তেঁতুলিয়া শাহী জামে মসজিদ।

ছয়টি গম্বুজ, চারটি বড় মিনার ও প্রাচীন টেরাকোটায় সজ্জিত তেঁতুলিয়া শাহী জামে মসজিদ দেখতে দূর দূরান্ত থেকেও মানুষ আসেন।

তালার তেঁতুলিয়ায় খুলনা-পাইকগাছা মহাসড়কের পূর্ব পাশে দৃষ্টিনন্দন এ মসজিদটির অবস্থান। যার সামনে রয়েছে একটি দীঘি।

দীঘিটি ঘিরে স্থানীয়দের মুখে প্রচলিত রয়েছে নানা লোককথা।

লোকমুখে প্রচলিত আছে, এ দীঘির পানি কখনও শুকাতো না। আবার কখনও কখনও হঠাৎ করেই সোনার তৈজসপত্র ভেসে উঠত দীঘির জলে। একবার কেউ তা চুরি করে। এরপর থেকে বৈশাখ-জ্যৈষ্ঠে দীঘির পানি শুকিয়ে যায়।

খান বাহাদুর মৌলভি কাজী সালামাতুল্লাহ খান ১৮৫৮-৫৯ সালে মসজিদটি নির্মাণ করেন। ধারণা করা হয়, কলকাতার সিন্দুরে পট্টি মসজিদের আদলে মসজিদটি নির্মাণ করেন তিনি।

স্থানীয়দের কাছে মসজিদটি তেঁতুলিয়া জামে মসজিদ, তেঁতুলিয়া শাহী মসজিদ, খান বাহাদুর সালামতুল্লাহ মসজিদ বা বাহাদুর শাহ মসজিদ নামে সুপরিচিত।

চুন, সুড়কি ও চিটাগুড়ের গাঁথুনিতে নির্মিত মসজিদটিতে রয়েছে ৭টি দরজা। প্রতিটি দরজার উচ্চতা ৯ ফুট এবং প্রস্থ ৪ ফুট। ১০ বর্গফুট বেড়বিশিষ্ট ১২টি পিলারের ওপর মসজিদের ছাদ নির্মিত। মসজিদের ভেতরে ৫টি সারিতে ৩২৫ জন ও মসজিদের বাইরের চত্বরে ১৭৫ জন একসঙ্গে নামাজ আদায় করতে পারেন। তেঁতুলিয়া বাজার ও গ্রামের ধর্মপ্রাণ মুসল্লিরা পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ আদায় করেন মসজিদটিতে।

১৯৮৭ সালে প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তর তেঁতুলিয়া জামে মসজিদ নিয়ন্ত্রণে নিলেও অযত্ন এবং অবহেলায় মসজিদটি সৌন্দর্য হারাতে বসেছে।

কালের বিবর্তনে মসজিদের কয়েকটি মিনার ভেঙে পড়ার দশা, ফ্লোরে এবং পশ্চিম পাশের দেয়ালে ফাটল ধরেছে।

এলাকাবাসী জানান, মসজিদটি সংস্কারের উদ্যোগ নেওয়া প্রয়োজন। নইলে সময়ের পরিক্রমায় হারিয়ে যাবে ইতিহাস-ঐতিহ্যের ধারক ও বাহক তেঁতুলিয়া শাহী জামে মসজিদ।

মসজিদের নিয়মিত মুসল্লি কাজী মুজাদ্দিদ বলেন, তেঁতুলিয়া জামে মসজিদ বাংলাদেশের ঐতিহাসিক একটি স্থাপনা। মসজিদটি দেখতে দূর দূরান্ত থেকে দর্শনার্থীরা আসেন। মসজিদটির মূল নকশা ঠিক রেখে সংস্কার করা হলে এর পর্যটন গুরুত্ব আরও বাড়বে। পাশাপাশি মুসল্লিরাও নিরাপদে নামাজ আদায় করতে পারবেন।

স্থানীয় বাসিন্দা আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন, মসজিদটি দেখতে দেশের নানা প্রান্তের লোক এলেও তালায় থাকার কোনো ভালো জায়গা না থাকায় বিপাকে পড়তে হয়। এছাড়া মসজিদের দক্ষিণ পাশে যে কবরস্থান রয়েছে, তা পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন করে রাখা হলে মসজিদটির সৌন্দর্য আরও বৃদ্ধি পাবে। এজন্য সরকার ও প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন তিনি।

মসজিদের মুয়াজ্জিন মাসুদুর রহমান মাসুদ বলেন, আমি প্রায় ৩০ বছর ধরে এ মসজিদে মুয়াজ্জিনের দায়িত্ব পালন করছি। মসজিদটি দ্রুত সংস্কার করা প্রয়োজন। ভেতরে ফাটল ধরেছে, ভেঙে ভেঙে যাচ্ছে। গম্বুজে চিড় ধরে পানি পড়ত, আমরা সেটা ঠিক করেছি। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে বার বার জানানো হলেও সংস্কারের কোনো উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে না। সংস্কার ও রক্ষণাবেক্ষণ না করলে মুসলিম ঐতিহ্যের এ অনন্য নিদর্শনটি এক সময় বিলীন হয়ে যাবে।

বাংলাদেশ সময়: ১১২০ ঘণ্টা, আগস্ট ১৫, ২০২২
এসআই

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।