তবে রায়ের পর্যবেক্ষণে আদালত বলেছেন, ‘আমাদের ঐতিহ্য, আমাদের সংস্কৃতি ও আমাদের মধ্যে বিদ্বেষ ছড়াতে পারে, পারস্পরিক বিদ্বেষ ছড়াতে পারে- এ ধরনের কোনো বিষয়বস্তু সম্প্রচার করা যাবে না’।
হাইকোর্টের এ খারিজের রায়ের বিরুদ্ধে আপিল বিভাগে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন রিট আবেদনকারী পক্ষ।
২০১৪ সালের জুলাই মাসে রোজার ঈদকে সামনে রেখে স্টার জলসার ‘বোঝে না সে বোঝে না’ সিরিয়ালের পাখি চরিত্রের নামে পোশাক কিনতে না পেরে বাংলাদেশে অনেকে আত্মহত্যা করেন। এ নিয়ে পত্র-পত্রিকায় সংবাদ প্রকাশিত হয়।
এ বিষয়ে ওই বছরের আগস্ট মাসে হাইকোর্টের সংশ্লিষ্ট শাখায় রিট আবেদনটি করেন আইনজীবী সৈয়দা শাহীন আরা লাইলী।
তখন বিচারপতি শেখ হাসান আরিফ ও বিচারপতি আবু তাহের মো. সাইফুর রহমানের অবকাশকালীন হাইকোর্ট বেঞ্চ উত্থাপিত হয়নি মর্মে আবেদনটি খারিজ করে দেন।
এরপর আবার নতুন করে রিট আবেদন করা হয়। সে আবেদনের শুনানি নিয়ে একই সালের ১৯ অক্টোবর রুল জারি করেন হাইকোর্ট। রুলে বাংলাদেশে ভারতীয় তিনটি টিভি চ্যানেলের (স্টার জলসা, স্টার প্লাস ও জি বাংলা) সম্প্রচার বন্ধে কেন নির্দেশ দেওয়া হবে না- তা জানতে চান হাইকোর্ট।
২০১৪ সালে আইনজীবী একলাছ উদ্দিন ভূঁইয়া বলেছিলেন, ‘ভারতে বাংলাদেশের কোনো টিভি চ্যানেল প্রচার হয় না। অথচ বাংলাদেশে ভারতীয় টিভি চ্যানেলের অবাধ সম্প্রচারের ফলে যুব সমাজ ধ্বংসের সম্মুখীন। সর্বশেষ তাদের একটি টিভি চ্যানেল স্টার জলসার ‘বোঝে না সে বোঝে না’ সিরিয়ালের পাখি চরিত্রের নামে পোশাক কিনতে না পেরে বাংলাদেশে অনেকে আত্মহত্যা করেছেন’।
গত ০৮ জানুয়ারি থেকে রিট আবেদনের পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী একলাছ উদ্দিন ভূঁইয়া। স্টার জলসা ও স্টার প্লাসের বাংলাদেশের পরিবেশনকারী প্রতিষ্ঠান ডিজি জাদু ব্রডব্যান্ড লিমিটেডের পক্ষে আইনজীবী আব্দুল মতিন খসরু এবং জি বাংলার বাংলাদেশের পরিবেশনকারী প্রতিষ্ঠান ন্যাশন ওয়াইড মিডিয়া লিমিটেডের পক্ষে শুনানি করেন ব্যারিস্টার সামসুল হাসান।
গত ২৫ জানুয়ারি এ তিন চ্যানেল বন্ধে জারি করা রুলের শুনানি শেষে ২৯ জানুয়ারি রায়ের দিন ধার্য করেন বিচারপতি মইনুল ইসলাম চৌধুরী ও বিচারপতি জে বি এম হাসানের হাইকোর্ট বেঞ্চ।
রোববারের রায়ে রিট আবেদনের কোনো সারবার্তা (মেরিট) না পেয়ে খারিজ করে দেন। ফলে বাংলাদেশে ভারতীয় তিনটি টিভি চ্যানেল স্টার জলসা, স্টার প্লাস ও জি বাংলার সম্প্রচারে কোনো বাধা নেই বলে জানিয়েছেন আইনজীবীরা।
রায়ের পরে ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল মোতাহার হোসেন সাজু বলেন, ২০১৪ সালের ১৯ অক্টোবর তিনটি চ্যানেলের টেলিকাস্ট বন্ধের জন্য এ আবেদন করা হয়। সে আবেদনের দীর্ঘদিন শুনানি শেষে হাইকোর্ট রায় প্রদান করেছেন। রুল ডিসচার্জড হয়েছে। অর্থাৎ, যিনি আবেদন করেছেন, তার বিপক্ষে রায় গেছে। এখন চ্যানেলগুলোর সম্প্রচার করতে আর কোনো বাধা নেই। সম্প্রচার অব্যাহত রাখতে পারবে।
খারিজের কারণ সম্পর্কে রাষ্ট্রপক্ষের এ আইনজীবী বলেন, ‘এটি খারিজের মূল কারণ হলো, সম্প্রচারের ক্ষেত্রে কোনো অশ্লীল দৃশ্য থাকে অথবা রাষ্ট্রীয় কোনো বিরোধের সৃষ্টি হয় বা দৃশ্যটি দেখলে সামাজিক বিরোধের সৃষ্টি হয়, সে সমস্ত ক্ষেত্রে কোনো ব্যক্তি কোথায় অভিযোগ করবেন, তা আইনে বলা আছে’।
‘আর সাতদিনের মধ্যে অভিযোগের নিষ্পত্তি করতে হবে। এটি প্রমাণিত হলে শাস্তির বিধানও রয়েছে। কিন্তু আবেদনকারীরা সে ধরনের কোনো প্রক্রিয়ায় না গিয়ে সরাসরি রিট আবেদন দায়ের করেছেন। সে কারণে রুল ডিসচার্জ (খারিজ) হয়েছে’।
মোতাহার হোসেন আরও বলেন, আবেদনকারী ২০১৪ সালেও এ ধরনের একটি রিট করেন। এবারের রিটে শুধু সেটির নম্বর উল্লেখ করেছেন। কিন্তু রিটে নতুন যুক্তি নির্দিষ্টভাবে উল্লেখ করেননি। সে বিষয়ে আদালত মন্তব্য করেছেন, এটি হাইকোর্ট রুলসের পরিপন্থী’।
তিনি বলেন, আদালত পর্যবেক্ষণে বলেছেন- ‘আমাদের ঐতিহ্য, আমাদের সংস্কৃতি, আমাদের মধ্যে বিদ্বেষ ছড়াতে পারে, পারস্পরিক বিদ্বেষ ছড়াতে পারে- এ ধরনের কোনো কিছু সম্প্রচার করা যাবে না’।
২০০৬ সালের ক্যাবল টেলিভিশন নেটওয়ার্ক পরিচালনা আইনের ১৮ (১) ধারায় বলা হয়েছে, ‘এই আইনের অধীন সেবা প্রদানকারী কর্তৃক প্রদত্ত সেবা প্রাপ্তির ক্ষেত্রে গ্রাহকদের কোন অভিযোগ থাকিলে উহা সংশ্লিষ্ট লাইসেন্সিং কর্তৃপক্ষ বরাবরে লিখিতভাবে পেশ করা যাইবে’৷
‘(২) উপ-ধারা (১) এর অধীন অভিযোগ প্রাপ্তির পর লাইসেন্সিং কর্তৃপক্ষ উহার যথার্থতা যাচাইপূর্বক সেবা প্রদানকারীকে তদ্বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগের বিষয়টি অনধিক ৭ (সাত) দিনের মধ্যে নিষ্পত্তি করিবার জন্য নির্দেশ দিতে পারিবে এবং নির্দেশ পালনের ব্যর্থতার ক্ষেত্রে লাইসেন্সিং কর্তৃপক্ষ উহার লাইসেন্স বাতিল বা সাময়িকভাবে স্থগিত করিতে পারিবে’৷
ধারা ২৮ (১) বলা হয়, ‘এই আইনের অধীন ধারা ৩, ৪, ৭(৩) ও (৪), ১৬, ১৭(২), ১৭(৩), ১৭(৫), ১৯, ২১, ২২, ২৩, ও ২৫ এর কোন বিধান লঙ্ঘন হইবে একটি অপরাধ৷ (২) যদি কোন ব্যক্তি এই আইনের অধীন কোন অপরাধ সংঘটন করেন, তাহা হইলে তিনি অনধিক ২ (দুই) বত্সর সশ্রম কারাদন্ড বা অনধিক ১(এক) লক্ষ টাকা কিন্তু অন্যুন ৫০ (পঞ্চাশ) হাজার টাকা অর্থদন্ড বা উভয়দন্ডে দন্ডনীয় হইবেন এবং অপরাধ পূনরাবৃত্তির ক্ষেত্রে তিনি অনধিক ৩ (তিন) বত্সর সশ্রম কারাদন্ড বা অনধিক ২ (দুই) লক্ষ্য টাকা কিন্তু অন্যুন ১(এক) লক্ষ্য টাকা অর্থদন্ড বা উভয়দন্ডে দন্ডনীয় হইবেন’৷
‘(৩) এই আইনের অন্যান্য বিধান সাপেক্ষে, বিধি দ্বারা কতিপয় অপরাধ চিহ্নিত এবং উক্ত অপরাধ সংঘটনের জন্য দণ্ড নির্ধারণ করা যাইবে, তবে এইরূপ দণ্ড ১ (এক) বত্সর সশ্রম কারাদণ্ড বা ৫০ (পঞ্চাশ) হাজার টাকা অর্থদণ্ড বা উভয় দণ্ডের অতিরিক্ত হইবে না’৷
বাংলাদেশ সময়: ১৬২৯ ঘণ্টা, জানুয়ারি ২৯, ২০১৭
ইএস/এএসআর
** স্টার জলসা, স্টার প্লাস ও জি বাংলা চলবে বাংলাদেশে