ছেলে ও মেয়ে উভয়ই ভোগেন ইউরিনারি ট্র্যাক্ট ইনফেকশনে। তবে মেয়েদের মধ্যে এই সংক্রমণ বেশি দেখা যায়।
এই রেচনন্ত্রের যেকোনো অংশে যদি জীবাণুর সংক্রমণ হয়, তাহলে সেটাকে ইউরিনারি ট্র্যাক্ট ইনফেকশন বলা হয়। কিডনি, মূত্রনালি, মূত্রথলি বা একাধিক অংশে একসঙ্গে এই ধরনের ইনফেকশন হতে পারে। এই সংক্রমণকেই সংক্ষেপে ইউরিন ইনফেকশন বলা হয়।
ইউরিন ইনফেকশন বিভিন্ন কারণে হতে পারে। এটি মূলত ব্যাকটেরিয়াজনিত একটি সংক্রমণ, যা বাইরে থেকে ভেতরে প্রবেশ করে। প্রতিদিন ঠিকমতো গোসল করা না হলে, নিজের গোপনাঙ্গ পরিষ্কার না থাকলে, খুব টাইট অর্ন্তবাস পরলে, পানি কম খেলে, প্রস্রাব বেশিক্ষণ চেপে রাখলে সেখান থেকে আসে ইউরিন ইনফেকশনের মতো সমস্যা। এছাড়া মেয়েদের মেনোপজের সময় এবং যাদের ডায়াবিটিস রয়েছে তাদের ক্ষেত্রেও আসতে পারে এই সমস্যা। অনেকেই প্রস্রাব কিংবা মলত্যাগের পর গোপনাঙ্গ ঠিক মতো পরিষ্কার করেন না। সেখান থেকেও কিন্তু হতে পারে ইউরিন ইনফেকশন। আবার জামাকাপড় থেকে সাবান যদি ঠিকমতো ধোয়া না হয় পরবর্তীতে সেখান থেকেও হতে পারে সংক্রমণ।
ইউরিন ইনফেকশনের লক্ষণ
বারবার বাথরুম পায় কিন্তু তা ঠিকভাবে হয় না। প্রস্রাবে এক রকম দুর্গন্ধ থাকে, সেই সঙ্গে প্রস্রাবের রং গাঢ় হয়। গোপনাঙ্গে জ্বালা ভাব থাকে। সেই সঙ্গে সেখান থেকে দুর্গন্ধ হয়। কিছুক্ষেত্রে কিন্তু ব্যথাও থাকে। তলপেট কিংবা পিঠের নিচের দিকে তীব্র ব্যথা হয়।
বারবার ইউরিন ইনফেকশনের কারণ
অনেকেই আছেন যারা সারা দিনে খুব কম পরিমাণে পানি পান করেন। এতে শরীর বেশি শুকিয়ে যায়। শরীরের পর্যাপ্ত পানির চাহিদা মেটে না। সেখান থেকেও হতে পারে ইউরিন ইনফেকশনের মত সমস্যা।
আঁটোসাঁটো অর্ন্তবাস পরা অনেকেরই অভ্যাস। এতে কিন্তু শরীরের বেশি ক্ষতি হয়। ঘাম জমে যায়, দুর্গন্ধ ওঠে আর সেখান থেকেও হতে পারে সংক্রমণ।
গোসল করার পর কিংবা প্রস্রাব করার পর যদি গোপনাঙ্গ ঠিক মত ধোয়া না হয় কিংবা গোপনাঙ্গ যদি সব সময় ভেজা থাকে সেখান থেকেও কিন্তু হতে পারে ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণ।
শারীরিক সম্পর্কের পর গোপনাঙ্গ পরিষ্কার করে ধুয়ে নেওয়া একান্ত কর্তব্য। নইলে কিন্তু এখান থেকেও হতে পারে সংক্রমণ। এছাড়া আসতে পারে একাধিক সমস্যা।
এই পরিস্থিতে যেসব খাবার থেকে বিরত থাকবেন: কফি, অ্যালকোহল ও ক্যাফেইনযুক্ত খাবার বর্জন করতে হবে। ইউরিনের ইনফেকশন ভালো না হচ্ছে ততদিন পর্যন্ত। এসব পানীয় মূত্রাশয়ে সংক্রমণ বাড়াতে পারে। চিনিযুক্ত খাবার বর্জন করতে হবে। কারণ রক্তে চিনির পরিমাণ বেশি থাকলে তা ইউরিনারি ট্র্যাক্ট ইনফেকশনের ঝুঁকি বাড়ায়। এ কারণে যাদের ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে নেই, তাদের ক্ষেত্রে ইউরিন ইনফেকশন বেশি দেখা যায়।
মসলাদার খাবার এড়িয়ে চলতে হবে, কারণ এগুলো মূত্রাশয়ে সংক্রমণের ঝুঁকি বাড়ায়।
মূত্র সংক্রমণের সময় লেবু, কমলার মতো সাইট্রিক ফল এড়িয়ে চলতে হবে। তবে, সংক্রমণ ভালো হলে এই ধরনের সাইট্রিক ফল কিন্তু পরবর্তী সংক্রমণ থেকে আপনাকে রক্ষা করতে পারে। মূত্র সংক্রমণ ভালো হলে পালংশাক, সবুজ কাঁচা মরিচ, আঙুরের রস, স্ট্রবেরি এসব খান বেশি করে।
যা খাবেন
প্রচুর পানি পান করতে হবে। এতে মূত্রাশয় থেকে ক্ষতিকর ব্যাকটেরিয়া শরীর থেকে বের হয় যাবে। জাম খান। কারণ এই ফল ইউরিনারি ট্র্যাক্টে ব্যাকটেরিয়াকে আটকে থাকতে দেয় না, শরীর থেকে সেই ব্যাকটেরিয়াকে বের করতে সহায়তা করে। দই খান, কারণ এতে থাকা উপকারী ব্যাকটেরিয়া মূত্রাশয়ের ক্ষতিকর ব্যাকটেরিয়াকে দূর করতে ভূমিকা রাখে। ক্র্যানবেরি নামের একটি গুল্ম আছে। এর জুসে প্রচুর ফাইটোক্যামিকেল থাকে যা শরীর থেকেই কোলি ব্যাকটেরিয়া বাইরে পাঠিয়ে দিতে সহায়তা করে। তাই ক্র্যানবেরি জুস পান করতে পারেন।
বাংলাদেশ সময়: ২০২০ ঘণ্টা, মার্চ ০৪, ২০২৪
এএটি