নওরিন আজকাল দারুণ বিষণ্নতায় ভুগছে। মনটা মেঘলা আকাশ।
আপনারা যেমন জানেন, ভিটামিন ‘এ’ এর অভাবে রাত কানা রোগ হয়, তেমন কিছু কিছু খাদ্য উপাদান আছে যা দেহে দীর্ঘদিন ধরে কম থাকলে মানুষ বিষণ্নতায় আক্রান্ত হয়। সেই সব খাদ্য খেলে আপনি আর বিষণ্ন বোধ করবেন না।
বিষণ্নতা রোধে পুষ্টি উপাদান
ওমেগা-৩-ফ্যাটি অ্যাসিড: সামুদ্রিক মাছে প্রচুর পরিমাণে পাওয়া যায়। আমাদের ইলিশ মাছে আছে। প্রয়োজনে ফিশ অয়েল সাপ্লিমেন্ট খান। তিসিতে প্রচুর পাবেন। ওমেগা-৩-ফ্যাটি অ্যাসিড আপনার স্মৃতিশক্তি ও স্মরণশক্তি বাড়াবে, মুড ভালো রাখবে। শরীর এটা তৈরি করতে পারে না। তাই বাইরে থেকে যোগান দিতে হয়। তিসি কিনে নিয়মিত কয়েক দানা চিবিয়ে খান।
ভিটামিন-ডি: এর অভাব মহামারির মতো ছড়িয়ে পড়েছে। ভিটামিন-ডি এর অভাবে বিষণ্নতা, ডিমেনশিয়া (ভুলে যাওয়া রোগ) এমনকি অটিজম পর্যন্ত হতে পারে। বিশেষ করে হেমন্ত আর শীতে, দেহে ভিটামিন ডি’ এর পরিমাণ অনেক কমে যায়। এর মাত্রা ৫-১০ হাজার ইন্টারন্যাশনাল ইউনিট (IU) প্রতিদিন দেহে প্রয়োজন। কিন্তু দেখা যায়, ৬শ এর কম পায় দেহ। একে যোগান দিতে মাছের তেল (কডলিভার ওয়েল), চর্বিযুক্ত মাছ, দুধ, ডিম, কলিজা, মাশরুম ইত্যাদি খাওয়া যেতে পারে। সেই সাথে দিনে ২০ থেকে ২৫ মিনিট দেহে রোদ লাগান (সান ব্লক ছাড়া)।
ম্যাগনেশিয়াম: মোট জনসংখ্যার প্রায় অর্ধেক আমেরিকান ম্যাগনেশিয়ামের অভাবে ভোগেন। অতিরিক্ত মদ, লবণ, কফি, চিনি, সোডাযুক্ত ড্রিংক, দীর্ঘমেয়াদী স্ট্রেস, অ্যান্টিবায়োটিক, ডাই-ইউরেটিকস জাতের ওষুধ এর জন্য দায়ী। পরিণত পুরুষদের ৪শ থেকে ৪শ ২০ মিলিগ্রাম ও নারীদের ৩শ ১০ থেকে ৩শ ২০ মিলিগ্রাম ম্যাগনেশিয়াম প্রতিদিন প্রয়োজন।
নিয়মিত ম্যাগনেশিয়াম সমৃদ্ধ খাবার হৃদরোগ ও ডায়াবেটিস ঝুঁকি কমায়। শুধু তাই নয়, এটা বিষণ্নতা ও মাইগ্রেন প্রতিরোধ করে। গাঢ় সবুজ শাক, বাদাম, বীজ, মাছ, কলা, ডাল, ডার্ক চকলেট, সয়াবিন, টকদই ইত্যাদিতে ম্যাগনেশিয়াম পাওয়া যাবে।
ভিটামিন-বি: বি কমপ্লেক্স এর ভিটামিন বি-৬, ভিটামিন বি-১২ ইত্যাদি শুধু স্ট্রোকের প্রবণতাই কমায় না, নখ ও ত্বক ভালো রাখে। ভঙ্গুর নখ বা প্রাণহীন ত্বক ভিটামিন-বি হীনতার ইঙ্গিত বহন করে। এর অভাবে বিষণ্নতাও হয়। ২০০৯ সালে এক গবেষণায় দেখা যায়, চল্লিশোর্ধ নারীদের এক চুতর্থাংশই ভিটামিন-বি এর অভাবে ভুগছেন। বি-৬ পাবেন সামুদ্রিক খাদ্য, পোলট্রি (মুরগি, ডিম), কলা সবুজ শাকে আর বি-১২ পাবেন মাছ, মুরগি, ডিম, দুধ, কাঁকড়া ইত্যাদিতে।
ফলেট: গবেষণায় দেখা যায়, যদি রক্তে ফলেটের মাত্রা কম থাকে তবে বিষণ্নতা প্রতিরোধক ওষুধ দিয়ে মাত্র ৭ শতাংশ রোগীর বিষণ্নতা কমে। গর্ভাবস্থায় ও স্তন্যদায়ী মায়ের দেহে ফলেটের চাহিদা আরও বেড়ে যায়। গাঢ় সবুজ শাক, বিলস, ডাল, টক জাতীয় ফলে ফলেট থাকে।
অ্যামাইনো অ্যাসিড: এটি দেহে প্রোটিন তৈরি করে-ব্রেইনের কাজকে মসৃণ করে। এর অভাবে আপনি ধীর লয়ে চলবেন, নিজেকে তথাকথিত ‘ল্যাবেনডিস’ মনে হবে। লক্ষ্য স্থির রাখতে পারবেন না, মন থাকবে কুয়াশা ঢাকা। বিষণ্নতায় আক্রান্ত হলে গরুর মাংস, ডিম, মাছ, বরবটি, বাদাম ও বিভিন্ন বীজে অ্যামাইনো অ্যাসিড পাবেন।
আয়রন: নারী, বিশেষত গর্ভবতী মায়েদের ৫০ শতাংশই লৌহশূন্যতায় ভোগেন। এ রোগের নাম এনিমিয়া বা রক্তশূন্যতা। এতে রোগী, ক্লান্ত, বিষণ্ন, খিটখিটে মেজাজ, ভুলে যাওয়া রোগে আক্রান্ত হন। চিন্তার ক্ষমতা কমে আসে, কিছু মনে রাখা কঠিন হয়ে পড়ে। মাছ, মাংস, কলিজা ইত্যাদি এর সমাধান হতে পারে।
জিংক: এর অভাবে বিষণ্নতা রোগ হয়। রোগ প্রতিরোধক ক্ষমতা কমে যায়। মাংস, ডাল, বাদাম, মিষ্টি কুমড়া, বীজ, তিল ইত্যাদিতে প্রচুর জিংক থাকে।
আয়োডিন: এর অভাবে থাইরয়েড গ্রন্থি আক্রান্ত হয়। থাইরয়েড আমাদের বিপাক, এনার্জি, দেহের তাপমাত্রা, বৃদ্ধি রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা, স্মরণশক্তি, মেজাজ নিয়ন্ত্রণ করে। আয়োডিন সমৃদ্ধ খাবার ঠিক মতো না খেলে বিষণ্ন হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে। দুধ, লবণ, সামুদ্রিক মাছ, চিংড়ি ইত্যাদিতে আয়োডিন পাওয়া যায়।
সেলেনিয়াম: সেলেনিয়ামও থাইরয়েডের কাজ নিয়ন্ত্রণ করে। মাংস, সামুদ্রিক মাছ, সূর্যমুখী বীজ, মাশরুম, লাল চাল, ব্রকোলি, ফুলকপি, বাঁধাকপি, পালং শাক ইত্যাদিতে প্রচুর সেলেনিয়াম থাকে।
মনে রাখবেন কেবল সাপ্লিমেন্ট খাবার থেকে তাজা খাবার দেহের জন্য বেশি উপকারী। আসুন বিষণ্নতাকে প্রতিরোধ করি।
বাংলাদেশ সময়: ২১৩৭ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ০৫,২০২৪
এএটি