ডায়াবেটিস ও সেই রোগ নিয়ন্ত্রণে রাখার উপায় নিয়ে সচেতনতা অল্পবিস্তর সবারই জানা আছে। কিন্তু ডায়াবেটিসের কারণে আপনার শরীরে ধীরে ধীরে বহু সমস্যার সৃষ্টি হয়।
ডায়াবেটিক নিউরোপ্যাথি কী?
ডায়াবেটিস থাকলে বিশেষভাবে পায়ের যত্ন নেওয়া প্রয়োজন। নিয়ম করে ত্বকের যত্ন নেওয়ার মতো করেই এটা করতে হবে। সঙ্গে দরকার নিয়মে থেকে রোগ নিয়ন্ত্রণ। নাহলে ডায়াবেটিস থাবা বসাবে স্নায়ুতেও।
স্নায়ু কমজোর হয়ে পায়ের সাড় কমে যেতে পারে, একেই বলে ডায়াবেটিক নিউরোপ্যাথি। ডায়াবেটিস হলে এমনিতেই যেকোনো ঘা শুকোতে দেরি হয়। তার ওপর পায়ে সাড় কমে গেলে কাটা-ছেঁড়া থেকে হওয়া ঘায়ের চিকিৎসায় অবহেলা করলে তা বাড়াবাড়ির আকার নিয়ে অস্ত্রোপচারের দিকে ঠেলে দিতে পারে।
ডায়াবেটিক ফিটের উপসর্গ
ডায়াবেটিসের কারণে স্নায়ুর সমস্যা থেকে পায়ে দেখা দিতে পারে অসাড় বা ঝিমঝিম ভাব। অনেক সময় পা নাড়ানোর ক্ষমতাও কমতে থাকে। হাঁটতে গেলেও পায়ে ব্যথা হয়। কারও কারও ক্ষেত্রে পায়ের হাড়ে ব্যথা হয় বা জায়গায় জায়গায় ফুলে গিয়েও ব্যথা শুরু হয়। আক্রান্ত পা বা পায়ের অস্থিসন্ধি হঠাৎ লাল হয়ে ফুলে যাওয়াও এই রোগের অন্যতম লক্ষণ। পায়ে কোনোভাবে কেটে বা ছড়ে গেলে তা শুকোতে দেরি হওয়া, তাতে অল্প দিনেই সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়তে দেখলেও সচেতন হতে হবে। পায়ের আঙুলের খাঁজে খাঁজেও ঘা দেখা যেতে পারে।
পায়ের যত্ন
প্রতিদিন ত্বকের যত্নের মতো করে পায়ের যত্ন নিতে হবে। দিনে একবার ভালো করে নিজেকেই পরীক্ষা করে দেখে নিতে হবে পায়ের কোথাও কোনো ঘা দেখা দিচ্ছে কি না। কাটা, ছড়া বা কোনো ধরনের প্রদাহ হলে দ্রুত চিকিৎসকের সঙ্গে যোগাযোগ করুন। পায়ে ঘা না থাকলে ঘুমনোর আগে হালকা গরম পানি ও ত্বক বিশেষজ্ঞের থেকে পরামর্শ নিয়ে তার বেছে দেওয়া শ্যাম্পু দিয়ে পা পরিষ্কার করে শুকনো করে মুছে ময়েশ্চারাইজার লাগান। তবে ঘা হলে কোনো ক্রিম বা ময়েশ্চারাইজার ব্যবহারের আগে ডায়াবেটিস ও ত্বক, দুই বিশেষজ্ঞের সঙ্গেই আলোচনা করে নেবেন। পায়ের তলা ঘামার ধাত থাকলে আঙুলের খাঁজে ময়েশ্চারাইজার লাগাবেন না।
কী করবেন, কী করবেন না
ডায়াবেটিসে আক্রান্ত মানুষ কখনও বাড়িতেও খালি পায়ে হাঁটবেন না। আরামদায়ক চটি পড়ুন। বাথরুমের চটি, ঘরের চটি সাধারণত আলাদাই থাকে। সেই নিয়ম মেনে চলুন। বাইরে বেরলে মোজা ছাড়া জুতা পরবেন না। সেলাই না করা মোজা পরলে বেশি ভালো, কারণ এতে সেলাইয়ের খাঁজে ময়লা জমে থাকার আশঙ্কা থাকে না। পায়ের নখ একটু বাড়লেই তা কেটে ফেলতে হবে। ত্বকে সহ্য হয় এমন নেলপালিশ ব্যবহার করুন। নখের কোণা চামড়ার মধ্যে ঢুকে গেলে নিজে কিছু না করে বা পার্লারে না গিয়ে বরং পোডিয়াট্রিস্টের পরামর্শ নিন। পেডিকিওর করার বিষয়েও খুব সাবধান থাকতে হবে ডায়াবেটিক রোগীকে।
পায়ে ঘা হলে কী করণীয়
প্রথমেই চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া প্রয়োজন। একান্তই তা সম্ভব না হলে আক্রান্ত স্থান স্যালাইন জলে ধুয়ে স্টেরিলাইজড গজ ও প্রয়োজনীয় ওষুধ বা মলম লাগিয়ে জায়গাটা ঢেকে দিন। ঘা না শুকোনো অবধি মোজা পরবেন না। বাইরেও বেশি বেরনোর দরকার নেই। বেরলেও আরামদায়ক পা ঢাকা জুতা পরুন যাতে বাইরের ধুলো-বালি সরাসরি লাগতে না পারে। প্রয়োজনে ডাক্তারের পরামর্শ মতো অ্যান্টিবায়োটিক খান। কোনো কোনো সময় রোগীর প্রয়োজন বুঝে ডায়াবেটিক জুতা কেনার পরামর্শ দেন চিকিৎসকরা। নজর রাখুন পা ফুলে যাচ্ছে কি না বা নখের চার পাশের রং বদলে যাচ্ছে কি না। বছরে একবার পোডিয়াট্রিস্টের কাছে পায়ের চেকআপ করাতে যান।
পেডিকিওরের বিপদ
পার্লারে কখন কেমন যন্ত্রপাতি দিয়ে পরিচর্যা করা হয় তা আপনার পক্ষে জানা সম্ভব নয়। পার্লারের কর্মীরও ডায়াবেটিক আক্রান্ত পায়ের যত্ন নেওয়ার ঠিক নিয়ম জানা আছে কি না বা প্রয়োজনীয় ট্রেনিং আছে কি না তার ঠিক তথ্য জানা সম্ভব নয়। তাই সবচেয়ে ভালো হয় পেডিকিওর এড়িয়ে যেতে পারলে। পেডিকিওরের সময় গরম পানিতে পা ডোবানো বা ঝামা দিয়ে ঘষার সময় সচেতন না হলে কেটে–ছিঁড়ে গিয়ে বিপদ ঘটতে পারে। কড়া বা মৃত চামড়া কাটার সময় কাঁচি ঠিকমতো জীবাণুমুক্ত কি না সেদিকেও খেয়াল রাখতে হবে। পুরো নখ সমানভাবে কাটুন। তা না করে সরু কাঁচি ঢুকিয়ে নখের কোণা কেটে রুপটান দিতে গেলে কিন্তু সংক্রমণ হতে পারে।
ডায়াবেটিক জুতা
এর ভেতরের দিকের সোল সাধারণ জুতার চেয়ে ৮–১০ মিলিমিটার বেশি মোটা হয়। তাই পায়ের তলার মাধ্যমে সারা শরীরের চাপটাই ছড়িয়ে পড়ার সুযোগ পায়। এতে প্রেশার পয়েন্টে ঘায়ের সুযোগ কমে যায়। জুতা কেনার সময় পায়ের আঙুলগুলো জড়ো করে রাখতে হয় এমন পাঞ্জার জুতা কিনবেন না। এতে ঘাম জমে গা হওয়ার আশঙ্কা বাড়বে। জুতার হিল কাউন্টার যেন শক্ত ও উঁচু হয়। এমন জুতা কিনুন যা পায়ে ড্রেসিং করেও পরতে অসুবিধা না হয়। পা ফুলে গেলে জুতা ঢিলে করা যায় এমন পদ্ধতির জুতা কিনতে পারলে ভালো।
প্রতিবেদনটি সচেতনতার উদ্দেশ্যে লেখা হয়েছে। ওপরের উল্লেখিত কোনো কিছু করার আগে ডায়াবেটিস রোগীররা চিকিৎসকের সঙ্গে পরামর্শ করে নেবেন।
বাংলাদেশ সময়: ১৪৪৪ ঘণ্টা, নভেম্বর ১০, ২০২৪
এএটি