ঢাকা, রবিবার, ১৪ বৈশাখ ১৪৩২, ২৭ এপ্রিল ২০২৫, ২৮ শাওয়াল ১৪৪৬

লাইফস্টাইল

স্মার্টফোন ব্যবহারে বয়স্কদের মস্তিষ্কের উপকার: গবেষণা  

আন্তর্জাতিক ডেস্ক | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১১৫৫ ঘণ্টা, এপ্রিল ২৭, ২০২৫
স্মার্টফোন ব্যবহারে বয়স্কদের মস্তিষ্কের উপকার: গবেষণা   প্রতীকী ছবি

স্মার্টফোন এবং ডিজিটাল ডিভাইসগুলোকে একসময় ক্ষতিকর মনে করা হত। কিন্তু এমন ভাবনা পাল্টাচ্ছে।

অর্থবহ এবং চিন্তাশীল উপায়ে ব্যবহার করা গেলে ওইসব প্রযুক্তিকে বন্ধু ভাবা যায়। আর পৃথিবী যেভাবে আরও ডিজিটাল হয়ে উঠছে, এতে করে প্রযুক্তির সঙ্গে খাপ খাইয়ে নিলে তা সুবিধাই দিতে পারে। ভবিষ্যতে তীক্ষ্ণ ও সুস্থ মনের অধিকারী হওয়ার পথ খুলে যেতে পারে।

যদিও বছরের পর বছর ধরে বলা হচ্ছে, স্মার্টফোন এবং ডিজিটাল ডিভাইসের ব্যবহার মানুষের মস্তিষ্কের জন্য ক্ষতিকারক হতে পারে। অনেকেই বিশ্বাস করেন, একটানা ফোন বা কম্পিউটারের স্ক্রিন ব্যবহারের ফলে স্মৃতিশক্তি কমে যেতে পারে। এমনকি বয়স বাড়লে ডিমেনশিয়াও হতে পারে। কিন্তু এই নিয়ে নতুন গবেষণা একেবারেই উল্টো কথা বলছে।  

বিশ্বব্যাপী গবেষণার একটি বড় পর্যালোচনায় দেখা গেছে, বয়স্করা যারা নিয়মিত ডিজিটাল প্রযুক্তির সঙ্গে জড়িত তাদের ডিমেনশিয়া হওয়ার সম্ভাবনা কম থাকে। যারা নিয়মিত স্মার্টফোন এবং অন্যান্য ডিজিটাল ডিভাইস ব্যবহার করেন, তাদের মস্তিষ্কের স্বাস্থ্য আরও ভালো থাকে। এই ধারণাটি ব্যাপকভাবে প্রচলিত বিশ্বাসকে চ্যালেঞ্জ করে যে স্ক্রিন টাইম মস্তিষ্কের ক্ষতি করে।

টেক্সাস বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকরা ৫০ বছর বা তার বেশি বয়সী ৪ লাখ ১১ হাজারের বয়স্কদের ওপর ১৩৬টি গবেষণা চালায়। তার ফলাফলের ওপর একটি পদ্ধতিগত পর্যালোচনা এবং মেটা-বিশ্লেষণ পরিচালনা করে এ সিদ্ধান্তে উপনীত হন গবেষকরা।  

ডিমেনশিয়া কী? 

এটি কেবল ভুলে যাওয়ার রোগ নয়। এটি স্মৃতিশক্তি, চিন্তাভাবনা এবং সামাজিক ক্ষমতাকে প্রভাবিত করা একগুচ্ছ লক্ষণ। সেসবের মধ্যে আলঝাইমার হল সবচেয়ে সাধারণ ধরন। এই রোগে সময় যত যায়, পরিস্থিতি তত খারাপ হয়। মস্তিষ্কের কোষগুলো ক্ষতিগ্রস্ত হলে এবং একে অপরের সঙ্গে যোগাযোগ করার ক্ষমতা হারালে রোগটি দেখা দেয়। মস্তিষ্কের কাজ, চিন্তা করা এবং বাকি পৃথিবীর সঙ্গে যোগাযোগের ওপর রোগটি প্রভাব ফেলে।

কোন গবেষণার ভিত্তিতে আমাদের ধারণা বদলাচ্ছে? ড. জ্যারেড বেঞ্জ এবং ড. মাইকেল স্কালিনের নেতৃত্বে বিজ্ঞানীদের একটি দল ৫০ বছর বা তার বেশি বয়সী চার লাখের বেশি মানুষের তথ্য নিয়ে কাজ করেন। ৫৭টি আলাদা গবেষণার ফল বিশ্লেষণ করে তারা নতুন তথ্য জেনেছেন। যারা নিয়মিত স্মার্টফোন, কম্পিউটার বা ইন্টারনেট ব্যবহার করেন, দেখা গেছে তাদের জ্ঞান হ্রাস পাওয়ার ঝুঁকি কম।

এমন পর্যবেক্ষণের মানে কিন্তু এই নয় যে, ডিজিটাল ডিভাইসগুলোতে জাদু আছে। তবে গবেষণাটি বলছে, সেগুলোর ব্যবহার মস্তিষ্ককে সক্রিয় এবং তীক্ষ্ণ রাখতে সাহায্য করতে পারে।

প্রযুক্তিনির্ভরতার ফলে মস্তিষ্কের ক্ষমতা হ্রাস পাওয়াকে ‘ডিজিটাল ডিমেনশিয়া' বলা হয়। মনে করা হয় যে, প্রযুক্তি মানুষকে মানসিকভাবে অলস করে তোলে। কিন্তু বেঞ্জ আর স্কালিনের গবেষণার ফলাফল ভিন্ন কথা বলে। পাজেল গেমিং, খবর পড়া, বন্ধুদের সঙ্গে চ্যাটিং, রিমাইন্ডার সেট করা বা জিপিএস দিয়ে পথ চলা প্রয়োজনীয় কাজ। স্মার্টফোন এবং কম্পিউটার যখন এমন সক্রিয় কাজের জন্য ব্যবহার করা হয়, তখন তা মস্তিষ্কের ক্ষতি করার বদলে উল্টোটি করতে পারে।

গবেষকরা বিশ্বাস করেন, ডিজিটাল ডিভাইসগুলোর ব্যবহারের ধরনই সমস্ত পার্থক্য গড়ে দেয়। অতিরিক্ত টিভি দেখার মতো পরোক্ষ স্ক্রিন টাইম মস্তিষ্ককে ভালো রাখতে বা এর উন্নয়নে সাহায্য নাও করতে পারে। কিন্তু ইন্টারেক্টিভ স্ক্রিন টাইম- যেমন পড়াশোনা, মেসেজ পাঠানো বা বুদ্ধি ব্যবহারের গেম খেলার মাধ্যমে মনকে চ্যালেঞ্জে ফেলা যায়। এমন কাজগুলো জ্ঞান সঞ্চয়ে সাহায্য করে, যা হল, মস্তিষ্কের কিছু অংশ ধীর হয়ে গেলে কাজ করার নতুন উপায় খুঁজে বের করার ক্ষমতা।

বিশ্লেষণে দেখা গেছে, ডিজিটাল প্রযুক্তির ব্যবহার ডিমেনশিয়ার ঝুঁকি ৫৮ শতাংশ কমে যায় এবং সময়ের সঙ্গে সঙ্গে স্মৃতিশক্তি লোপের হার ২৬ শতাংশ ধীর হয়।

ড. বেঞ্জ তার পর্যবেক্ষণ সহজে বোঝাতে চেয়েছেন জটিলতা, সংযোগ এবং ক্ষতিপূরণ - এই তিনটি শব্দ দিয়ে । ডিজিটাল সরঞ্জাম ব্যবহারে প্রায়শই পরিকল্পনা, সমস্যা সমাধান এবং সিদ্ধান্ত গ্রহণের মতো কয়েক ধাপের জটিল চিন্তাভাবনা করতে হয়। চ্যাটিং বা ভিডিও কলের মাধ্যমে কাছের মানুষ, বন্ধু বা পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ রাখা আমাদের বিচ্ছিন্নতা প্রতিরোধ করতে সাহায্য করে। সামাজিক বিচ্ছিন্নতা মানসিক অবক্ষয় ডেকে আনে। আর অসুখ-বিসুখে ওষুধ সেবন বা প্রয়োজনীয় অ্যাপয়েন্টমেন্টের জন্য রিমাইন্ডার হিসেবে ইলেকট্রনিক ডিভাইসের ব্যবহার প্রতিদিনের কাজ সহজ করে। এসব ডিভাইসের ব্যবহার মানসিক চাপ কমায় এবং জীবনকে আরামের করে তোলে।

ডিমেনশিয়ার মতো ঝুঁকির একটি প্রধান কারণ একাকিত্ব। স্মার্টফোনের সাহায্যে প্রিয় মানুষের সঙ্গে যোগাযোগে থাকা, প্রিয় মুহূর্তের ছবি শেয়ার করা, এমনকি অনলাইন কমিউনিটিগুলোতে যোগদান সহজ করে তোলে। নিয়মিত সামাজিক যুক্ততা মানুষের মস্তিষ্ককে বাইরের জগতের সঙ্গে যুক্ত রাখে। এতে বোধশক্তি রক্ষা পায়।

অ্যালার্ম, নোট, ক্যালেন্ডার এবং এমনকি ভয়েস অ্যাসিস্ট্যান্টের ব্যবহার স্মৃতিশক্তি ভালো রাখতে পারে। এসব আমাদের চিন্তাভাবনা করার ক্ষমতাকে দখল করে না, বরং সহযোগিতা করে। যখন আমাদের মস্তিষ্ক প্রতিটি তথ্য বিস্তারিত মনে রাখার জন্য চাপ থেকে মুক্ত থাকে, তখন তা আরও গুরুত্বপূর্ণ চিন্তাভাবনা করতে পারে।

প্রযুক্তি ব্যবহারে দক্ষ বয়স্কদের স্মৃতিশক্তি প্রায় ক্ষেত্রেই শক্তিশালী হয়। তারা তুলনামূলক ভালো সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষমতা দেখায়। এটি কেবল ইলেকট্রনিক ডিভাইস ব্যবহার করার কারণে নয়। নতুন কিছু নিয়ে চেষ্টা করা এবং শেখা চালিয়ে যাওয়ার ইচ্ছা থাকার কারণেও এমন হয়ে থাকে। এমন মানসিকতা সময়ের সঙ্গে মস্তিষ্কের স্বাস্থ্য বজায় রাখতে বিশাল ভূমিকা পালন করে।

বাংলাদেশ সময়: ১১৩৮ ঘণ্টা, এপ্রিল ২৭, ২০২৫
এসএএইচ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।