ঢাকা, মঙ্গলবার, ১১ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ২৪ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

লাইফস্টাইল

অপরাহ উইনফ্রে : বিশ্বের সবচে ক্ষমতাবান নারী

রোকেয়া লিটা | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৩০৩ ঘণ্টা, জুলাই ২৮, ২০১০

মাত্র নয় বছর বয়সে যে কিশোরী যৌন নির্যাতনের শিকার হয়েছিলেন এবং এই নির্যাতন সইতে না পেরে একপযার্য়ে বাড়ি থেকে পালিয়ে গিয়েছিলেন, কে জানত এই কিশোরীই একদিন বিশ্বের সবচাইতে মতাবান ও প্রভাবশালী নারীতে পরিণত হবেন!অপরাহ উইনফ্রে নিজেই কি জানতেন সে কথা? টাইম ম্যাগাজিনে প্রকাশিত বিশ্বের একশ জন সর্বোচ্চ প্রভাবশালী মানুষের তালিকায় অপরাহ উইনফ্রে একমাত্র ব্যক্তি যিনি টানা আটবার নির্বাচিত হয়েছেন, যেখানে প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা ও হিলারি কিনটন নির্বাচিত হয়েছেন মাত্র পাঁচবার। আর আমেরিকার প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামাও অপরাহ উইনফ্রেকে আমেরিকার সম্ভাব্য সবচেয়ে প্রভাবশালী নারী বলে মনে করেন।

অন্যদিকে, সিএনএন এবং টাইম ডট কম অপরাহকে বিশ্বের সম্ভাব্য সর্বোচ্চ মতাবান নারী হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে।


এত মতা আর এত প্রভাব কিসের জোরে? কী আছে এই নারীর মাঝে? আছে তার নাম এবং সেই নামেই তৈরি একটি টক শো। বুঝতেই পারছেন, দি অপরাহ উইনফ্রে শো-র কথাই বলছি যা আমেরিকার টেলিভিশনের ইতিহাসে সবচেয়ে বেশি প্রচারিত শো হিসেবে গণ্য। খুব শিগগিরই এটি পূর্ণ করতে যাচ্ছে ২৫ বছর। অপরাহ উইনফ্রে মূলত এই শোটির প্রযোজক এবং উপস্থাপক হিসেবেই সর্বাধিক পরিচিত। ২৫ জুলাই ২০০৭ সংবাদ সংস্থা রয়টার্সে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে বলা হয়, দি অপরাহ উইনফ্রে শো-এর উপস্থাপিকা অপরাহ উইনফ্রে আমেরিকার সবচেয়ে দামি উপস্থাপক এবং আয় করেন বছরে প্রায় ২৬০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার। তিনিই বিশ্বের প্রথম কৃষ্ণাঙ্গ বিলিওনিয়ার। মাত্র ৩২ বছর বয়সেই তিনি মিলিওনিয়ার হয়ে যান এবং ৪১ বছর বয়সে তার মোট সম্পদের পরিমান দাঁড়ায় ৩৪০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার।   অপরাহ উইনফ্রে ম্যাগাজিন বা ‘ও’  ম্যাগাজিন প্রকাশের পাশাপাশি তিনি একজন শক্তিমান সাহিত্য সমালোচক এবং একাডেমি অ্যাওয়ার্ডে মনোনীত অভিনেত্রী। এছাড়া অপরাহ রেডিও নামে তার একটি রেডিও চ্যানেলও রয়েছে। একটি গবেষণায় প্রকাশ পায় যে,  আমেরিকায় ২০০৮-এর প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার পে তিনি এক মিলিয়নেরও বেশি সমর্থন আদায় করেন। এমনকি বারাক ওবামা এবং হিলারি কিনটনের জনপ্রিয়তায় যে পার্থক্য, তার কারণ হিসেবে বারাক ওবামার পে অপরাহ উইনফ্রের প্রচারকেই দায়ী করা হয়।


 অপরাহর জন্ম ১৯৫৪ সালের ২৯ জানুয়ারি যুক্তরাষ্ট্রের দেিণর রাজ্য মিসিসিপির এক কুমারী মায়ের ঘরে। বাবা ছিলেন নরসুন্দর এবং মা গৃহপরিচারিকা। প্রথম থেকেই তার বাবা-মা আলাদা ছিল। ফলে তার শৈশব ছিল দারিদ্র্য ও যন্ত্রণাপূর্ণ। অন্যদিকে মাত্র নয় বছর বয়সেই নিকটাত্মীয়দের মাধ্যমে যৌন নির্যাতনের শিকার হন তিনি। আর মাত্র চৌদ্দ বছর বয়সে এক পুত্রসন্তানের জন্ম দেন, জন্মের কিছুদিন পর যে শিশুটি মারা যায়। স্কুলে পড়াকালে টেনিসি রাজ্যের স্থানীয় একটি রেডিও স্টেশনে চাকরি পেয়ে যান সান্ধ্যকালীন খবরের উপস্থাপিকা হিসেবে।   পরে তার উপস্থিত বক্তব্যে পারদর্শিতা দেখে দিবাকালীন টক শো এ এম শিকাগো উপস্থাপন করতে দেওয়া হয়। শিকাগোর এই তৃতীয় সারির টক শো যখন অপরাহর হাত ধরে প্রথম সারিতে জায়গা করে নেয়, তখনই অপরাহ নিজের প্রডাকশন কোম্পানি খুললেন এবং আন্তর্জাতিক প্রচারে চুক্তিবদ্ধ হলেন। শিকাগোর সেই এ এম শিকাগোই বর্তমানের দি অপরাহ উইনফ্রে শো।


কৃষ্ণাঙ্গ এই আমেরিকান আফ্রিকান নারীকে স্পিরিচুয়াল আইকন মনে করা হয়। একটিমাত্র সন্তান জন্মের পরপরই মরে যাওয়ায় তিনি আর কখনও মা হবার কথা ভাবেননি। তারপরও তার প্রায় দুই শতাধিক সন্তান। অবাক হচ্ছেন নিশ্চয়ই! অপরাহ উইনফ্রে লিডারশিপ একাডেমি ফর গার্লস-এর এতিম শিশুদের তিনি তার সন্তানের মতই দেখেন এবং তাদের দেখাশোনার দায়িত্বে তিনি প্রতিশ্র“তিবদ্ধ। বিশ্বের সুবিধাবঞ্চিত মানুষের ভাগ্যের পরিবর্তন ঘটাতে ১৯৯৮ সালে তিনি অপরাহ’স এনজেল নেটওয়ার্ক নামে একটি দাতব্য সংস্থা গড়ে তোলেন, যা প্রায় ৫১ মিলিয়ন মার্কিন ডলার জোগাড় করেছিল। অপরাহ ব্যক্তিগতভাবে ৩০৩ মিলিয়ন ডলার এই প্রতিষ্ঠানে দান করেন। ২০০৫ সালে বিজনেস উইক তাকে আমেরিকার শীর্ষ ৫০ জন সর্বোচ্চ দাতাদের একজন বলে তালিকাভুক্ত করে। আর এই তালিকায় তার অবস্থান ছিল ৩২তম।
প্রায় সব দিক থেকেই সফল এই নারীর রোমান্টিক কাহিনীগুলো মোটেও সুখকর নয়। কোনো সম্পর্কই দীর্ঘদিন স্থায়ী হয়নি।

কখনও প্রেমিকের মনোযোগ ছিল তো অপরাহর মনোযোগ ছিল না। আবার কখনও অপরাহর মনোযোগ ছিল তো তার প্রেমিকের মনোযোগ ছিল না। তাতে অপরাহর কোনো আপে নেই । বরং এই ঘটনাগুলোই পরবর্তীকালে তাকে সফল হতে সাহায্য করেছে বলে তিনি মনে করেন।


অপরাহর এই বর্ণাঢ্য কর্মজীবন নিয়ে অনেক আলোচনা যেমন হয়েছে, তেমনি সমালোচনাও কম নয়। এতো কিছুর পরেও আনন্দের বিষয় হলো, বিশ্বের ১৪০টি দেশে তার অনুষ্ঠান প্রচার করা হয়। আর আমেরিকাতেই তার অনুষ্ঠান দেখেছেন এমন লোকের সংখ্যা প্রায় ৩০ মিলিয়ন মানুষ যাদের অধিকাংশই নারী।   অপরাহ উইনফ্রে শো-এর এখন পযন্ত  প্রায় ৫০০০ পর্ব প্রচারিত হয়েছে। এটি ২০১১ সাল পর্যন্ত চুক্তিবদ্ধ, যার মাধ্যমে এই শোটি ২৫ বছর পূর্ণ করতে যাচ্ছে। জানা যাচ্ছে, এই চুক্তি তিনি আর নবায়ন করবেন না এবং অনুষ্ঠানটি বন্ধ করে দেবেন।   তবে পরে অপরাহ তার নিজস্ব টেলিভিশন নেটওয়ার্ক অর্থাৎ অপরাহ উইনফ্রে নেটওয়ার্ক-এ নতুন একটি টক শো প্রচারের পরিকল্পনা করছেন।


 বাংলাদেশ স্থানীয় সময় ১৩৪৭, জুলাই ২৮, ২০১০

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।