ঢাকা, বুধবার, ১২ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ নভেম্বর ২০২৪, ২৫ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

লাইফস্টাইল

তারেক মাসুদ: আত্মপরিচয়ের সন্ধানে

রবাব রসাঁ | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০০৫৮ ঘণ্টা, নভেম্বর ১২, ২০১০

আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন বাংলাদেশি চিত্রপরিচালক তারেক মাসুদ এখন ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন তার পরবর্তী চলচ্চিত্র নিয়ে। দেশের বৈচিত্র্যময় সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য নিয়ে তৈরি হতে যাওয়া চলচ্চিত্রটি আগামী বছরের মাঝামাঝি শেষ হবে বলে আশা করছেন তিনি।



চলচ্চিত্রটির শিরোনাম এখনো চূড়ান্ত হয়নি। তবে ওয়ার্কিং টাইটেল রাখা হয়েছে ‘বাংলার মুখ’। চলচ্চিত্রটিতে থাকছে জাতীয় ও স্থানীয় পর্যায়ের লোকজ এবং লোকায়ত উৎসব। থাকছে ঈদ, পূজা, পহেলা বৈশাখ, অমর একুশে, বিজয় দিবস, নৌকা বাইচ ইত্যাদি।

‘আমি এই উৎসবগুলোকে একটি নির্দিষ্ট দৃষ্টিভঙ্গি ও দূরত্ব নিয়ে দেখতে চাই,’ বলেন তারেক মাসুদ। খানিকটা ব্যাখ্যা করেন তিনি, ‘ছেলেবেলা থেকেই উৎসবগুলো দেখেছি খুব কাছ থেকে, উপভোগ করেছি এগুলোতে অংশ নিয়ে। এখন একটু বাইরে এসে, একটু দূরত্ব নিয়ে, একটু ওপর থেকে দেখতে চাই। ’

মাসুদের মতে, তার এই চলচ্চিত্র আগেকার চলচ্চিত্রগুলো থেকে একটু আলাদা হবে। ‘আলাদা হবে বিশেষ করে এর পরিবেশন শৈলীতে,’ বাংলানিউজকে বলেন তিনি। চলচ্চিত্রটিতে কোনও কথোপকথন থাকবে না, থাকবে শুধু সঙ্গীত। ‘গানের ভিতর দিয়েই বর্ণনা করা হবে ছবির ঘটনাগুলো। ’

তবে আর সব চলচ্চিত্রের মতো এই ছবিটির মাধ্যমেও মাসুদ খুঁজে যাবেন তার আত্ম-পরিচয়।

সম্প্রতি তিনি প্রিমিয়ার করেছেন তার নতুন ছবি ‘রানওয়ে’। দেখা যায়, ছবিটির প্রধান চরিত্র রুহুলের আত্ম-পরিচয় অনুসন্ধানের ক্রমাগত প্রচেষ্টা। মাসুদ বিশ্বাস করেন, তিনি যে সমাজে বসবাস করছেন তা একটি বহু-সাংস্কৃতিক সমাজ। এ সমাজের রয়েছে সমৃদ্ধ এবং বৈচিত্র্যময় সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য।

‘আমাদের রয়েছে নানান রকম পরিচয়। এই পরিচয় কখনো জাতিগত, কখনো অঞ্চলগত, কখনো সাংস্কৃতিক, কখনো বা ধর্মীয়। আমাদের এই বহুমাত্রিক পরিচয়ে আমরা গর্ববোধ করতে পারি,’ তিনি আরো বলেন, ‘এই পরিচয়গুলোর ভেতর একটা অন্ত্যমিল রয়েছে। আমরা দ্বন্দ্বের বিষয়গুলো এড়িয়ে সেই সামঞ্জস্যগুলোর প্রতিই বেশি গুরুত্ব দিতে পারি। ’

মাসুদের ‘মাটির ময়না’ বাংলাদেশের চলচ্চিত্রের ইতিহাসে একটি মাইলফলক হিসেবে মর্যাদা পেয়েছে। চলচ্চিত্রটি তাকে পরিচিতি দিয়েছে আন্তর্জাতিক পরিম-লে। ২০০২ সালে কান চলচ্চিত্র উৎসবে প্রথম প্রদর্শিত এই ছবিটি অর্জন করে উৎসবের ইন্টারন্যাশনাল ক্রিটিকস এওয়ার্ড।

বহু-সাংস্কৃতিক সমাজে সবার মাঝে ঐক্যের স্বপ্ন দেখেন মাসুদ। ‘প্রতিটি উৎসবের চিরায়ত মূল্যবোধগুলো আমরা উপভোগ করতে পারি। উপভোগ করতে পারি পারস্পরিক শ্রদ্ধাবোধ। ’

মাসুদ এবং তার সহ-চলচ্চিকার ও সহধর্মিণী ক্যাথেরিন মাসুদ মিলে তৈরি করেছেন এগারটি প্রামাণ্যচিত্র ও পূর্ণদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র। ১৯৮৯ সালে চিত্রশিল্পী এসএম সুলতানের ওপর প্রামাণ্যচিত্র ‘আদমসুরত’ দিয়ে শুরু হয় তাদের এই অভিযান। সর্বশেষ, ‘রানওয়ে’।

এ দেশের মুক্তিযুদ্ধের ওপর নির্মিত ‘মুক্তির গান’ ও ‘মুক্তির কথা’ প্রামাণ্যচিত্র দুটিও অর্জন করেছে ব্যাপক দর্শক-খ্যাতি। যুক্তরাজ্যে স্থায়ীভাবে বসবাসরত এক বাংলাদেশির জীবন-কাহিনী নিয়ে নির্মিত ‘অর্ন্তযাত্রা’ চলচ্চিত্রটিও প্রশংসিত হয়েছে। তবে এই কাজগুলোকে তিনি বিবেচনা করেন তার ‘স্বপ্নের’ ছবিটি তৈরির প্রস্তুতি হিসেবে।

‘আমার সব প্রচেষ্টা সেই ছবিটি তৈরির জন্য,’ নেচে ওঠে মাসুদের চোখ-মুখ। তাই আবারও বলেন, ‘যেসব ছবি এতদিন ধরে বানিয়ে চলছি তা সেই ছবিটি বানানোর প্রস্তুতি। ’ সেই স্বপ্নের ছবিটির নাম ‘কাগজের ফুল’। ১৯৪৭ সালের ভারত-ভাগের ইতিহাস এবং জন-জীবনে এর প্রভাব নিয়ে তৈরি করতে চান ছবিটি। গত বেশ কয়েক বছর ধরেই চলছে এর প্রস্তুতি।

ছেলেবেলায় মাদ্রাসায় পড়েছিলেন তারেক মাসুদ। তাই তার চলচ্চিত্রে পাওয়া যায় ইসলাম ধর্মের গুরুত্বপূর্ণ উপস্থিতি। এ বিষয়ে তিনি বলেন, ‘এই অঞ্চলে আমাদের রয়েছে ইসলামের দীর্ঘ ইতিহাস। এ দেশে আসা সুফি-দরবেশরা প্রচার করেছিলেন ধর্মের সহনশীল ও সর্বজনীন দিকগুলো। ইদানীংকালের উগ্র ধর্মীয় মতবাদ ঠেকাতে আমরা এই সহনশীলতা থেকে শিক্ষা নিতে পারি। ’

খ্যাতমান এই পরিচালক বিশ্বাস করেন, ধর্মীয় সন্ত্রাসবাদের বিস্তার রোধের জন্য সবার সঙ্গে মুক্ত আলোচনার প্রয়োজন। ‘কেউ সন্ত্রাসী বলে তাকে দূরে ঠেলে দেওয়ার পরিবর্তে আমরা তাদের আমাদের সমাজের অংশ হিসেবে গ্রহণ করতে পারি। এবং ধর্মের সর্বজনীন মূল্যবোধ সম্পর্কে তাদের অবহিত করতে পারি। ’

মাসুদের অভিমত, ‘সন্ত্রাস দিয়ে সন্ত্রাসবাদের ওপর বিজয় অর্জন সম্ভব নয়। ’

বাংলাদেশ স্থানীয় সময় ০০৩০, নভেম্বর ১২, ২০১০

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।