ঢাকা, মঙ্গলবার, ১১ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ২৪ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

লাইফস্টাইল

ভাঙা গড়া নাট্যোৎসব

পাভেল রহমান | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৪৫৮ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ১১, ২০১১

ঢাকার মঞ্চনাটকের সূতিকাগার মহিলা সমিতি মিলনায়তন। এটি ঘিরেই বেগবান হয়েছে দেশের নাট্যান্দোলন।

রাজধানীর নাটক সরনী (বেইলি রোড)-এর মহিলা সমিতির নীলিমা ইব্রাহীম মঞ্চে চলছে বাংলাদেশ গ্রুপ থিয়েটার ফেডারেশান এর পাঁচ দিনব্যাপী ‘ভাঙা গড়া’ শীর্ষক নাট্যোৎসব।

মহিলা সমিতির নাট্যমঞ্চটি বাংলাদেশের গৌরবোজ্জ্বল সাংস্কৃতিক আন্দোলনের স্বাক্ষর বহন করে চলেছে। বাংলাদেশের অনেক প্রতিষ্ঠিত নাট্যশিল্পীদের শুরুটা হয়েছিলো এই মঞ্চে প্রথম অভিনয়ের মধ্য দিয়ে। স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ে ১৯৭৫ সালে নাগরিক নাট্যসম্প্রদায় বাদল সরকার এর “বাকী ইতিহাস” নাটকটি মঞ্চায়নের মাধ্যমে মহিলা সমিতির মঞ্চেই প্রথম নিয়মিত দর্শনীর বিনিময়ে নাট্য প্রদর্শনীর যাত্রা শুরু করেছিল। বাংলাদেশের চল্লিশ বছরের নাট্যচর্চার একটা দীর্ঘসময় মহিলা সমিতি ছিলো প্রানকেন্দ্র। যুগের প্রয়োজনে ঐতিহ্যবাহী মঞ্চটিকে গড়ে তোলা হচ্ছে অত্যাধুনিক নাট্যমঞ্চে। তাই এই স্মৃতিময় নাট্যমঞ্চটিকে বিদায় এবং নতুনকে স্বাগত জানানোর এই সন্ধিক্ষনটিকে স্বরনীয় করে রাখতে বাংলাদেশ গ্রুপ থিয়েটার ফেডারেশান চ্যানেল আইয়ের সহযোগিতায় আয়োজন করছে এই নাট্যউৎসবের।

ভাঙা গড়া নাট্যোৎসবটি শুরু হয় গত ০৮ সেপ্টেম্বর। এটি চলবে ১২ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত। উৎসবে প্রতিদিন সন্ধ্যায় প্রদর্শিত হচ্ছে বাংলাদেশের বিভিন্ন নাট্যদলের ১০টি নাটকের কোলাজ। ঢাকা ও ঢাকা বাইরের বিভিন্ন নাট্যদল এতে অংশ নিচ্ছে।

উৎসবের তৃতীয় দিন ১০ সেপ্টেম্বর শনিবার মঞ্চস্থ হয়েছে নান্দনিক নাট্যসম্প্রদায়ের নাটক ‘নৃপতি’, সাত্তিক নাট্যসম্প্রদায়ের ‘পেঁজগী, শব্দাবলী বরিশালের ‘ফনা’, পদাতিক নাট্যসংসদের ‘জলবালিকা’, দৃষ্টিপাত নাট্যসম্প্রদায়ের ‘তিন পুরুষের মাথায়’, রঙ্গনা নাট্যগোষ্ঠীর ‘স্বপ্নভাঙ্গা মানুষ’ ও নাট্যধারার ‘রথের রসি’।

নাট্যোৎসবকে কেন্দ্র করে মহিলা সমিতি আবার নাট্যকর্মীদের আড্ডা আর গল্পে মুখরিত হয়ে উঠেছে। উৎসবে মূল মঞ্চের বাইরে চলছে বাবুল বিশ্বাস সংগৃহীত বাংলাদেশের জনপ্রিয় নাটকের পোস্টার প্রদর্শনী এবং নাট্যব্যাক্তিত্বদের ছবি।

‘ভাঙ্গা গড়া’ নাট্যোৎসব প্রসঙ্গে বাংলাদেশ গ্রুপ থিয়েটার ফেডারেশানের অনুষ্ঠান সম্পাদক চন্দন রেজা বলেন, মহিলা সমিতি মঞ্চটি ভেঙ্গে যাচ্ছে, তার জন্য সকল নাট্যকর্মীরাই স্মৃতিকাতর। তেমনি মঞ্চটি ভেঙ্গে নতুন মঞ্চ হবে, আধুনিক সুযোগ সুবিধা থাকবে, সেই স্বপ্নের হাতছানিতেও পুলকিত হচ্ছে নাট্যকর্মীরা। মহিলা সমিতির নতুন মঞ্চকে কেন্দ্র করে নতুন নতুন নাটকের পরীক্ষা নিরীক্ষা হবে, নাটক সরনী আবার সংস্কৃতিচর্চার প্রানকেন্দ্রে পরিনত হবে এমনটাই প্রত্যাশা আমাদের সকলের।

বাংলাদেশের স্বাধীনতা উত্তরকালের নবনাট্যচর্চার সূতিকাগার মহিলা সমিতির ঐতিহ্যবাহী মঞ্চটি সংস্কারের জন্য ভেঙ্গে সেখানে গড়ে তোলা হবে অত্যাধুনিক নাট্যমঞ্চ। বিদায়ী এই “ভাঙ্গা গড়া” নাট্যউৎসবে দেশের স্বনামধন্য নাট্যদলগুলো তাদের জনপ্রিয় নাটকের বিশ মিনিটের কোলাজ পরিবেশন করছে। ফলে এই প্রজন্মের নাট্যকর্মীরা নতুন করে দেখতে পাচ্ছে “নুরুলদিনের সারাজীবন”, “বার্থ ফ্যান্টাসি” কিংবা “মুনতাসির” এর মত নাটকের অংশবিশেষ। আবার স্মৃতিময় এই মঞ্চটিতে শেষবারের মত অভিনয় করতে দাঁড়িয়েছেন আসাদুজ্জামান নূর এবং আলী যাকের এর মত অভিনেতারা। আর সেই পথ ধরেই আমাদের আগামীর যাত্রা দীপ্তিমান হোক।

বাংলাদেশ সময় ১৪১৫, সেপ্টেম্বর ১১, ২০১১

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।