ঢাকা, মঙ্গলবার, ১১ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ২৪ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

লাইফস্টাইল

শেষ হলো ‘ভাঙা-গড়া’ নাট্যোৎসব

পাভেল রহমান | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৮৫৬ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ১৩, ২০১১

বাংলাদেশের নাট্যচর্চার সুতিকাগার রাজধানীর নাটক সরনীর ঐতিহ্যবাহী মহিলা সমিতি মিলনায়তন ভেঙে ফেলা হচ্ছে। এখানে গড়ে তোলা হবে আধুনিক বহুতল ভবন, এতে থাকবে আধুনিক সুযোগ-সুবিধা সম্পন্ন নাট্যমঞ্চ।

ভেঙে ফেলার আগে পুরোনো মঞ্চে বাংলাদেশ গ্রুপ থিয়েটার ফেডারেশন শেষবারের মত আয়োজন করে ‘ভাঙা গড়া শিরোনামে নাট্য উৎসবের।

গত ৮ সেপ্টেম্বর থেকে ১২ সেপ্টম্বর পর্যন্ত পাঁচ দিনব্যাপী এই নাট্যোৎসবে ঢাকা ও ঢাকার বাইরের সুপরিচিত ৫০টি নাট্যদল বিশ মিনিট করে তাদের নাট্য কোলাজ পরিবেশন করে।

মহিলা সমিতি মঞ্চ প্রসঙ্গে গ্রুপ থিয়েটার ফেডারেশানের সভাপতি লিয়াকত আলী লাকী বাংলানিউজকে বলেন, এটি ছিল বাংলাদেশের চার দশকের নাট্যচর্চার কেন্দ্রভূমি। শুধু নাট্যচর্চা নয়, বাংলাদেশের সাংস্কৃতিক আন্দোলনের অন্যতম সূতিকাগার ছিল এই মঞ্চটি। খুব তাড়াতাড়ি এখানে অত্যাধুনিক নাট্য মঞ্চ নির্মাণ করা হবে এবং মহিলা সমিতি আবার নাট্যকর্মীদের কর্মময়তায় মুখরিত হবে।

ফেডারেশানের সেক্রেটারি জেনারেল ঝুনা চৌধুরী বলেন,  মহিলা সমিতির এই জীর্ণ-শীর্ণ মঞ্চটিই আমাদের দীর্ঘ  নাট্য আন্দোলনের সাক্ষী। এই মঞ্চটিকে কেন্দ্র করে আমাদের নাট্যচর্চা এতদূর এসেছে। সমযের প্রয়োজনেই এই মঞ্চটিকে ভেঙ্গে নতুন করে সাজাতে হচ্ছে। তাই একদিকে যেমন ভাঙার কষ্ট, অপরদিকে গড়ার আনন্দ। তাই ফেডারেশান বিভিন্ন নাট্যদল  নিয়ে এই ভাঙা গড়া নাট্যোৎসবের আয়োজন করেছে।

নাট্য ব্যক্তিত্ব নাসির উদ্দিন ইউসুফ বাচ্চু বলেন, ঢাকা থিয়েটার এই মঞ্চে নাটক শুরু করে ১৯৭৩ সাল থেকে। ঢাকা থিয়েটারের অনেক জনপ্রিয় নাটকের প্রথম মঞ্চায়ন হয় মহিলা সমিতির মঞ্চে। ঢাকা থিয়েটার আজকের অবস্থানে আসার পিছনে মহিলা সমিতির মঞ্চটির ভূমিকা বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য।

ভাঙা গড়া নাট্যোৎসবকে কেন্দ্র করে মহিলা সমিতি মঞ্চ গত পাঁচদিন নাট্যকর্মী আর দর্শকদের মিলনমেলায় পরিণত হয়েছিল। মিলনায়তনের সামনের লবি, চায়ের দোকান, ফুটপাত সর্বত্রই ছিল নার্টকর্মীদের পদচারণায় মুখর। উৎসব উপলক্ষে মিলনায়তনটিকে সাজানো হয়েছিল নাট্যব্যক্তিত্ব ও জনপ্রিয় সব নাটকের ছবি দিয়ে।   ঐতিহ্যময় এই মঞ্চটিতে শেষ কোন নাট্যাৎসব, শেষবারের মতো মঞ্চটিতে দাঁড়িয়ে অভিনয় তাই নাট্যদলগুলোর মধ্যেও ছিল ব্যাপক উৎসাহ আর উদ্দীপনা।
 
নাগরিক নাট্য সম্প্রদায় ১৯৭২ সালে এই মঞ্চেই বাদল সরকারের বাকী ইতিহাস নাটকটি মঞ্চায়নের মাধ্যমে নিয়মিত দর্শনীর বিনিময়ে নাট্য প্রদর্শনী শুরু করেছিল। মহিলা সমিতির এই ছোট্ট মঞ্চটিতে মঞ্চস্থ হয়েছে নুরুল দীনের সারা জীবন, পায়ের আওয়াজ পাওয়া যায়, মুনতাসির ফ্যান্টাসি, কোকিলারা, বার্থ ফ্যান্টাসী, আমিনা সুন্দরী, কোর্ট মার্শালের মতো অসংখ্য জনপ্রিয় নাটক। উৎসব উপলক্ষে সেই ঐতিহ্যময় নাটকগুলোর অংশবিশেষ মঞ্চস্থ হয়। স্মৃতিময় এই মঞ্চটিকে শেষ বিদায় জানাতে  মঞ্চে অভিনয় করেন  আলী যাকের, আসাদুজ্জামান নূর, ফেরদৌসি মজুমদার, ম হামিদ, লিয়াকত আলী লাকী, শিমুল ইউসুফ, পিযুষ বন্দোপাধ্যায়ের মতো অভিনেতারা।

বাংলাদেশ সময় ১৮৪৫, সেপ্টেম্বর ১৩, ২০১১

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।