জীবনের ব্যস্ত চলার পথে মাঝে মাঝে থমকে দাঁড়াই, অবাক হয়ে চারপাশ দেখি আর মনে মনে চিন্তা করি, এই কি আমার সেই ছোট্ট বেলার ঢাকা? না, আজকের ঢাকাকে সেই সময়ের ঢাকার সাথে আর কোন ভাবেই মেলাতে পারিনা।
নিজের জন্মভূমিকে কে না ভালবাসে, তাই ছেলেবেলা থেকেই ভালবাসা জন্মেছে এই শহরটির প্রতি।
উত্তরা থেকে যাত্রাবাড়ি, ধানমন্ডি থেকে রামপুরা-কতই না স্মৃতি বিজরিত আমার এই শহর। এখনকার রাস্তাঘাটের যানজট আর বিশাল বিশাল অট্টালিকা দেখে বোঝার উপায় নেই যে একসময় সব কিছু ছিল অনেক সুন্দর-পরিপাটি, রাজপথ দিয়ে নির্বিঘ্নে রিক্সা করে চলাচল করা যেত।
কোটি কোটি মানুষের ভিড়ে হয়তো ঢাকা হারিয়েছে তার তিলোত্তমা উপাধি, কিন্তু আমার মতো ঢাকাবাসীর হৃদয়েও এর প্রতি ভালবাসার কোন কমতি নেই তা আমি নির্দ্বিধায় বলতে পারি। উচ্চ শিক্ষার জন্য বহুদিন ঢাকা থেকে দূরে থেকেছি, কেটেছে আমার বিরহের দিনগুলো।
অত:পর আবার ফিরে এসেছি এই নগরের বুকে। এর মাঝে পাল্টে গেছে, বদলে গেছে সবকিছু, তারপরও পরম ভালবাসায় আপন করে নিয়েছি। এ যে আমার জন্মভূমি, হয়তো আজ আর সেই সবুজ মাঠ নেই, কিন্তু শিশির ভেজা ঘাসের উপর হাঁটার অনুভূতি এখনও আমি অনুভব করি। নতুন প্রজন্মের কাছে ঢাকার সেই রূপকথার গল্প বলি।
আজ আমার সেই প্রিয় ঢাকাকে ভাগ করে ফেলা হচ্ছে। জানিনা আমি কোন ঢাকার বাসিন্দা হবো। আমার নতুন প্রজন্ম হয়তো আমাকে প্রশ্ন করবে, তুমি কোন ঢাকায় বড় হয়েছো? আমি নির্বাক হয়ে থাকবো। কিন্তু ঢাকা তো আমাদের হৃদয়, মানুষের হৃদয়কে কি কখনো ভাগ করা যায়?
চাইলেই কি শত বছরের ইতিহাস, ভাষা আন্দোলন, স্বাধীনতা সংগ্রাম, স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলনের সাক্ষী আমাদের এই প্রিয় শহরকে ভাগ করা যায়। আমার দৃঢ় বিশ্বাস যে যেই মতেরই হোক না কেন, আমাদের শত বছরের স্মৃতি বিজরিত এই তিলোত্তমা নগরীকে যখন ভাগ করা হবে আমার আপনার মতো সবারই চোখে বেদনার অশ্রু সঞ্চিত হবে, সবার বুকের ভেতর থেকে চাপা কান্নার আওয়াজ ভেসে আসবে, আর সবার মনেই একটি আকুতি থাকবে- “আমার প্রিয় ঢাকাকে ভাগ করো না। ”