অনেক ত্যাগ তিতিক্ষা, কত পটভূমির পর ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর দীর্ঘ নয় মাস রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের মাধ্যমে অর্জিত হয় আমাদের স্বাধীনতা। বিশ্বমানচিত্রে জন্ম নেয় নতুন একটি দেশ বাংলাদেশ।
আনন্দের সঙ্গে পোশাক পরা সক্রিয় একটা ব্যাপার। আর দিবসভিত্তিক পোশাকের ব্যাপারটা আমাদের সংস্কৃতিতে আনেন এ দেশের ফ্যাশন ডিজাইনাররা। বুদ্ধিজীবীরাও মনে করেন, দিবসভিত্তিক পোশাকে ধারাটা চালু থাকা জরুরি। এতে করে ফ্যাশনের সঙ্গে মানুষের সরাসরি সংযোগ ঘটার পাশাপাশি স্বাধীনতা লাল-সবুজ বসন অঙ্গে জড়ানো হবে।
এমনি এক উপলক্ষ দোরগোড়ায় হাজির। যার সঙ্গে জড়িয়ে আছে আমাদের জাতীয় জীবনেরই এক বড় প্রাপ্তির ইতিহাস, আমাদের বিজয় দিবস। এমন একটি সময়কে জীবনযাপনে, পোশাকে কোনওভাবেই উপেক্ষা করার উপায় নেই। পোশাকে স্বাধীনতাকে ফুটিয়ে তোলার জন্য দেশিয় ফ্যাশন হাউস অঞ্জনসের কর্ণধার শাহীন আহমেদ বলেন, আমাদের জাতীয় জীবনে কিছু দিন আছে যেগুলো খুবই অর্থবহ এবং সবাই চায় সেই দিনগুলো নানাভাবে উদযাপন করতে। আর এই উদযাপনের একটা বড় অংশজুড়ে থাকে পোশাক।
বিজয় দিবস আনন্দের দিন তাই আমরা পোশাকের মধ্যে সেই আনন্দভাবটা তুলে ধরতে পারি। লাল-সবুজ যেহেতু আমাদের জাতীয় পতাকার রঙ তাই পোশাকে এই দুটি রঙের সংমিশ্রণ ঘটিয়ে আনন্দের রঙ সৃষ্টি করা হয়েছে। এভাবেই স্বাধীনতার রঙে সেজেছে এ দেশের ফ্যাশন হাউসগুলো।
স্বাধীনতা দিবস বা বিজয় দিবসের মতো জাতীয় পর্যায়ের দিনগুলোতে গণমানুষের অংশগ্রহণ দিন দিন বাড়ছেই। বিজয়ের পোশাক নিয়ে কথা বলতে গেলে দেশিয় ফ্যাশন হাউস কে-ক্র্যাফটের স্বত্বাধিকারী ও ডিজাইনার খালিদ মাহমুদ খান বলেন, `দিবসের তাৎপর্য অনুযায়ী নিজেকে উপস্থাপনে মনোযোগী বাঙালির সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে। আমরাও চেষ্টা করে যাচ্ছি পোশাকের মানোন্নয়নের জন্য। এবারও রঙ হিসেবে ব্যবহার করা হয়েছে আমাদের দেশের সবুজ প্রকৃতির রঙ আর স্বাধীনতার লাল সূর্যের রঙ। এই পোশাক যেমন আমদের স্বাধীনতার চেতনা তেমনি নতুন প্রজন্মকে স্বাধীনতা সম্পর্কে আগ্রহী করে তোলে। অর্থাৎ নতুন প্রজন্মের কাছে স্বাধীনতার বার্তা বহন করে। ` বিজয়ের মাসে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা অঙ্গে ধারণ করার পাশাপাশি মুক্তিযুদ্ধের সঠিক ইতিহাস সংরক্ষণ করতে হবে।
পোশাকে স্বাধীনতার বহিঃপ্রকাশ নিয়ে কথা বলতে গেলে ফ্যাশন হাউস রঙের কর্ণধার বিপ্লব সাহা বলেন, ডিসেম্বর আমাদের বিজয়ের মাস। এ মাসেই আমরা বিশ্বমানচিত্রে জন্মলাভ করি, তাই এ মাস তথা ১৬ ডিসেম্বর আমাদের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। বিজয়ের চেতনা বহনের জন্য পোশাক উপযুক্ত মাধ্যম। আর পোশাকে রঙের ব্যাপারটা অবধারিতভাবেই চলে আসে। কেননা রঙের মাধ্যমেই আমরা আনন্দ-বেদনার বহিঃপ্রকাশ ঘটাতে পারি। এক্ষেত্রে আমরা এবার বিজয়ের পোশাকে আমাদের পতাকার রঙ লাল-সবুজের ব্যবহার করেছি। আর সুতার কাজ দিয়ে আমাদের মহানমুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস তুলে ধরা হয়েছে। এভাবেই আমাদের স্বাধীনতার ইতিহাস এদেশের স্বাধীনতার মানুষের বীরত্বের ইতিহাস পৌঁছে যাবে এক প্রজন্ম থেকে অন্য প্রজন্মে এটাই আমাদের চাওয়া।
ফ্যাশন হাউসগুলোতে বিজয় দিবস আয়োজন
পোশাকের মাধ্যমেও যে স্বাধীনতার চেতনা, স্বাধীনতার স্মারক বহন করা যায় এ ব্যাপারে জনমনে সচেতনতা সৃষ্টি করেন এদেশের ফ্যাশন ডিজাইনাররা। তাই বিজয় দিবসকে ঘিরে যার যার সাধ্যমতো বিজয়ের সাজে সেজেছে ফ্যাশন হাউসগুলো। কালেকশনে কমতি নেই। ছেলে ও মেয়েদের টি-শার্ট, ফতুয়া, শাল, ব্যান্ডেনা, পাঞ্জাবি, শার্ট, মেয়েদের সালোয়ার-কামিজ, শাড়ি, টপস কোথায় নেই বিজয়ের প্রণোদনা। বেইলী রোড হয়ে শাহবাগের আজিজ সুপার মার্কেট, তারপর বসুন্ধরা সিটি এরপর বনানী এগারো নম্বর রোড মাঝখানে ধানমন্ডি সোহবাহানবাগ ঘুরে উত্তরা, মিরপুর সবখানে সব ফ্যাশন হাউসে বিজয়ের রঙ লেগেছে।
বরাবরের মতো এবারও বিজয়ের রঙ হিসেবে ব্যবহার করা হয়েছে লাল-সবুজ রঙকে। বিজয়ের রঙ নিয়ে কথা বলতে গেলে দেশীয় ফ্যাশন বাংলার মেলার কর্ণধার এমদাদ হক বলেন, প্রতিটি জাতির জীবনে এমন কিছুদিন আছে যেগুলো খুবই গুরুত্বপূর্ণ আর এই বিশেষ দিনগুলো জাতির জীবনে আসে তার মতো করেই। আমাদের জন্য তেমনই গুরুত্বপূর্ণ একটি দিন হল বিজয় দিবস আর অবধারিতভাবেই বিজয়ের রঙ লাল-সবুজ। ফ্যাশন হাউসগুলো ঘুরে দেখা গেছে টি-শার্টে স্ক্রিন প্রিন্টের মাধ্যমে আর ফতুয়া, শাড়ি, কামিজে অ্যাপ্লিকে, অ্যামব্রয়ডারি, ব্লক হাতের কাজের মাধ্যমে বিজয় আর মুক্তিযুদ্ধের মহাত্দ্য তুলে ধরা হয়েছে।
সেই কারণেই মুক্তিযুদ্ধের মোটিফ সেই স্মৃতিসৌধ আর মুক্তিসেনা। পোশাকগুলোতে কোথাও হয়তোবা বন্দুক হাতে যোদ্ধার প্রত্যয়ী দৃঢ় মূর্তি। (আবার কোথাও মুক্তিবাহিনীর বিজয় উল্লাস কিংবা বিজয় মিছিল) বিজয়ের কবিতার দু`এক ছত্র দিয়ে একটি ইলাস্ট্রেশন। স্বাধীনতার কোনও থিম উপেক্ষিত হয়নি কোথাও। এভাবেই পোশাকের মাধ্যমে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা, আমাদের সাধারণ মানুষের বীরত্বগাথার বার্তা পৌঁছানো হয়েছে।
প্রতিবছর ১৬ ডিসেম্বর আসে বিজয় দিবসের মহান তাৎপর্য নিয়ে। জাতি অশ্রুসজল নয়নে নতমুখ হয়ে অর্ঘ্য নিবেদন করে সেই সঙ্গে শহীদদের কথা স্মরণ করে স্মৃতিচারণ ও অন্যান্য অনুষ্ঠানের মাধ্যমে এ দিনটি উদযাপন করা হয়।