পরিচয়টা ছোট বেলা থেকেই, জানিনা কবে থেকে ওর প্রতি মুগ্ধ হয়েছি। শুধু মনে আছে যখনই ওকে দেখেছি ওর কথা শুনেছি মনের মধ্যে ভালবাসা নামের সুপ্ত মুকূল পরিস্ফুটিত হয়েছে।
ভালবাসা নামের সেই আকঙ্খিত শব্দটির মানে যে এতো মধুর তা আগে কখনো বুঝিনি। এক সময় অনুভব করলাম মনের অজান্তেই আমার জীবনটা আমি তন্বীর সাথে জড়িয়ে ফেলেছি। আমার লক্ষ্য, আমার চাওয়া-পাওয়া, আমার স্বপ্ন, আমার ভবিষ্যত সব কিছুই তন্বী নামের একটি বিন্দুতে মিলিত হয়েছে। তন্বীর সাথে আমার যে খুব একটা দেখা হতো বা কথা হতো তা নয়, তারপরও যতটুকু সময় ও আমার পাশে থাকতো আমি স্বপ্নের ভুবনে ঘুরে বেড়াতাম। আমার প্রতি ওর মনোভাব কি তা কখনো বুঝতে পারতাম না। ছোটবেলা থেকেই লাজুক স্বভাবের হওয়ার কারণে ওকে কিছুই বলতে পারতাম না। যতবারই বলতে গিয়েছি প্রসঙ্গ পাল্টে ফেলেছি।
ও যখন ক্লাস নাইনে তখন আমার কাছ থেকে পুরোনো পাঠ্যবই গুলো নিয়েছিল। আমার একটা স্বভাব ছিল মনের সব কথা বইয়ের মধ্যে লেখার, কিন্তু ও যখন আমার কাছ থেকে বইগুলো চাইলো আমার মনে নানা আশংকা দানা বাধতে লাগলো। পাছে ও আমাকে খারাপ ভাবে বা যদি কোন সমস্যা হয়, আমি খুঁজে খুঁজে ওকে নিয়ে লেখা সব কথা মুছে দিলাম। ও আমার বইগুলো নিয়ে চলে গেল। আরো একবার আমি মনের কথা বলার সুযোগ নষ্ট করলাম। তারপর অনেকদিন কেটে গেল ওর সাথে দেখা হয় না।
আজ থেকে প্রায় সাত বছর আগের কথা, এইচ.এস.সি পরীক্ষা শেষ করে মেডিক্যাল ভর্তি কোচিং করছি। টিউশুনির টাকা দিয়ে কিছুদিন আগেই একটি সাদাকালো মোবাইল কিনেছি। ব্যস্ততা বেড়ে গেছে, কিন্তু তন্বী আছে আমার শয়নে-স্বপনে। তারপর হঠাৎ একদিন দুপুরে অচেনা একটা নম্বর থেকে ফোন আসলো। হ্যালো বলার সাথে সাথেই অপর প্রান্ত থেকে যে কন্ঠস্বরটি শুনলাম আমার আর বুঝতে বাকি রইলো না যে এ আর কেউ নয়, আমার বহু আকাঙ্খিত সেই কন্ঠস্বর, এ যে আমার তন্বী।
সাথে সাথে আমার হৃদস্পন্দন বেড়ে গেল, সারা শরীর কাঁপতে লাগলো, শুধু অস্ফুট কন্ঠস্বরে বললাম, “তন্বী কেমন আছো”। অপর প্রান্ত থেকে ও বললো, “দিদার ভাইয়া তোমাকে একটা কথা বলবো, তুমি কি তোমার বইয়ের মধ্যে আমাকে নিয়ে কিছু লিখেছিলে?” ভাগ্যের লিখন কি আর বদলানো যায়। তন্বীকে নিয়ে লেখা সবকিছু মুছে দিলাম, তারপরও আমার ভালবাসার কথা থেকে গেল! আমার আর বুঝতে বাকি রইলো না, কিন্তু আমি কিছুই বলতে পারলাম না, মোবাইলটা হাত থেকে পরে গেল। তারাতারি তুলে দেখি ও ফোন কেটে দিয়েছে, তবুও ফোন দিলাম। ফোনের দোকানের লোকটা বললো, আপা তো চলে গেছে। আমার আর কিছুই ভাল লাগছিল না।
ছটফট করছিলাম। রাতে কিছু খেতে পারিনি, সারারাত জেগে ছিলাম ভোর হওয়ার আশায়। সকালে উঠেই বারান্দার টব থেকে একটা আধফোটা গোলাপ নিয়ে ছুটলাম ওর স্কুলের উদ্দেশ্যে। সোজা ওর স্কুলের গেটের সামনে গিয়ে দাড়িয়ে রইলাম প্রায় দুই ঘন্টার মতো। স্কুল ছুটি হলো, কিন্তু আমার অস্থির চোখ আর তন্বীকে খুঁজে পাচ্ছেনা। আমি উদ্বগ্রীব হয়ে খুঁজছি আমার তন্বীকে, অবশেষে ওকে দেখলাম। ওর কাছে গেলাম, ও আমাকে দেখে অবাক হলো আর খুব লজ্জা পাচ্ছিল। আমি কোন কথা না বলেই একটা রিক্সা নিয়ে ওকে উঠতে বললাম।
ও অবাক হয়ে জানতে চাইলো কোথায়। কোন উত্তর দিলাম না। ওকে নিয়ে বলধা গার্ডেনে ঢুকলাম। পুকুরের পাশে বসেই হাতে গোলাপটা নিয়ে বললাম, “তন্বী আমি তোমাকে শুধু তোমাকেই অনেক ভালবাসি”। এখনো আমার মনে আছে তারিখটা ৫ই আগস্ট। ও আমার গোলাপটা নিয়ে হেসে বললো, তুমি একটা পাগল। সেই হাসি আমার হৃদয় আজো স্পন্দিত করে। সেইদিন থেকে আমার জীবনটা অন্যরকম হয়ে গেল। আমাদের ভালবাসা কানায় কানায় পূর্ণ হয়ে উঠলো।
দুজন মিলে প্রতিশ্রুতি করলাম, সারাজীবন একসাথে থাকবো যা কিছুই ঘটুক। এরপর জীবনে অনেক সংকট এসেছে, কিন্তু সবসময় দুজন দুজনের পাশে ছিলাম। আমাদের ভালবাসার সাতটি বছর পেরিয়ে গেছে। আমাদের বন্ধন অটুট আছে, থাকবে ইনশাল্লাহ। কদিন পরেই এই সম্পর্ক পরিপূর্ণতা পাবে আমাদের বিয়ের মাধ্যমে। এখন শুধু এইটুকুই চাওয়া যেন সবসময় দুজন-দুজনকে মন খুলে বলতে পারি, “আমি তোমাকে অনেক ভালবাসি”।