ছোট্ট দু’হাতে একগুচ্ছ গাদাফুল নিয়ে বাবার পিঠে বসে প্রভাতফেরির লম্বা লাইনে ৬ বছরের অনন্যা সহজেই দৃষ্টি কেড়ে নেয়। কোথায় যাচ্ছ ? জিজ্ঞেস করতেই আধোবুলিতে বলে শহীদ মিনারে যাব।
মায়ের ভাষা রক্ষার্থে এ সংগ্রামে একযোগে লড়াই করেছিলেন এ দেশের সকল স্তরের অকুতোভয় ভাষাপ্রেমিরা। সালাম, রফিক, বরকত, শফিক, জব্বারসহ আরও অনেকের বুকের তাজা রক্তে রঞ্জিত হয়েছিল রাজপথ। এরকমই শোকগাথা এক উপাখ্যানের মধ্য দিয়েই প্রতিষ্ঠিত হয়েছে বাংলাভাষা।
আজ শুধু অনন্যা নয় এমন লাখো কোটি বাঙ্গালিকে হতে হবে ভাষা রক্ষার সৈনিক। জানতে হবে আমাদের গৌরবের ইতিহাস।
ঘরে ঘরে ভিনদেশি সিরিয়াল আর বাবা মায়েরা গর্ব করে বলেন, তাদের সন্তান বাংলায় কথা বলেনা, ইংরেজিতে কথা বলে। কিন্তু আমরা তো জানি, আমাদের জাতীয় জীবনের সবচেয়ে গুর“ত্বপূর্ণ অধ্যায় ভাষা আন্দোলন। মাতৃভাষার জন্য এত বড় সংগ্রাম ও আত্মত্যাগের উদাহরণ পৃথিবীর আর কোথাও নেই।
২১ শে ফেব্রুয়ারি শহীদ মিনারে ফুল দিয়েই আমাদের দায়িত্ব শেষ এটা ভেবে বসে থাকার সময় শেষ। যে ভাষার জন্য আমরা রক্ত দিলাম বলুন তো তাতে কয়টি বর্ণ আছে?
আসলে আমরা অনেকেই ভুলে গেছি। ছোট বেলায় আমরা আদর্শ লিপি পড়ে বড় হয়েছি...সকালে উঠিয়া আমি মনে মনে বলি সারাদিন আমি যেন ভালো হয়ে চলি।
আমাদের বাচ্চার জন্য কি আদর্শ লিপি কিনেছি?
আজ আর কোনো দেশ ভুখণ্ড দখল করে না, দখল করে বাজার, ভাষা, সংস্কৃতি। আর সে বিচারে আমরা আসলে কতটা স্বাধীন। এখনই যদি না ভাবি বড্ড দেরি হয়ে যাবে।
আমরা বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে এগিয়ে যেতে চাই। অন্য ভাষা জানতে বা কথা বলতে কোনো সমস্যা নেই। শুধু নিজের ভাষাকে সম্মান জানাতে হবে। এ ভাষায় কথা বললে কেউ ছোট হয়ে যায় না।
বরং মাতৃভাষায় সঠিকভাবে কথা না বলতে পারাটাই লজ্জার।