শেরপুর: মিষ্টি দেখলে কার না খেতে ইচ্ছা করে? আর যদি তা হয় শেরপুরের ঐতিহ্যবাহী ‘ছানার পায়েস’ তাহলে তো কথাই নেই। বাংলাদেশের বিভিন্ন জেলার প্রসিদ্ধ মিষ্টির মধ্যে শেরপুরের ছানার পায়েস অন্যতম।
দেশের বিখ্যাত মিষ্টিগুলোর মধ্যে রয়েছে মুক্তাগাছার মন্ডা, টাঙ্গাইলের পোড়াবাড়ির চমচম, কুমিল্লার রস মালাই, নাটোরের কাঁচা গোল্লা, নেত্রকোনার বালিশ মিষ্টি ইত্যাদি।
শেরপুরের ছানার পায়েসের রয়েছে প্রাচীন ঐতিহ্য। আজ থেকে প্রায় ১’শ বছর আগে জেলার ঘোষপট্টিতে প্রথম এ মিষ্টি তৈরি হয় বলে জানা যায়। তখন হাতে গোনা ২/১টি দোকানে এই মিষ্টি তৈরি হতো। তৎকালীন জমিদাররা এখান থেকে বিশেষ পদ্ধতিতে এই মিষ্টি কলকাতায় নিয়ে যেতেন।
কিন্তু বর্তমানে শুধু শেরপুর জেলা সদরেই ২০টিরও বেশি দোকানে এই মিষ্টি তৈরি হয়। প্রতিদিন গড়ে ২’শ কেজি ছানার পায়েস বিক্রি হয় এখানে।
শেরপুরের মিষ্টি ব্যবসার জীবন্ত কিংবদন্তী ও দুর্গাচরণ মিষ্টান্ন ভাণ্ডারের মালিক শ্রী কানাই লাল ঘোষ (৯৫) জানালেন ছানার পায়েস তৈরির পদ্ধতি।
তিনি বাংলানিউজকে বলেন, প্রথমে উচ্চ তাপমাত্রায় দুধ জ্বাল দিয়ে ক্ষীর তৈরি করা হয়। এরপর আলাদাভাবে দুধ থেকে ছানা কেটে তাতে সামান্য ময়দা মিশিয়ে ছোট ছোট গুটি তৈরি করা হয়। গুটিগুলো পরে চিনির শিরায় ভিজিয়ে আগে প্রস্তুত করে রাখা ওই ক্ষীরে ছেড়ে অল্প আচে কিছুক্ষণ জ্বাল দিলেই তৈরি হয়ে যায় সুস্বাদু ছানার পায়েস।
কানাই লাল জানান, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও তৎকালীন পাকিস্তানের গভর্নর মোনায়েম খাঁন শেরপুরে এলে তাদের ঐতিহ্যবাহী ছানার পায়েস দিয়ে আপ্যায়ন করা হয়েছিল।
শেরপুর শহরের দুর্গাচরণ মিষ্টান্ন ভাণ্ডার, প্রেমানন্দ গ্রান্ড সন্স, অমৃত গোপাল মিষ্টান্ন ভাণ্ডার, নন্দ গোপাল, বল্লভ ভাণ্ডার, মা ভবতাঁরা টি স্টল, চারু সুইটস, অনুরাধা টি স্টল ও দীনেশ ঘোষের দোকানে এই মিষ্টি পাওয়া যায়। শেরপুরের আকর্ষণীয় পর্যটন কেন্দ্র গজনী অবকাশ অথবা মধুটিলা ইকোপার্কে বেড়াতে এলে শহরের এসব দোকান থেকে যে কেউ এই সুস্বাদু মিষ্টির স্বাদ চেখে দেখতে পারেন।
চারু সুইটসের মালিক গোবিন্দ কুমার ঘোষ বলেন, বর্তমানে শহরের মিষ্টির দোকানগুলোতে প্রতি কেজি ছানার পায়েস ১৮০ টাকা থেকে ২’শ টাকায় বিক্রি করা হয়। বিয়ে, জন্মদিনসহ বিভিন্ন অনুষ্ঠানে এই মিষ্টি দিয়ে অতিথিদের আপ্যায়নের কোনো জুড়ি নেই। শুধু শেরপুরে নয়, সারা দেশেই রয়েছে এই মিষ্টির ব্যাপক চাহিদা।
বাংলাদেশ সময়: ১৩১৪ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ২৪, ২০১২