বিশ্বে যা কিছু মহান সৃষ্টি, চির কল্যাণকর
অর্ধেক তার করিয়াছে নারী, অর্ধেক তার নর।
নারী দিবস উপলক্ষে প্রতিটি বাঙালি নারীকে শ্রদ্ধা জানাই।
প্রতিদিনই নারী দিবস: বিবি রাসেল
বিবি রাসেলকে আলাদা করে পরিচয় করিয়ে দেওয়ার কিছু নেই। তিনি বিশ্ব ফ্যাশন জগতে নিজেই একটি প্রতিষ্ঠান। বিবি রাসেল আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন বাংলাদেশি ফ্যাশন মডেল এবং ডিজাইনার। তিনি আমাদের দেশীয় পণ্যকে দেশে এবং দেশের গণ্ডি ছাড়িয়ে বিশ্ব দরবারে সম্মানজনক স্থানে তুলে ধরেছেন। তিনি বিশ্বাস করেন চলার নামই জীবন, থেমে যাওয়া মানে মৃত্যু। আর তাই সম্প্রতি পায়ে আঘাত পেলে চিকিৎসক তাকে বিশ্রামের পরামর্শ দেন। কিন্তু তার এগিয়ে চলার শক্তি থামিয়ে রাখতে পারেনি এই সাময়িক অসুস্থতা।
বাংলাদেশের গ্রামের নারীদের নিয়ে কাজ করতে গর্ববোধ করেন বিবি রাসেল। বাংলানিউজকে বিবি রাসেল বলেন, যে নারী প্রতিদিন সংগ্রাম করে জীবিকার জন্য, যাদের হাতের ছোঁয়ায় রঙ্গিন হয়ে ওঠে আমাদের ফ্যাশন জগৎ, তাদের প্রতি, প্রতি মুহূর্তে সম্মান জানাই। আলাদা করে নারী দিবসে শুধু তাদের মনে করার বিষয় নয়, বিবি রাসেলের কাছে প্রতিদিনই নারী দিবস।
তিনি বলেন, বাংলাদেশের গ্রামের নারীদের তৈরি পোশাক যুক্তরাষ্ট্র, ইংল্যান্ডসহ বিভিন্ন দেশের সর্বোচ্চ পর্যায় থেকে শিক্ষার্থী পর্যন্ত সবার কাছেই দারুণ প্রিয়। আর এই পোশাক নিয়ে বিশ্ব দরবারে পরিচিত করতে পারার কৃতিত্বও তিনি সেই খেটে খাওয়া নারীদেরই দিতে চান।
দীর্ঘ ১৬ বছর বাংলার নরীদের তৈরি পণ্য নিয়ে কাজ করছেন তিনি। এতো সফলতার পরও বিবি মনে করেন এখনও অনেক পথ বাকি। তিনি সেই নারীদের মুখে হাসি দেখতে চান যারা হাড়ভাঙা খাটুনি করে আমাদের শহুরে মানুষদের উন্নত জীবন উপভোগের সুযোগ করে দিচ্ছে।
বিবি রাসেল আক্ষেপ করে বলেন, আমরা স্বাধীনতার ৪০ বছর পার করছি, কিন্তু আজও আমাদের দেশে নারীরা সমানাধিকার থেকে বঞ্চিত। তিনি বলেন, অন্যদের কথা বাদ দিয়ে যদি শুধু বাবা মায়ের কথা চিন্তা করি, তাদের কাছেও মেয়ে সন্তান বৈষম্যের শিকার হচ্ছে। এখনও মেয়েরা ভাইয়ের অর্ধেক সম্পত্তি পাচ্ছে। এটা সত্যিই কষ্টের বিষয়।
তিনি আইনের মাধ্যমে বাবা মায়ের সম্পত্তিতে মেয়েদের সমান অধিকার নিশ্চিত করার জন্য সংশ্লিষ্টদের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন।
নারী উদ্যোক্তা: গুলশান নাসরিন চৌধুরী
রেডিয়েন্ট ইনস্টিটিউট অব ডিজাইন নামের ফ্যাশন অ্যান্ড ইন্টেরিয়র ডিজাইনিং প্রশিক্ষণ প্রতিষ্ঠানের চেয়ারম্যান গুলশান নাসরিন চৌধুরী গত ২৩ ডিসেম্বর ২০১১ এফবিসিসিআই প্রদত্ত শ্রেষ্ঠ নারী উদ্যোক্তা পুরস্কারে ভূষিত হয়েছেন । অসম্ভব কর্মোদ্যমী, সদালাপী ও পরিশ্রমী এই নারী তার নিষ্ঠা, একাগ্রতা ও দূরদর্শিতার স্বীকৃতিস্বরূপ এই পুরস্কার লাভ করেন।
আমাদের তরুণ প্রজন্মকে বিশেষ করে নারীদের সৃজনশীল পেশায় আগ্রহী করে তোলার জন্য তিনি এককভাবে প্রতিষ্ঠা করেন রেডিয়েন্ট ইনস্টিটিউট অব ডিজাইন।
বাংলানিউজের মাধ্যমে গুলশান নাসরিন চৌধুরী সব মেয়ের উদ্দেশে বলেন, নিজের সম্মান ও নিজের অধিকার নিজেকেই আদায় করে নিতে হবে। আর সেই লক্ষ্য অর্জনই হবে একজন মেয়ের সফলতা। এজন্য চাই আত্মবিশ্বাস। তিনি বিশ্বাস করেন, শুধুমাত্র আত্মবিশ্বাসই একজন মেয়েকে অতি সাধারণ থেকে বিশেষ স্থানে নিয়ে যেতে পারে।
রুবি গজনবি: অনারারী চেয়ারম্যান, অরণ্য ক্র্যাফট
জীবনের দীর্ঘ সময় পাড়ি দিয়ে এসে যার অভিজ্ঞতার ঝুলি পূর্ণ। সে সাহসী নারী উদ্যোক্তা রুবি গজনবি। বাংলাদেশে প্রাকৃতিক রঙ উদ্ভাবন, প্রক্রিয়াজাত ও পণ্যে ব্যবহার উপযোগী করতে তিনি দীর্ঘ ৩০ বছর ধরে অক্লান্ত পরিশ্রম করে যাচ্ছেন। প্রকৃতি এবং জলবায়ুর ক্ষতিকর প্রভাব এড়াতে পোশাক শিল্পের মালিকদের শুধু নিজেদের লাভের কথা না ভেবে, তিনি প্রাকৃতিক রঙ ব্যবহারের তাগিদ দেন। তিনি বলেন, রাসায়নিক রঙ সাময়িক লাভ এনে দিলেও তা আমাদের মিঠা পানির নদীগুলোকে নষ্ট করে দিচ্ছে। আর সেই পানি নামমাত্র পরিশোধিত হয়ে চলে আসছে আমাদের খাবার টেবিলে। যা পরবর্তীতে আমাদের স্বাস্থ্যের জন্যও হুমকি হতে পারে।
তিনি তার ফ্যাশন হাউজ অরণ্য ক্র্যাফটের মাধ্যমে প্রাকৃতিক রঙে তৈরি পোশাক ক্রেতাদের কাছে পৌঁছে দিয়েছেন। বাংলাদেশের উত্পন্ন প্রাকৃতিক রঙ বিদেশের বাজারেও প্রতিষ্ঠিত করেছেন রুবি গজনবি।
নারীদের স্বাবলম্বী করে তোলার জন্য রুবি গজনবি শিক্ষার প্রতি জোর দেন। তিনি বাংলানিউজকে বলেন, বাংলাদেশের নারীরা মুলত পুরুষের ওপর নির্ভর থাকতেই পছন্দ করে। আমরা আমাদের অধিকার এবং দায়িত্ব সম্পর্কে আজও সেভাবে সচেতন হয়ে উঠতে পারিনি। আর তাই এতো বৈষম্য। প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা একজন নারীকে মানুষ হতে শেখাবে। সে নিজেও শক্তি, নারী চাইলে অনেক দায়িত্ব পুরুষের মতোই পালন করতে পারে। আর শিক্ষাই নারীদের মধ্যে এই সচেতনতাবোধ এবং আত্মমর্যাদা তৈরি করতে পারে।
রন্ধন শিল্পী: সিদ্দিকা কবীর
যদিও তিনি চলে গেছেন না ফেরার দেশে। তবে তিনি আছেন, থাকবেন আমাদের স্মৃতিতে, সৃষ্টিতে। তার স্মৃতির প্রতি সম্মান জানিয়ে আমরা তাকে স্মরণ করছি। রান্না-বান্নার বিষয়টি রসুই ঘরের চার দেয়ালের বাইরে এনে শিল্পের মর্যাদা দিতে দেশে যে ক’জন মানুষের অনন্য অবদান রয়েছে, গুণী রন্ধনশিল্পী ও বিশিষ্ট পুষ্টিবিদ সিদ্দিকা কবীর তাদের অন্যতম। টেলিভিশনে রান্না বিষয়ক অনুষ্ঠান করার মাধ্যমে তিনি নিজে যেমন জনপ্রিয় ছিলেন, তেমনি আমাদের দেশে জনপ্রিয় করেছেন রন্ধন শিল্পকে।