আমরা এখন দিবস কেন্দ্রীক বাঙালি হয়ে গেছি। এটা শুনতে হয়তো আমাদের কারো কারো খারাপ লাগতে পারে।
এই বৈশাখী উৎসব দেশের সীমানা ছাড়িয়ে বিদেশে অব¯’ানরত বাঙালিরা এখন বেশ ধুমধাম করে উদযাপন করে থাকেন। অনেকরকম আশঙ্কার মধ্যেও পহেলা বৈশাখ নিয়ে সবারই অবস্থান ভেদে পৃথক পৃথক ভবনা থাকে।
অনেকেই হয়ত ভাবেন দিনটাতে মেঘমুক্ত শুস্ক আবহাওয়া থাকবে আবার কেউ কেউ ভয়ে থাকেন কালবৈশাখী ঝড় আঘাত হানবে কিনা? ব্যবসায়ীদের ভাবনাটাও কিš‘ এই বৈশাখ কেন্দ্রিক হয়ে থাকে। কারণ তারা নতুন বাংলা বছরে হালখাতা করে তাদের বকেয়া আদায় করেন। আবার কেউ কেউ নতুন বছর থেকে নতুন ব্যবসা শুরু করেন। অবস্থান ভেদে সবার ভাবনাগুলো ভিন্ন ভিন্ন হয়।
আর শিশু-কিশোরদের ভাবনার বিষয়ে বলা যায়, ঈদের পরেই সবচেয়ে আকর্ষণীয় উৎসব হল বৈশাখী মেলা। এই মেলা থেকে শিশুরা তাদের শখের খেলনাসহ নানা রকম জিনিস সংগ্রহ করে।
যার ভাবনা যে রকমই হোক আমাদের সবার লক্ষ্ একটাই তাহলো বাঙালির সার্বজনীন উৎসব পহেলা বৈশাখকে আনন্দের সঙ্গে উদযাপন করার।
বাঙালির প্রায় ৮০০ বছরের পুরোনো সংস্কৃতি পহেলা বৈশাখ উৎসব। রাজস্ব অর্থাৎ খাজনা আদায়ের জন্য চালু হয়েছিল এ সংস্কৃতি।
পহেলা বৈশাখই আমাদের দেশের একমাত্র বড় উৎসব যে উৎসবে আমরা সবাই ধর্ম-বর্ণ, দল-মত নির্বিশেষে সব সম্প্রদায়ের মানুষ এক কাতারে শামিল হই।
পহেলা বৈশাখে এখন সরকারিভাবে রাজস্ব আদায় হয়না ঠিকই তবে দেশের বিভিন্ন স্থানে ব্যবসায়ীদের মধ্যে হাল খাতার রীতি এখনো চালু রয়েছে। এ দিনে পুরাতন বছরের হিসাবের খাতা বাদ দিয়ে নতুন বছরের খাতা খোলা হয়। আর এজন্য ব্যবসায়ীরা হালকা মিষ্টি খাবারের আয়োজনও করে থাকেন।
পহেলা বৈশাখ উপলক্ষে গ্রাম-বাংলার নানান জায়গায় বৈশাখী মেলার আয়োজন করা হয়। গ্রাম-বাংলার মেলার রীতি এখন শহরে এসেও যুক্ত হয়েছে। রেওয়াজ চালু হয়েছে মাটির পাত্রে পান্তা ইলিশ খাওয়ার। যদিও নিম্ম-মধ্যবিত্ত ও নিম্নবিত্তের মানুষরা এই রেওয়াজকে বাঙালিয়ানা মনে করে না। কারণ রেওয়াজ ছিল ১ বৈশাখের সকালে দই-চিড়া খাওয়ার। কিš‘ শহুরেদের মধ্যে পান্তা ইলিশের এই চল পাকাপাকিভাবেই যুক্ত হয়ে গেছে বৈশাখী উৎসবে।
ঢাকার জীবনেও বড় উৎসবে পরিণত হয়েছে পহেলা বৈশাখ। এদিন ঢাকার মানুষজন ইট-কাঠের বন্দীদশা থেকে বের হয়ে একটু আনন্দ করে পরিবারের সাবাই মিলে। কেউবা আবার বন্ধু-বান্ধবী নিয়ে ঘুরতে বের হয়। ঢাকার বৈশাখী ঐতিহ্যের সঙ্গে ছায়ানট ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা ইনস্টিটিউট প্রত্যক্ষভাবে জড়িত। রমনার বটমূলে ভোরের সূর্য ওঠার সঙ্গে সঙ্গে ছায়ানটের বৈশাখি গানের অনুষ্ঠান শুরু হয়। আর চারুকলা আয়োজন করে ‘মঙ্গল শোভাযাত্রা’। শোভাযাত্রায় বাঙালির সংস্কৃতিকে তুলে ধরা হয়। পহেলা বৈশাখকে ঘিরে রাজধানী ঢাকা হয়ে ওঠে উৎসবের নগরী। রমনা, টিএসসি চত্বরসহ রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে আয়োজন করা হয় মেলার।
রাজধানীতে পহেলা বৈশাখকে ঘিরে লাখো মানুষের ঢল নামে। শাহবাগ মোড় থেকে দোয়েল চত্বর পর্যন্ত মানুষের মিলনমেলা বসে। বোটানিক্যাল গার্ডেন, চিড়িয়াখানা,চন্দ্রিমা উদ্যান, ধানমন্ডির রবীন্দ্র সরোবর ও লেকসহ সর্বত্রই থাকে লোকে-লোকারণ্য। বড় ঢল নামে রমনা পার্ক, সোহরাওয়ার্দী উদ্যান ও টিএসসিকে ঘিরে।
নতুন বাংলাবছর ১৪১৯ শুরু হোক সবার প্রত্যাশা অনুযায়ী। আমাদের সবার অবস্থান থেকে আমরা সবাই ভালো থাকি, বিকাশ ঘটাই দেশীয় সংস্কৃতির এবং নতুন বাংলাবছর ১৪১৯ সবার জীবনে শান্তির সুবাতাস বয়ে যাক।