ফারজানা লক্ষ করলেন তার মেয়ে ১২ বছরের ঐন্দ্রিলা আজকাল আগের মতো উচ্ছ্বল নেই। সে প্রায়ই স্কুলে যেতে চায় না, বন্ধুদের সঙ্গে খেলায়ও মন নেই।
ফারজানা কয়েক দিন লক্ষ করে মেয়েকে কাছে ডেকে আদর করে জানতে চাইলেন,“কী হয়েছে, আমাকে খুলে বলো। কেউ কি তোমাকে কিছু বলেছে, মায়ের কাছে কিছু লুকাতে হয় না, আমাকে বলো, কয়েক দিন থেকে লক্ষ করছি তোমার সব কাজই কেমন যেন এলোমেলো”।
ঐন্দ্রিলা মাকে জরিয়ে ধরে কেঁদে ফেললো। ফারজানা ভয় পেয়ে গেলেন। তিনি ভেতেরে ভেতরে মেয়ের জন্য অস্থির হয়ে উঠেছেন। বললেন,“কী হয়েছে মা তোমার”?
ঐন্দ্রিলা কাঁদতে কাঁদতে মাকে জানালো,“স্কুলের দপ্তরি হানিফ স্কুলের একটি কক্ষে ডেকে খারাপ ব্যবহার (যৌন হয়রানি) করতে চেয়েছিলো। আমি চিৎকার করে দৌড়ে চলে এসেছি। হানিফ আঙ্কেল আমাকে নিষেধ করেছে এই কথা কাউকে জানাতে। মা আমি আর ওই স্কুলে যাবো না”।
তার মেয়েটির সঙ্গে কী ঘটেছে ফারজানার আর বিষয়টি বুঝতে বাকি রইল না। সে মেয়েকে সান্তনা দিয়ে বুকে টেনে নিল।
তাকে আশ্বস্ত করে বললেন,“তুমি ভয় পেয়ো না। আমি তোমার সাথে আছি মা। তোমার কোনো ক্ষতি হবে না”।
রাতে ঐন্দ্রিলার বাবা রফিক সাহেব বাসায় এলে ফারজানা সব খুলে বললেন। রফিক আর ফারজানা পরের দিন সকালে স্কুলে গিয়ে প্রধান শিক্ষিকার সঙ্গে কথা বলে, দপ্তরি হানিফকে পুলিশের কাছে সোপর্দ করে দিলেন।
দুঃখজনক হলেও সত্যি, আমাদের সমাজে কিছু হিংস্র হায়না রয়েছে যাদের থাবা থেকে সন্তান সমতুল্য শিশুও নিরাপদ নয়। আর তাই বিভিন্ন কারণে শিশু কিশোরদের মধ্যে কোনো জায়গা বা ব্যক্তির প্রতি ভয় তৈরি হতে পারে। এ বিষয়গুলো অহেতুক ভয় ভেবে এড়িয়ে না গিয়ে ধৈর্য ধরে তার মনের কথা শুনতে হবে। এসব ভয় শিশু-কিশোরদের সুষ্ঠু মানসিক স্বাস্থ্যবিকাশের পরিপন্থী।
এধরনের পরিস্থিতি থেকে শিশুকে রক্ষা করতে প্রথম থেকেই সন্তানের সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক গড়ে তুলতে হবে। যেন সে কোনো কিছু আপনার কাছে না লুকায়।
শিশু-কিশোরদের মধ্যে অতিরিক্ত ভয় দেখা দিলে মনোবিজ্ঞানীর পরামর্শ নিন।