বাবা,
কেমন আছো তুমি? বাইরে ঝড় হচ্ছে , ঝড়ের শব্দ শুনতে পাচ্ছ? ঝড়ের শব্দ শুনলেই আমার ভয় করে। ছোট্টবেলায় এমন ঝড় বৃষ্টির সময়ে তোমার বুকে মুখ লুকিয়ে গল্প শুনতাম, তখন একটুও ভয় করতো না।
তোমাকে লেখা প্রথম চিঠিটার কথা মনে আছে তোমার? মুখ ফুটে সে কথাগুলো কখনই বলতে পারতাম না তোমাকে। চিঠিটা পেয়ে প্রচণ্ড আবেগে আপ্লুত হয়ে তুমি জানতে চেয়েছিলে যা লিখেছি সবই সত্যি কি না? সেই চিঠিতে আমি তোমাকে প্রথমবারের মত জানিয়েছিলাম কত্ত ভালবাসি তোমায় । ফারুক বলেছিল আমাকে সেই চিঠি লিখতে। আমেরিকায় না কি “বাবা দিবসে” তারা অনেক গিফট কিনে বাবাদের জন্য । তাই আমার ও তোমার জন্য একটা গিফট কেনা উচিৎ । কখনও এভাবে তোমাকে wish করিনি বলে লজ্জা লাগছিল, তবু সেই একবারই বাবা দিবসে তোমার জন্য গিফট কিনেছিলাম । সেই গিফট-র সাথে পাঠিয়েছিলাম তোমাকে লেখা আমার প্রথম চিঠি। আমি জানি তুমি খুব খুশি হয়েছিলে । মা কে বলেছিলে সেই চিঠি ফ্রেমে বাঁধাবে ।
আজ তোমাকে লিখতে বসেছি দ্বিতীয় চিঠি-
জানো, তুমি যেদিন চলে গেলে , সেদিন ওরা আমার সাথে কি করেছে ? তুমি ঘুমিয়ে গেছো জেনে ওরা তোমাকে আমার কাছ থেকে নিয়ে গেল...সবাই মাটি দিচ্ছে , আমি দূর থেকে দেখছি, যতক্ষণ দেখতে পারি, ততক্ষণই তো...। আমি যখন তোমার কবরে মাটি দিতে চাইছি , ওরা বলে আমি মেয়ে, আমি নাকি মাটি দিতে পারব না। বলো বাবা, যে তুমি আমাকে ছাড়া এক মুহূর্ত কাটাতে পারতে না, সেই তুমি আমার ছোঁয়া ছাড়া কি করে কাটাবে? ওরা একবারও ভাবলো না আমার স্পর্শ ছাড়া তুমি সেখানে থাকবে কি করে? আমি মেয়ে বলে তোমার সাথে করে ঈদগাহ মাঠে যেতে পারিনি । না, ঈদগাহ মাঠে সেদিন তুমি ঈদ-এর নামাজ পড়নি , তোমার জানাজা হয়েছিল সেখানে। আমি মা- কে জড়িয়ে ধরে শুধু তোমাকেই দেখছিলাম ।
আচ্ছা বাবা, কেমন আছো তুমি বললে নাতো? আমি কেমন আছি, জানতে চাইছো? আমি একদম ভাল নেই বাবা, একদম ভাল নেই তোমাকে ছাড়া...