বাবা, আমার মনে পড়ে না কবে যে এই নামে আমি আমার বাবাকে ডেকেছিলাম। আমার মনে পড়ে না যে এই ডাকটির অনুভূতিটা কেমন।
খুব ঝাপসা কিছু স্মৃতি মাঝে মাঝে হানা দেয়। আর সেই অনুভূতিটা যে কতটা কষ্টের তা আমার মতো পিতৃহারা প্রতিটি সন্তানই অনুভব করতে পারে। বুকের মাঝে কেমন যেন একটা ব্যথা অনুভব হয়, চোখে জল চলে আসে। মনে হয় কেউ আমাকে আর কোনদিন ‘মা’ বলে ডাকবে না।
আমার বাবা আমাকে অসম্ভব ভালবাসতেন। মনে পড়ে একদিন আমার ভাইয়া মার্বেল খেলছিল। আমি ভাইয়ার কাছে মার্বেল চেয়ে পাইনি বলে কাঁদছিলাম। বাবার শরীরটা সেদিন ভাল ছিল না। কিš‘ আমার কান্নার শব্দ শুনে ভাইয়াকে ডেকে খুব বকা দিলেন আর বললেন, ‘কোনদিন আমার মায়ের গায়ে হাত তুলবে না’। আর
তাই ছোটবেলায় শত দুষ্টামি আর অন্যায় করলেও আমার মা আর ভাইয়ারা কোনদিন আমাকে মারেননি।
বাবা যখন মারা গেল তখন এতটাই ছোট ছিলাম যে বাবা হারানোর কষ্টটা কি তা বুঝতে পারিনি। কিš‘ এখন যখন আমার বিশ্ববিদ্যালয়ের কোন বন্ধু তার বাবার কথা বলে, যখন কোন বন্ধুর বাবা ফোন করে তার খোঁজ নেয় কিংবা বাবা দিবসে কোন বন্ধু যখন কার বাবার জন্য গিফট কেনে তখন আমার খুবই কষ্ট হয়। তবে যখন দেখি কোন সন্তান আর বাবা-মাকে অবহেলা করছে। শত কষ্ট সহ্য করে, জীবনের সব সুখ বিসর্জন দিয়ে একটু একটু করে যে বাবা-মা বড় করে তুলেছে। শিক্ষিত হয়ে, বড় অফিসার হয়ে সেই বাবা-মাকে যখন কেউ বৃদ্ধাশ্রমে রেখে আসে তখন ভাবি ভালই হয়েছে আমার বাবা নেই। আমি যদি এই যান্ত্রিক নগরের অকৃতজ্ঞ, নিকৃষ্ট সন্তানদের মতো এমন নিকৃষ্ট কাজ করতাম তাহলে আমার বাবা কতই না কষ্ট পেতেন।
বাবা-মা আমাদের জীবনের অনেক মূল্যবান সম্পদ। আমার মতে সর্বশ্রেষ্ঠ সম্পদ যা একবার হারিয়ে গেলে আর ফিরে পাওয়া সম্ভব না। আর যাদের বাবা-মা এই পৃথিবীতে রয়েছেন তাদেরকে আমি অনেক সৌভাগ্যবান মনে করি। তাই সেই সৌভাগ্যবান সন্তানদের উচিত এমন কিছু না করা যাতে বাবা-মা কষ্ট পান। ছোটবেলায় যতটা যতেœ বাবা-মা আমাদের লালন পালন করেছেন। আমাদের উচিত ঠিক ততটাই যতœশীল হওয়া তাদের প্রতি।
বাবা তুমি যেখানে আছো দোয়া করি অনেক ভালো থাকো।
বাবা তোমাকে অনেক মিস করি।